- সরকারের পদত্যাগ, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ সাত দফা ঘোষণা
- একক ও যৌথ ব্যানারে শিগগিরই ঢাকায় আন্দোলনের ঘোষণা
শিবিরের যৌক্তিক আন্দোলনকে আমরা সমর্থন জানাই
—সাইফ মাহমুদ জুয়েল, সাধারণ সম্পাদক ছাত্রদল
দেশের এই কঠিন অবস্থায় ছাত্রশিবির ঘরে বসে থাকবে না
—রাজিবুর রহমান, সভাপতি, ছাত্রশিবির
শিবিরকে সরকার নিষিদ্ধ করেনি আন্দোলন করার অধিকার আছে
—সাইফুল হক, সাধারণ সম্পাদক, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
ছাত্র আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে রাজনীতিতে। গতকাল ইসলামী ছাত্রশিবির সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছে তারা আর ঘরে বসে থাকবে না। দেশের চলমান পরিস্থতিতে জনগণকে সাথে নিয়ে রাজপথে ভূমিকা পালন করবে। সরকারের পদত্যাগ, সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও মানবাধিকারকর্মী আদিলুর রহমানের মুক্তিসহ সাত দফাও ঘোষণা করেছে ছাত্রসংগঠনটি।
এ নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্যের নীতিনির্ধারকরা শিবিরকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তারা বলছেন, যারাই সরকারবিরোধী আন্দোলন করবে তারা সমর্থন জানাবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুব শিগগিরই ইসলামী ছাত্রশিবির একক ব্যানারে ও অন্য ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে রাজপথে সিরিজ আন্দোলন চালিয়ে যাবে। ঢাকাকেন্দ্রিক তারা বড় কিছু কর্মসূচি পালন করবে। যৌথভাবে দেয়া হবে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আল্টিমেটামও।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান রাজপথে শিবিরের ভূমিকা কী হবে তা স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে ইসলামী ছাত্রশিবির অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ১০ হাজার ৩৫৮টি রাজনৈতিক মামলায় লক্ষাধিক নেতাকর্মী আসামি হয়েছে। ২৮ হাজার ৭২৩ জন কারাবন্দি হয়েছে। এভাবে আর সরকারকে সময় দেয়া যায় না। দেশের ক্রান্তিলগ্নে যুগে যুগে ছাত্র সংগঠন ভূমিকা পালন করেছে, এবারও আন্দোলনের মাধ্যমে সেই ভূমিকা পালন করা হবে।
সাত দফা দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন—
১. ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
২. আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিঞা গোলাম পরোয়ার, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি রফিকুল ইসলাম খান, সেলিম উদ্দীন, মানবাধিকারকর্মী আদিলুর রহমানসহ সব আলেম-ওলামা, ছাত্রনেতা ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। ছাত্রশিবিরের গুম হওয়া পাঁচ নেতাকর্মীসহ সারা দেশে গুম হওয়া সবাইকে ফিরিয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সব রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
৩. ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সারা দেশের অফিসসমূহ দ্রুত সময়ের মধ্যে খুলে দিতে হবে। সেই সাথে ছাত্রসংগঠন হিসেবে সব রাজনৈতিক ও ছাত্রবান্ধব কর্মসূচি নির্বিঘ্নে পালনের সুযোগ দিতে হবে।
৪. দেশের ক্যাম্পাসগুলোতে সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করা ও ছাত্রসংসদ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতির সুস্থ ধারা চালু করতে হবে। সেই সঙ্গে ক্যাম্পাসে অবস্থানরত সব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসসমূহকে নিরাপদ করতে হবে।
৫. জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ বাতিল করে নৈতিকতাসমৃদ্ধ, কারিগরি ও বাস্তবমুখী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে সব পর্যায়ে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক থাকবে। সেই সাথে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে সংস্কার ও উন্নত করে আরও যুগোপযোগী করতে হবে।
