- ২০২৬ সালের শেষদিকে চালু হবে
- ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে ২৭.৫০ শতাংশ কাজ
- যাত্রী ওঠানামার জন্য থাকবে ১২টি স্টেশন
- পাতালের দৈর্ঘ্য ১৯.৮৭২ কিলোমিটার
- ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতি হবে ৯০ কিলোমিটার
- থাকবে ব্যাটারি ব্যাকআপ সিস্টেম
- টানেলটি ভূপৃষ্ঠের ১০ মিটার নিচে নির্মাণ হবে
পাতাল মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-১ রাজধানীর পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসন ও পরিবেশ উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে
—ডিএমটিসিএল
বাংলাদেশের মানুষের কাছে মাটির নিচ দিয়ে ট্রেন চলাচল এক সময় স্বপ্ন ছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন বাস্তরে রূপ নেয়া পথে। দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল লাইন-১ ২০২৬ সালের শেষের দিকে সম্পূর্ণভাবে চালু হবে। সেই সাথে প্রতিদিন আট লাখ মানুষ যাতায়াত করতে পারবেন পাতাল ট্রেনে। ইতোমধ্যে এমআরটি লাইন-১ এর কাজ ২৭.৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রতিটি একমুখী ট্রেন প্রতিবারে ১২টি স্টেশনে থেমে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে পৌঁছাবে । ৯টি স্টেশনে থেমে ২০ মিনিটে ৩০ সেকেন্ডে নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল টার্মিনাল পর্যন্ত এবং ১৬টি স্টেশনে থেমে ৩৫ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে কমলাপুর থেকে পূর্বাচল টার্মিনাল পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে। এমআরটি লাইন-১ এর ট্রেনের সর্বোচ্চ যাত্রী ধারণ ক্ষমতা রয়েছে তিন হাজার ৮৮ জনের।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সূত্র বলেছে, বাংলাদেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল সম্পূর্ণ বিদ্যুৎচালিত বিধায় কোনো ধরনের জীবাশ্ম ও তরল জ্বালানি ব্যবহূত হবে না। ফলে বায়ুদূষণ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রেলওয়ে ট্রেকের নিচে ম্যাস স্প্রিং সিস্টেম (এমএসএস) থাকবে। কনটিনেউয়াস ওয়েলডিং রেল ব্যবহার করা হবে। উড়াল মেট্রোরেলের ভায়াডাক্টের উভয় পার্শ্বে শব্দ প্রতিবন্ধক দেয়াল থাকবে এবং পাতাল মেট্রোরেলের টানেল সংলগ্ন মাটি শব্দ প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করবে। ফলে মেট্রোরেলে শব্দ ও কম্পন দূষণ মাত্রা মানদণ্ড অনেক নিচে থাকবে। সার্বিকভাবে পরিবেশ দূষণের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বরং পরিবেশ উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। সূত্র আরও জানায়, মেট্রোরেল আইন-২০১৫ এর ধারা ১৭ ও ১৮ এবং মেট্রোরেল বিধিমালা-২০১৬ এর বিধি ২১ ও ২২ অনুযায়ী এমআরটি লাইন-১ বা বাংলাদেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ করা হবে। সরকার ভাড়ার হার চূড়ান্ত করবে। পাতাল মেট্রোরেল লাইন-১ এর প্রাক্কলিত ব্যয় হবে মোট ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এই প্রকল্পের ব্যয় হিসেবে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সি (জাইকা) সহায়তা প্রদান করে।
এমআরটি লাইন-১ এ দুটি (পাতাল এবং উড়াল) রুটে বিভক্ত করা হয়েছে। একটি হলো বিমানবন্দর রুট এবং অন্যটি পূর্বাচল রুট। বিমানবন্দর রুট হবে পাতাল এবং পূর্বাচল রুট উড়াল হিসেবে নির্মিত হবে। এ ক্ষেত্রে মোট ২১টি স্টেশন থাকবে। এর মধ্যে পাতাল রুটের মোট ১২টি স্টেশন ও উড়াল রুটে থাকবে ৯টি। বিমানবন্দর রুটের পাতাল ১৯.৮৭২ কিলোমিটার রুটের স্টেশনগুলো হলো বিমানবন্দরের বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩, খিলক্ষেত, নদ্দা, নতুনবাজার, উত্তর বাড্ডা, বাড্ডা, আফতাব নগর, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ ও কমলাপুর। পূর্বাচল রুটের নতুন বাজার ও নদ্দা স্টেশন দুটি বিমানবন্দর রুটের অংশ হিসেবে পাতালে নির্মিত হবে। পাতাল মেট্রোরেলে প্রথম অবস্থায় আটটি কোচ বিশিষ্ট ২৫ সেট মেট্রো ট্রেন দিয়ে শুরু হবে। তবে যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে ভবিষ্যতে ৩৬ সেট মেট্রো ট্রেনে উন্নীত করা হবে। মাঝের ছয়টি কোচের প্রতিটিতে সর্বোচ্চ ৩৯০ জন এবং ট্রেইলার কোচের প্রতিটিতে সর্বোচ্চ ৩৭৪ জন। প্রতিটি মেট্রো ট্রেনে সর্বোচ্চ তিন হাজার ৮৮ জন যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা রয়েছে। পাতাল মেট্রোরেল লাইন-১ এর প্রতি ঘণ্টা সর্বোচ্চ গতি হবে ৯০ কিলোমিটার। পাতাল মেট্রোরেল লাইন-১ এর নির্মাণকাজ শুরু হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে।
