ধর্মীয় দলের ঢাকা টার্গেট

আবদুর রহিম প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০২৩, ১১:৪৫ পিএম
ধর্মীয় দলের ঢাকা টার্গেট
  • লাগাতার কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে জামায়াত
  • চরমোনাই ও খেলাফতের ঢাকামুখী কর্মসূচি
  • ইসলামিক বড় দল মাঠে নামলে ছোটগুলোর একাত্মতা ঘোষণা
  • ঢাকায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করল হেফাজত
  • ঢাকায় বৃহৎ অবস্থান সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ঘেরাওয়ের পরিকল্পনা
  • ফিলিস্তিন ইস্যুতে চলছে এক দফা অনুশীলন

ফিলিস্তিন ইস্যুতে ঢাকায় প্রতিদিন বিক্ষোভ সমাবেশ করে সরকার পতনের হুমকি দিচ্ছে ধর্মীয় দলগুলো! দেশের সব ইসলামপন্থিই বায়তুল মোকাররমকেন্দ্রিক কর্মসূচি পালন করছে। সড়ক বন্ধ করে দিচ্ছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক আটকে দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে সমাবেশও পালন করছে। বাংলাদেশের সরকারের ওপরও ক্ষোভ প্রকাশ করা হচ্ছে। দলগুলো প্রশ্ন তুলে বলছেন, সরকার ইসরাইলি ভিসানীতি গ্রহণ করে দ্বিমুখী আচরণ করছে। কেন এখনো সংসদে এ নিয়ে কথা বলছে না? সাহায্যের জন্য সেনা পাঠাচ্ছেন না...খাদ্য সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে না এমন দাবিও তুলছে। উত্তপ্ত বাক্য ঘোষণাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কাউকে বাধা দিচ্ছে না। 

ঢাকার দৈনিক বাংলা সড়ক বন্ধ করে গত শুক্রবার শ্রমিক সমাবেশ পালন করেছে চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন। ওই সমাবেশে বিএনপিও যোগ দেয়, বক্তব্য দেয়। গতকালও হেফাজতে ইসলাম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে সমাবেশ করে। খেলাফত মজলিশও সমাবেশ পালন করে কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। এ দিকে ঢাকা শহরের থানায় থানায় জামায়াতে ইসলামী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে। দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ সাত দফা দাবি নিয়ে গত ১১ অক্টোবর রাজধানীর মতিঝিলে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। সারা দেশেও চলছে শিবিরের কর্মসূচি। এ দিকে ঢাকায় সমাবেশের মাধ্যমে আগামী ২০ অক্টোবর  ইসলামী আন্দোলন চরমোনাইয়ের ছাত্র-যুবসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হয়। খেলাফত মজলিস আগামী ২৭ অক্টোবর দেশব্যাপী গণমিছিল, ১৬ অক্টোবর থেকে আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল, উলামা-মাশায়েখ ও পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময়। 

গাজাসহ ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলা বন্ধের দাবিতে ও ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে আগামী ২০ অক্টোবর দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে। হেফাজতে ইসলামও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। নেতাকর্মীদের মুক্তি ও সব মামলা প্রত্যহার দাবিতে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন করবে তারা। সাময়িক ইস্যুতে দলগুলো মাঠের অনুশীলন করছে বলেও অনেকে বলছেন। যেকোনো মুহূর্তে ভিন্ন দৃশ্যপট ধারণা করতে পারে। আদর্শ নিয়ে ভিন্ন মত থাকলেও এক সারিতে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, সরকার পতনে লাগাতার কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার চিন্তা করছে জামায়াতে ইসলামী। ঢাকায় সিরিজ কর্মসূচির প্রস্তুতিও নিচ্ছে তারা। চলতি সপ্তাহ থেকে ঢাকায় তাদের শক্ত অবস্থান শুরু হবে। তারা আর ঝটিকা কর্মসূচি নয়, অবস্থান গ্রহণ ও বাধা এলে প্রতিরোধেরও চিন্তা করছে বলে শোনা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কিছু দলের সঙ্গে সরকারের তলে তলে সমঝোতা হয়েছে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন। যারা প্রকৃতভাবে সরকার পতন চায়, রাজপথ দখল করতে চায় তাদের ঠেকাতে সরকার নিয়ন্ত্রিত কিছু ইসলামিক দলকে সরকার আগে থেকেই মাঠে নামিয়ে রেখেছে। যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে জনদুর্ভোগ তৈরি করে রাস্তায় সমাবেশ করছে তাদের সঙ্গে সখ্য আছে কি-না তা অনেকেই সন্দেহ করছেন। তবে রাজপথে শেষবেলায় অনেক হিসাব-নিকাশ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় দলগুলোর সঙ্গে একে অপরের আদর্শ নিয়ে মতানৈক্য চলছে বহু বছর ধরে। যার কারণে দেশে এখনো ইসলামপন্থিদের কোনো ঐক্য নেই। এবার জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারপন্থি ও বিরোধী পক্ষ দুটো বিষয় থাকলেও ইসলামপন্থিদের বড় অংশই এক হয়ে যাওয়ার খবর শোনার যাচ্ছে। চলতি মাসের শেষ দুই সপ্তাহ সবাই এক দফা নিয়ে কর্মসূচি পালন করবে। কিছু দল অবস্থান গ্রহণ করলে অন্য দলগুলোও রাস্তায় নেমে একাত্মতা পোষণ করে আদর্শের মতানৈক্যের দূরত্বের অবসান করবে। 