৬. শিক্ষার সব পর্যায়ে অর্থাৎ প্রাথমিক থেকে স্নাতক পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে। সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী বিশেষ করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শিশুদের অবৈতনিক শিক্ষা দান নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে কাগজ-কলমসহ সব প্রকার শিক্ষা উপকরণের মূল্য হ্রাস করতে হবে।
৭. দেশের মোট বাজেটের ২৫ ভাগ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দিতে হবে এবং শিক্ষা বাজেটের এক-চতুর্থাংশ গবেষণায় ব্যয় নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি ভ্যাট হ্রাস করতে হবে।
রাজিবুর বলেন, সাত দফা দাবি শুধু ছাত্র শিবিরের নয়, এ দাবি গোটা ছাত্রসমাজের। এই দাবি না মানলে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ছাত্রসমাজকে সাথে নিয়ে তীব্র গণআন্দোলনের মাধ্যমে দাবিসমূহ আদায়ে ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ সরকার পতন আন্দোলনে সব ছাত্রসংগঠনকে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে ভূমিকা পালনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী রাহিনী, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক মহল, পেশাজীবী শ্রেণিসহ সব শ্রেণির মানুষকে দাবি আদায়ে রাজপথে নামার আহ্বান জানাই।
ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যর মুখপাত্র ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল আমার সংবাদকে বলেন, বর্তমান সময়ের পরিস্থিতিতে দায়বদ্ধতার আলোকে শিবির তাদের কর্মসূচির কথা জানিয়েছে। তাদের যৌক্তিক আন্দোলনকে সমর্থন জানাই। স্বাভাবিকভাবে এই আন্দোলন দেশের বেশির ভাগ মানুষের চাওয়া। দেশের সব মানুষ যার যার অবস্থান থেকে এই ফ্যাসিবাদ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছে আন্দোলন গড়ে তুলছে এটিই স্বাভাবিক। নৈতিক অবস্থান থেকে ছাত্রশিবির কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। যারা এ সরকারের পতন চায়, আন্দোলন করে মাঠে নামতে চায় আন্দোলনকে আমরা সমর্থন জানাই।
বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক আমার সংবাদকে বলেন, আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াত ইসলামী কিংবা ছাত্র শিবির নেই। তারা তাদের মতো করে রাজপথে আছে বা থাকার চেষ্টা করছে। সরকার জামায়াত কিংবা ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ সংগঠন বলে ঘোষণা করেনি সেই অবস্থান থেকে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি করার অধিকার আছে।
ফ্যাসিবাদবিরোধী যে ছাত্রঐক্য গড়ে উঠেছে সেখানে আমার মনে হয় তাদের আসার সুযোগ নেই। এদিক থেকে আমরা সরকারের ভূমিকা দিমুখীও দেখছি জামায়াত ইসলামী ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন যে কর্মসূচি করল এ নিয়ে সরকারি দলের লোকেরা যখন কথা বলল আমরা বিভিন্ন বক্তব্য দেখেছি। তাই আমি বলছি, সরকার যেহেতু জামায়াত বা শিবিরকে নিষিদ্ধ করেনি তাদের আন্দোলন করার অধিকার আছে।
ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, দেশের এই কঠিন অবস্থায় ছাত্রশিবির ঘরে বসে থাকবে না। দেশপ্রেম থেকে স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলনের ভূমিকা পালন করবে। আমরা সব মজলুমের পক্ষে। আমরা তাদের পক্ষেই কথা বলি।
আমি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও আদিলুর রহমানসহ যারাই এ সরকারের জুলুমের শিকার হয়েছে সব সময় আমরা তাদের পক্ষেই অবস্থান ছিল। এ জন্য আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসা চাই। দেশের সব মানুষের অধিকার নিশ্চিতের জন্য যুগে যুগে ছাত্র সংগঠনের ভূমিকা ছিল এবারও থাকবে। দেশের মানুষকে সরকার পতন আন্দোলনে শিবির রাজপথে থাকবে। খুব শিগগিরই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।