পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর

দায়িত্ব বেশি জোগান কম

মো. নাঈমুল হক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩, ১২:৪১ এএম
দায়িত্ব বেশি জোগান কম
  •  ২৮ জনের দায়িত্বে ৩৭ হাজার প্রতিষ্ঠান
  • এই জনবলে ছয় শতাংশ পরিদর্শনেরও সক্ষমতা নেই 
  • ২০ বছরেরও বেশি সময় তদারকির বাইরে অনেক প্রতিষ্ঠান  

পর্যাপ্ত লোকবলের অভাব ও স্থান সংকুলান না হওয়ায় যথাযথ দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হচ্ছে না
—প্রফেসর অলিউল্লাহ আজমতগীর পরিচালক, ডিআইএ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ বন্ধের উদ্দেশ্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। প্রতি বছর সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তদারকি এবং  পর্যবেক্ষণে মেলে বিপুল দুর্নীতি ও আত্মসাতের তথ্য। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ অধিদপ্তরটির গত চার দশকেও উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন হয়নি। বর্তমানে এর অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা চারগুণেরও বেশি বেড়েছে। কিন্তু সাংগঠনিক কাঠামোয় কোনো পরিবর্তন আসেনি। বছরে ছয় শতাংশের বেশি পরিদর্শনের সক্ষমতা নেই দপ্তরটির। স্থান সংকুলানের কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসতে হয় গাদাগাদি করে। ফাইল রাখারও নেই পর্যাপ্ত জায়গা। নানা জটিলতায় মানোন্নয়নে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এ ব্যাপারে অধিদপ্তরের পরিচালক বলেছেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা নিরূপণের জন্য অন্তত প্রতি তিন বছরে একবার হলেও তদন্ত করা প্রয়োজন। কিন্তু পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে ও স্থান সংকুলানের কারণে যথাযথ দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। 

ডিআইএর তথ্যমতে, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, মাদ্রাসা ও কারিগরি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৭০০। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০২১-২২ সেশনে অডিট পরিচালনা করা হয় ২১০৩টিতে। এটি মোট সংখ্যার পাঁচ দশমিক সাত ছয় শতাংশ। 

প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছরই নির্দিষ্টসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি ও আত্মসাতের তথ্য প্রকাশ করে। সর্বশেষ প্রকাশিত হিসাবে ১৮৯১ প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও আত্মসাতের তথ্য মেলে। সেখান থেকে প্রাপ্ত ৩০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা ও  বেহাত ৬৩৩ একর জমি উদ্ধারের ব্যাপারে সুপারিশ করে প্রতিষ্ঠানটি। গত তিন বছরে পাঁচ হাজার ৬১৫ প্রতিষ্ঠানে ১২০ কোটি ৮৬ লাখ ২৩ হাজার টাকার বেশি আর্থিক অনিয়মের তথ্য পায়।

প্রতিষ্ঠানটির অর্গানোগ্রাম ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে একইরকম রয়েছে। তখন থেকেই মোট কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন ১৩০ জন। এর মধ্যে অডিট পরিচালনা করেন ২৮ জন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ অর্গানোগ্রাম নিয়ে কাজ চলছে। যদিও তখন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠনের সংখ্যা ছিল সাত হাজার ৫০০। বর্তমানে এর চার থেকে পাঁচগুণ সংখ্যা বেড়েছে। 

জানা যায়, প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাপ্তিসাপেক্ষে ও নির্দিষ্ট ইনডেক্স প্রক্রিয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের মাধ্যমে তদন্ত করে থাকে। অধিদপ্তরটি মূলত একাডেমিক ও আর্থিক বিষয়ে সরেজমিন এবং সফটওয়্যারের মাধ্যমে কাজ করে থাকে। 

ডিআইএ সূত্রে জানা যায়, ডিআইএর অর্গানোগ্রাম (সাংগঠনিক কাঠামো) বাড়ানোর ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি কর্মশালার আয়োজন করেছে। এ ব্যাপারে কদিন আগেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তাদের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে ডিআইএকে অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন করে দুই ভাগ করার কথা জানানো হয়। বিভাগ দুটি হলো একাডেমিক বিভাগ ও আর্থিক বিভাগ। কিন্তু নানা জটিলতায় এটি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। 

ডিআইএর কার্যক্রমের ব্যাপারে শিক্ষা পরিদর্শক ড. এনামুল হক বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তদারকি করার ক্ষেত্রে আমাদের জনবলের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ শাখার জনবল বাড়েনি।

অডিট করার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রতিদিনই আমরা চার-পাঁচটি অভিযোগ পেয়ে থাকি। এগুলো করতে আমাদের শিডিউলের বাইরেও কাজ করতে হয়। এমনও অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, বিগত ২৫ বছরেও ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর অডিট হয়নি। এছাড়া আমাদের দপ্তরে পর্যাপ্ত বসা ও ফাইল রাখার জায়গা নেই। আমাদের কাছে একটি সূচি আছে। কোন প্রতিষ্ঠান কবে অডিট করেছি, আমরা সেটি দেখতে পাই। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের অডিট আগেই করে থাকি। 

ডিআইএর পরিচালক প্রফেসর অলিউল্লাহ আজমতগীর বলেন, কাজের গতি বৃদ্ধির উদ্দেশ্য মন্ত্রণালয় একে দুই ভাগে বিভক্ত করার চিন্তা করেছে। কিন্তু বিভিন্ন  জটিলতার কারণে এ পরিকল্পনা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে পিআর ইনস্ট্রাকশন চালু করার কথা আমরা মন্ত্রণালয়কে বলেছি। এর ভিত্তিতে রিপোর্ট হলে আমরা অটোমেটিক পদ্ধতিতে তদন্ত করতে পারব। এটি কার্যকর হলে আমাদের কাজ সহজ হবে। তবে জনবল বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।