নির্বাচন কমিশন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও অসহযোগ আন্দোলনসহ পরবর্তী বড় কর্মসূচি
এক ব্যানারে আসার সম্ভাবনা
দেশরক্ষায় বিএনপি জামায়াত, চরমোনাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে
—কর্নেল (অব.) অলি আহমদ
প্রেসিডেন্ট, এলডিপি
এখন যুগপৎ আন্দোলন চলছে সময় এলে এক ব্যানারেও হতে পারে
—হারুন অর রশীদ যুগ্ম মহাসচিব বিএনপি
এক ব্যানারে আন্দোলন হলে সবচেয়ে ভালো অতীতে এমন ইতিহাস রয়েছে
—আবদুল হালিম
সহ-সেক্রেটারি জেনারেল জামায়াতে ইসলামী
বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধীরা আলাদা আলাদা ব্যানারে কর্মসূচি পালন করছে। হরতালসহ তৃতীয় দফায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করেও ঘরে কোনো ফলাফল তুলতে পারেনি। আটক হয়েছেন বিএনপি মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতারা। দলের স্থায়ী কমিটিসহ প্রথম সারির অনেকেই এখন কারাগারে। সারা দেশে দলটির কয়েক লক্ষাধিক নেতাকর্মী আত্মগোপনে। ইতোমধ্যে ২৮ অক্টোবর থেকে বিএনপির ১২ জন নিহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন ১২ হাজার ৪৪৬ জন। মামলা হয়েছে ৫৭৯টি। আসামি প্রায় ৪৫ হাজার। জামায়াতেরও তিন নেতা নিহতসহ কয়েকশ আটক বলে দাবি করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও, অসহযোগ আন্দোলনসহ অনেক বড় কর্মসূচির চিন্তা করছে বিএনপি। যেকোনো মূল্যে কর্মসূচি বাস্তবায়নে এক ব্যানারে কর্মসূচি পালনের পর্যবেক্ষণ এসেছে দলে। অতীতে সরকার পতনে যেভাবে সব দল জোট একত্রিত হয়ে রাজপথে ভূমিকা পালন করেছে সেভাবে আবারও এক ব্যানারে কর্মসূচি পালনের জন্য প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে বিএনপির হাইকমান্ডে।
গত শুক্রবার চরমোনাই পীর রেজাউল করিম বিএনপির আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছেন। কেয়ারটেকার সরকার দাবি না মানলে বিএনপির সঙ্গে এক সাথে মাঠে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। জামায়াতে ইসলামী বিএনপির সাথে তাল মিলিয়ে হরতাল অবরোধ পালন করছে। এদিকে খেলাফত মজলিসও বিএনপিকে সমর্থন দিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। সরকারবিরোধী সবাইকে নিয়ে এখন এক ব্যানারে আন্দোলনের জন্য বিএনপির হাইকমান্ডে পর্যবেক্ষণ এসেছে। পরবর্তী যে কর্মসূচি আসবে তাতে আর আলাদা আলাদা কোনো ব্যানার থাকবে না, সরকারবিরোধী জোট হিসেবে এক ব্যানারে কর্মসূচি আসার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিগন্যালে তা যেকোনো সময় ঘোষণা আসছে বলে ভাষ্য বিএনপি ও সরকারবিরোধী জোটের।
এ নিয়ে গতকাল বিএনপি জামায়াত চরমোনাই ও বিএনপি জোটের অন্তত ১০ জন নেতার সঙ্গে কথা হয় আমার সংবাদের। তারা বলেছেন, সরকার পতনে বিএনপি, জামায়াত, ডান-বাম অনেকেই বিচ্ছিন্নভাবে হরতাল-অবরোধ পালন করছে। বিএনপি ঝটিকা মিছিল করছে। একইভাবে জামায়াতও শুধু ব্যানার পলিটিক্স করছে। শক্তিশালী কোনো মুভমেন্টে যাচ্ছে না। প্রেস ক্লাবকেন্দ্রিক পুলিশি পাহারার মধ্যে গণতন্ত্রমঞ্চ, গণঅধিকার পরিষদসহ কয়েকটি দলকে মিছিল করতে দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে ঢাকাসহ সারা দেশে কিছু গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে সরকারবিরোধী বলছে, এগুলো সরকার করছে দায় চাপানোর জন্য। