- ব্যয় প্রায় ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা
- অতিরিক্ত এক কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয়া যাবে
- ভবনটির আয়তন হবে দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার ২০৪১ সালে স্মার্ট
বাংলাদেশ বিনির্মাণে শাহজালাল বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল একটি নতুন অধ্যায়
—এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান
চেয়ারম্যান, বেবিচক
খুলে গেছে আকাশপথের নতুন দুয়ার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। নির্মাণ প্রকল্প সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক মেগাপ্রকল্পের একটি বিশ্বমানের সব সুযোগ-সুবিধা ও যাত্রীসেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে উদ্বোধন করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থেকে এই টার্মিনালের সফট ওপেনিং (আংশিক উদ্বোধন) করেন। এর আগে তিনি প্রায় ১০ মিনিট ঘুরে ঘুরে টার্মিনালের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন। যাত্রীরা আন্তর্জাতিক মানের সব ধরনের সেবা পাবেন এই টার্মিনালে। প্রতি বছর এই টার্মিনালে অতিরিক্ত এক কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মোট ৩০ লাখ বর্গফুট জায়গায় তিন তলাবিশিষ্ট এ টার্মিনাল ভবনটির আয়তন হবে দুুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার এবং লম্বা ৭০০ মিটার ও চওড়া ২০০ মিটার। ২০১৭ সালে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। এরপর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) জানান, দেশের প্রধান এই বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনালে এখন প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার যাত্রী সেবা পাচ্ছেন। সেই হিসাবে বিমানবন্দরটি বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয়। তৃতীয় এই টার্মিনালের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজই শেষ। টার্মিনালের পুরো কার্যক্রম আগামী বছরের শেষ দিকে চালানো সম্ভব হবে। বিশ্বমানের এই টার্মিনালে এক হাজার ৪৪টি গাড়ি রাখার সক্ষমতাসহ বহুতল গাড়ি পার্কিং তৈরি করা হচ্ছে। এই টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করে রাখা যাবে। এ ছাড়া তৃতীয় টার্মিনালে ১৬টি ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে এবং অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য চারটি পৃথক বেল্ট থাকবে। টার্মিনালটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে পাঁচ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ। বাকি তহবিলের জোগানদাতা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।
টার্মিনালটির নকশা করেছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ও ব্যস্ততম হিসেবে পরিচিত সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের নকশাকার রোহানি বাহারিন। বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, ‘২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশের বিনির্মাণের যে রূপকল্প, তারই অবিচ্ছেদ্য অংশ বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন অধ্যায়। প্রকল্পের দায়িত্ব প্রদানের সময় প্রধানমন্ত্রীর তিনটি নির্দেশনা ছিল— ১. যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা; ২. প্রকল্পের কাজের গুণগত মান বজায় রাখা এবং ৩. নির্ধারিত ব্যয়সীমার মধ্যে প্রকল্প শেষ করা। আমি অত্যন্ত গর্বের সাথে জানাচ্ছি, সবগুলো নির্দেশনা মেনেই এ প্রকল্প আমরা শেষ করতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন, ঢাকায় বিমানবন্দরে পৌঁছাতে হলে যানজটের ভয়ে হাতে লম্বা সময় নিয়ে রওনা দিতে হয়। তৃতীয় টার্মিনালে যেতে সেই ভোগান্তি আর পোহাতে হবে না। যানজট এড়ানোরও নানান অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। মেট্রোরেল ও উড়ালসড়কের কাজ এগিয়ে চলছে। এই সব কটি পথই ঠেকবে তৃতীয় টার্মিনালে। সময় কাটানোর জন্য মুভি লাউঞ্জ, ফুডকোর্ট, এয়ারলাইন্স লাউঞ্জ, ডে-রুম ও ১৪টি স্পটে ডিউটি ফ্রি শপ থাকবে। যাত্রীদের নিতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা, ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার, বাচ্চাদের খেলার জায়গা থাকছে।’ নতুন টার্মিনালের সুযোগ-সুবিধা প্রসঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান আরও বলেন, নতুন টার্মিনালে যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারবেন। বর্তমানে টার্মিনালের ব্যবস্থাপনা অনেকগুলো সনাতন পদ্ধতিতে চলে কিন্তু নতুন জায়গায় সব হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। নতুন টার্মিনাল ভবনের বহির্গমন পথে ১০টি স্বয়ংক্রিয় ই-গেট থাকবে। যেসব যাত্রী অন্য দেশ থেকে বাংলাদেশে আসবেন, তাদের জন্য পাঁচটি ই-গেট থাকবে। পাশাপাশি থাকবে ১৭৭টি চেকইন কাউন্টার, ৬৪টি বহির্গমন ইমিগ্রেশন ডেস্ক এবং ৬৪টি আগমনী ইমিগ্রেশন ডেস্ক। যাত্রীদের তল্লাশির ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন আসছে। বডি স্ক্যানার যন্ত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তল্লাশি চলবে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টার্মিনালের পুরো কার্যক্রম চালু হতে কিছু সময় লাগলেও কিছু কিছু সুবিধা এখন থেকে ব্যবহার করা যাবে। যেমন অ্যাপ্রনে ৩৭টি এয়ারক্রাফট পার্ক করা যাবে। আমদানি ও রপ্তানি কার্গো টার্মিনালের কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী মার্চ-এপ্রিলে তা চালু হতে পারে। বর্তমানে জায়গার স্বল্পতার কারণে নতুন করে সুযোগ দেয়া যাচ্ছে না। তৃতীয় টার্মিনাল প্রস্তুত হলে ক্রমে ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ দেয়া হবে।
বেবিচক জানায়, নতুন টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে জাপান। তাদেরই এ কাজ দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ প্রসঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, নতুন টার্মিনালের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব জাপানকে দেয়া হবে। তাদের দায়িত্বের মধ্যে থাকবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং, কার্গো হ্যান্ডলিং। তৃতীয় টার্মিনালের কাজ শেষ হওয়ার আগে থেকেই বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশের আগ্রহ দেখিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন বিমান সংস্থা। ইতোমধ্যে কিছু আবেদনও জমা পড়েছে।