- বহিষ্কার ছয় ছাত্রলীগকর্মী
- ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি আজ
- হামলাকারীদের বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাস দাবি
তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে ব্যবস্থা নেয়া হবে
—অধ্যাপক মো. ইউসুফ
অধ্যক্ষ, ঢাকা কলেজ
পরপর দুবার ঢাকা কলেজে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। হামলাকারীদের বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে আজ অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন শিক্ষার্থীরা। সাংবাদিক নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত থাকায় ছয় কর্মীকে বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এ বিষয়ে কলেজের শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষাঙ্গন কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি পালনের জন্য না। এখানে শিক্ষার্থীরা আসেন পড়াশোনা করতে। এমন পরিস্থিতিতে কিছু শিক্ষার্থীর কাছে ক্যাম্পাস আবদ্ধ থাকলে আমরা যাব কোথায়? আমাদের ক্যাম্পাস নিরাপদ রাখা প্রশাসনের দায়িত্ব। কলেজের অধ্যক্ষও এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমরা এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। সুপারিশের আলোকে আমরা ব্যবস্থা নেব।
জানা যায়, ১ অক্টোবর সকালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের ছয়জনকে বহিষ্কার করে। বহিষ্কৃতরা হলেন— রাউফুর রহমান সোহেল, এ বি এম আলামিন সজিব আহসান, আবরার হোসাইন সাগর, সৈয়দ আব্দুল্লাহ শুভ ও ফাহমিদ হাসান পলাশ।
ঢাকা কলেজ সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির সদস্য ও ডেইলি বাংলাদেশ এবং প্রতিদিনের ক্যাম্পাসের কলেজ প্রতিনিধি ইংরেজি বিভাগের ছাত্র ফয়সাল আহমেদ রাতে ‘রিডিং রুমে’ পড়ছিলেন। একই সময়ে ৩০ সেপ্টেম্বরে ছাত্রলীগের কর্মিসভা বাস্তবায়ন করতে হলের সবাইকে গেস্টরুমে ডাকা হয়। এ ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করায় গত বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে ওবায়দুর সাঈদকে ২০৬ নং কক্ষে বুয়েটের আবরার ফাহাদ স্টাইলে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ১৮ ঘণ্টা পর পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় কলেজজুড়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন শিক্ষার্থীরা। কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তাহসিন বলেন, নিরাপদ ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করা আমাদের অধিকার। কিন্তু কলেজ প্রশাসন সেটি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিদিন রাতে শিক্ষার্থীদের গেস্ট রুমে থাকা বাধ্যতামূলক। কলেজে তো আমরা রাজনীতি করতে আসিনি। পড়াশোনা করতে এসেছি। এমন পরিস্থিতিতে কিছু শিক্ষার্থীর কাছে আমরা আবদ্ধ থাকলে আমরা যাব কোথায়?
কলেজের মাস্টার্সের এক শিক্ষার্থী বলেন, এখানে সিনিয়র ও জুনিয়র সবাই রাজনীতিবিদদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। সময়-অসময়ে যখন মন চায় তখনই তাদের দলীয় প্রোগ্রামে যেতে আমাদের বাধ্য করা হয়। না গেলে তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়। এ জন্য আমরা চাই, আমাদের ক্যাম্পাস নিরাপদ হোক। হামলার সঙ্গে জড়িতরা শাস্তি পাক। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, সামপ্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রেক্ষিতে সংগঠনবিরোধী, শৃঙ্খলা পরিপন্থী, অপরাধমূলক এবং সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় এমন কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হলো।
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. ইউসুফ বলেন, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটির রিপোর্ট না আসার আগ পর্যন্ত আমরা কিছুই বলতে পারছি না। রিপোর্টের সুপারিশের আলোকেই আমরা কাজ করব। ঘটনার ব্যাপারে তিনি বলেন, এ বিষয় নিয়ে আমি খুবই মর্মাহত এবং ক্ষুব্ধ। এটা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক কাজ হয়েছে। ওরা আমার কাছে আসতে চেয়েছিল, আমি পাত্তা দেইনি। মাঝের ছুটিতে আমরা বিচ্ছিন্ন ছিলাম। এই সুযোগে তারা এটা ঘটিয়েছে। গেস্টরুম নেই জানিয়ে বলেন, গেস্ট রুম থাকার প্রশ্নই আসে না। কোনো কোনো রুমের শিক্ষার্থী ডেকেছে, এটা হয়েছে।