মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি কার্যকরের ঘোষণা দেয়ার পর থেকে দেশের সর্বস্তরে এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। দেশের রাজনীতিক, বিচারবিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, এমনকি গণমাধ্যমের ওপরও এ ভিসানীতি কার্যকর করার খবরে সাধারণ মানুষের মধ্যেও কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বা দেশটির ঢাকাস্থ দূতাবাসের পক্ষ থেকে এখনো জানানো হয়নি নির্দিষ্টভাবে ঠিক কারা আসছে এ ভিসানীতির আওতায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও এ নিয়ে নানা কথা চলছে। কেউ কেউ নিজের আইডিতে পোস্ট দিয়ে জানতে চাচ্ছেন— তিনি এ নীতির আওতায় আসছেন কি-না, আবার কেউ কেউ বলছেন, আমেরিকায় তাদের কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই, সে কারণে এ ভিসানীতি নিয়ে তাদের কোনো অসুবিধা নেই। রাজনৈতিক দলের নেতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের নেতারা এ ভিসানীতি নিয়ে সরব রয়েছেন। দলের নেতারাও এ বিষয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কথা বলছেন। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, এই ভিসানীতি শুধু সরকারি দলের জন্য কার্যকর তা কিন্তু নয়, এ নীতি বিরোধী দলের জন্যও কার্যকর হবে। ফলে এতে শুধু একটি দলের বিব্রত হওয়ার কিছু নেই। অন্যদিকে বিরোধী দলগুলো মনে করছে, এ ভিসানীতির ফলে কার লাভ কার ক্ষতি তা ভাবার আগে ভাবতে হবে— এটি একটি জাতির জন্য লজ্জাজনক। এটি কখনোই কাম্য হতে পারে না, সরকারের নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় দেশ এখন এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে। ক্ষমতাসীন দলের জোট শরিকদের এ ভিসানীতি নিয়ে কোনো চিন্তা নেই, তবে তারা এই ইস্যুতে বেশ সতর্ক। শরিকরা মনে করছে, এতে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে বিশ্লেষকদের মত ভিন্ন। তারা বলছেন, সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ তৈরি না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতির প্রয়োগ করছে। তাদের মতে, অবাধ নির্বাচন আয়োজনের সুযোগ এখনো রয়েছে। ভোট সুষ্ঠু করতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা হতে পারে এবং একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ভোটের পথ বের হয়ে আসতে পারে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন মনে করেন, ভিসানীতি কার্যকর করার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে কথাগুলো বলছে সেগুলো তো আর এক তরফা বলছে (সরকারের বিরুদ্ধে) না। বিরোধী দলের কথাও তো বলছে। তারা (বিরোধী দল) বুঝুক তাদের এখন কেমন লাগে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভিসানীতি করা এবং তা কার্যকর করার ঘোষণা আসা জাতি হিসেবে আমরা লজ্জিত। আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, সরকারের অবস্থা কোথায় গিয়ে ঠেকলে বাংলাদেশের ওপর ভিসানীতি কার্যকর করা হয়। তিনি বলেন, এটি কখনোই কাম্য হতে পারে না। প্রবীণ এই রাজনীতিক মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভিসানীতি কার্যকর করার সিদ্ধান্তে পুরো জাতি বিব্রত।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন মনে করেন, আমেরিকার ভিসানীতি নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে প্রবীণ এই রাজনীতিক বলেন, আমাদের নির্বাচনের জন্য নয়, আমেরিকা তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ভিসানীতি করেছে। এই ভিসানীতিতে আগামী নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ মে বাংলাদেশিদের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বলা হয়, গণতান্ত্রিক কার্যক্রম ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধাদানকারীদের ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ করা হবে। এদিকে গত ২২ সেপ্টেম্বর এর প্রয়োগ শুরু হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রের বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার ও বিরোধী দল, সাবেক এবং বর্তমান সরকারি কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যদের ওপর এটি কার্যকর করা হচ্ছে। এতে তাদের পরিবারের সদস্যরাও থাকতে পারেন।