জামায়াতে ইসলামীর নির্ভরযোগ্য দুই শীর্ষ নেতা বলেছেন, তারা খুব শিগগিরই ঢাকায় বৃহৎ অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন। গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো অভিমুখী পদযাত্রা ঘোষণা এবং ঘেরাও কর্মসূচি পালন করবেন। তাদের সঙ্গে ইসলামপন্থি বড় একটি অংশ রাজপথে নেমে আসবে। সরকারের পতনে তারা ডু ওর ডাই নীতি গ্রহণ করেছেন। সারা দেশে তাদের এখন বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছে। থানায় থানায় কর্মসূচি পালন শেষে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে তাদের অবস্থান জানান দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার যদি বাধা দেয় তাহলে ভিন্ন পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে বলে ভাষ্য তাদের। দেশে সরকার পতনে অতীতেও জামায়াতের ভূমিকা ছিল এ সরকারের পতনেও তাদের ভূমিকা থাকবে বলে দাবি করেন তারা। জানতে চাইলে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী আমার সংবাদকে বলেন, ‘আগামী ২৮ অক্টোবর আমরা ঢাকায় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন করব। সেখানে আমাদের মূলত দুটো দাবিতে কর্মসূচি পালন হবে। তা হচ্ছে— মামুনুল হকসহ আমাদের সব বন্দি নেতাকর্মীকে মুক্তি দিতে হবে এবং আমাদের যত নেতাকর্মী রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে তা প্রত্যাখ্যান করতে হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা সব সময় দেখি সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেশের আলেমদেরও গ্রেপ্তার করা হয়, আমরা সেগুলো বন্ধের জন্য সরকারকে আহ্বান জানাব। আমাদের দল ১৩ দফা নিয়ে কাজ করছে। সেগুলো বাস্তবায়নে আমাদের সামনে আরো কর্মসূচি আসবে। 

খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ আমার সংবাদকে বলেছেন, দেশ এখন এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে। দীর্ঘ সময় দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। রাতের ভোটে সরকার গঠন হয়েছে। এ একদিকে যেমন জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে অপর দিকে, দেশের টাকা লুটপাট করে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। সরকার দাবি করছে তাদের ওপর জনগণের সমর্থন আছে, অথচ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে ভয় পাচ্ছে। কারণ তারা নিজেরাও ভালো করে জানে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারা ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এ দেশের জনগণ এখন ভোটাধিকার নিশ্চিত ও সরকার পতনে ঐকমত্য হয়ে আছে। 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম বলেছেন, এ  সরকার দিনের ভোট রাতে নিয়ে চরম ধোঁকাবাজি করেছে। জাতি আর ধোঁকায় পা দেবে না। জাতীয় সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ছাড়া বিদ্যমান সংঘাত থেকে দেশকে রক্ষা করা যাবে না। এক দফা দাবিতে আমরা রাজপথে আছি। প্রয়োজনে জীবন দিতে প্রস্তুত।