আর প্রকল্পটির কাজ শেষে হবে ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর। পাতাল স্টেশনের আন্ডারগ্রাউন্ড কনসোর্স দিয়ে পাতালের ন্যায় স্টেশনের সিঁড়ি, লিফট এবং এস্কেলেটর ব্যবহার করে রাস্তার এপার থেকে ওপারে আসা যাওয়া করা যাবে। এমআরটি লাইন-১ পরিচালনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হাতিরঝিল এবং পূর্বাচল এলাকায় দুটি রিসিভিং সাবস্টেশন থাকবে। তা ছাড়া ব্যাটারি ব্যাকআপ সিস্টেম যা মেট্রো ট্রেনের রিজেনারেটিভ ব্রেকিং এ্যানার্জি দ্বারা নিয়মিত চার্জ হতে থাকবে। এ ক্ষেত্রে ওসিএস এ দেড় হাজার ভোল্ট ডিসি ব্যবহূত হবে। অত্যাধুনিক উন্মুক্ত খনন পদ্ধতি ওপেন কাট মেথডের মাধ্যমে নির্মাণ করা হবে। সড়কের অর্ধেকাংশ ব্যবহার করে উন্মুক্ত খনন পদ্ধতিতে ২০০ মিটার দীর্ঘ স্টেশন নির্মাণের প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করতে প্রায় চার মাস সময়ের প্রয়োজন হবে। টানেলের উপরিভাগ ভূপৃষ্টের ১০ মিটার নিচ দিয়ে নির্মাণ করে হবে বিধায় পরিষেবা স্থানান্তরের প্রয়োজন হবে না। উন্মুক্ত খনন পদ্ধতিতে প্রতিটি পাতাল স্টেশন নির্মাণকালে উত্তোলনকৃত মাটির পরিমাণ হবে গড়ে প্রায় দুই লাখ ২৭ হাজার ঘনমিটার এবং প্রতি কিলোমিটার টানেল নির্মাণকালে উত্তোলনকৃত মাটির পরিমাণ হবে গড়ে প্রায় ৪৬ হাজার ঘনমিটার।
তবে কমলাপুর থেকে রামপুরা পর্যন্ত এলাকায় সড়কের প্রশস্থতা কম থাকায় উপর-নিচ পদ্ধতিতে মাটির উপরিভাগ থেকে কমবেশি ৩০ মিটার গভীরতায় টানেল নির্মাণ করা হবে। এ বিষয়ে নগরবীদরা বলেন, এমআরটি লাইন-১ বা পাতাল ট্রেন একটি ব্যয়বহুল প্রকল্প। মাটির নিচ দিয়ে ট্রেনের রুট চালু হওয়াটা দেশের জন্য সুখবর হলেও তা কতটা উপকার বয়ে আনবে সেটি হলো মূল কথা। ঢাকার যানজট কমাতে হলে আগে ব্যক্তিগত গাড়ি কমানো জরুরি। পাতাল রেলের ভাড়া ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজলভ্য হলে তবেই মানুষ চড়বে। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে এটি পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই প্রকল্পের ফলে পরিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ জানায়, বাংলাদেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-১ ঢাকা মহানগরী ও তৎসংলগ্ন পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসনে ও পরিবেশ উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। প্রত্যেকটি পাতাল স্টেশন ও পাতাল ট্রেন সম্পূর্ণভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত থাকবে। তা ছাড়া টানেল, স্টেশন এলাকা ও ট্রেনের অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত বায়ুপ্রবাহের জন্য অত্যাধুনিক ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা রাখা হবে। ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসন ও পরিবেশ উন্নয়নে দ্রুতগামী, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, সময়-সাশ্রয়ী, বিদ্যুৎ চালিত, দূরনিয়ন্ত্রিত ও পরিবেশবান্ধব অত্যাধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু হবে। পাতাল মেট্রোরেলের ব্যবহারের ফলে ছোট ছোট যানবাহনের ব্যবহার হ্রাস পাবে। জীবাশ্ম ও তরল জ্বালানির ব্যবহার কম হবে। যানজট বহুলাংশে হ্রাস পাবে। মহানগরবাসীর কর্মঘণ্টা সাশ্রয় হবে। সাশ্রয়কৃত কর্মঘণ্টা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যবহার করা যাবে।