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল বলছে, বিএনপি-জামায়াত আবারও আগুন সন্ত্রাস করছে। এমন দুর্বল আন্দোলনে সরকার পতন সম্ভব নয়। এদের অতীতেও সরকার পতনের ইতিহাস রয়েছে। বেলা শেষে সবাইকে এক ব্যানারে আসতে হয়েছে। এর মধ্যে দুটো রাজনৈতিক দল এক ব্যানারে কর্মসূচি দেয়ার জন্য বিএনপির কাছে প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে। বিএনপিও বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বলে ভাষ্য দল দুটির। বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, অসহযোগ আন্দোলন, নির্বাচন কমিশন ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওসহ পরবর্তী যে কর্মসূচি রয়েছে সেগুলো এক ব্যানারে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে দলে আগেই আলোচনা হয়েছে। সরকারের গতিবিধির ওপর নির্ভর করে যেকোনো মুহূর্তে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
বিএনপির এক উপদেষ্টা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে আমার সংবাদকে বলেন, এখন বিএনপিসহ সরকারবিরোধী অনেকগুলো জোট একই উদ্দেশ্য নিয়ে আন্দোলন করছে। বিএনপি আত্মগোপনে থেকেও যতটুকু করার চেষ্টা করছে। এই আন্দোলন দিয়ে সরকারকে ধাক্কা দেয়া কঠিন হয়ে যাবে। অন্য যারা বিরোধী রয়েছে তাদের দুর্বল অবস্থানের বিষয়ে জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, এখন আসলে বিএনপি ছাড়া অন্য কোনো দল দায় নিতে চাচ্ছে না। জামায়াতে ইসলামী শুধু ব্যানার পলিটিক্স করছে। তারাও নামার মতো নামছে না। এখন যদি চরমোনাই পীরের দল, খেলাফত মজলিস তারাও যুক্ত ব্যানার যদি আলাদা হয় তাহলে তাদের ভূমিকাও নড়বড়ে থাকবে। এখন চূড়ান্ত মুভমেন্ট আসবে যখন সব দল এক ব্যানারে আসবে। এক ব্যানারের আন্দোলনের বিষয়ে দলে আগেও আলোচনা হয়েছে। এখন ফের প্রস্তাব না এসেছে। হয়তো পরিস্থিতির আলোকে সরকারবিরোধী যত দল রয়েছে সবাইকে নিয়ে এক ব্যানারে আন্দোলের ঘোষণা আসবে। তখন সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের ফলাফল পাওয়া যাবে।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে চাইলে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ (বীরবিক্রম) আমার সংবাদকে বলেছেন, দেশ রক্ষায় বিএনপি জামায়াত চরমোনাই সবাইকে এখন ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সবাই আন্দোলনে রয়েছে। প্রয়োজনে এক সঙ্গেও আন্দোলন হতে পারে। আন্দোলন সবাই করছে এই সরকারের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, নিজের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ সুন্দর করার জন্য এখনি উদ্যোগ গ্রহণ করুন। দেশ আজ ভয়ঙ্কর বিপদের সম্মুখীন। এখন ঘরে বসে থাকার সময় নয়। শুধু জামায়াত আর বিএনপি নয়, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সমস্ত দেশদ্রোহী শক্তি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ছাড়া ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা ছাড়া এই দেশ স্বাধীন থাকবে কি-না সন্দেহ রয়েছে। আমাদের অনেক ভুল ভ্রান্তি রয়েছে কিন্তু এখন সময় এসেছে সব কিছু চিন্তা-ভাবনা করে দেশের মঙ্গলের জন্য কাজ করা, জনগণের জন্য কাজ করা, দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনা সবাই একত্রিত হওয়া। তিনি বলেন, আমাদেরকে বুঝতে মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত, নির্যাতন-নিপীড়ন নিত্যদিনের ঘটনা। এখানে আমরা সবাই ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত, সাংবিধানিক কোনো অধিকার নেই, রাজনৈতিক কোনো অধিকার নেই, সামাজিক কোনো অধিকার নেই। আমাদের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। সুতরাং দেশকে বাঁচানো ঈমানি দায়িত্ব। এটি কোনো দলের বা ব্যক্তির নয়। আমাদের সবাইকে সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে নিজের মাতৃভূমিকে রক্ষা করার জন্য সঠিক পথে পরিচালনা করার জন্য, শান্তি বয়ে আনার জন্য যা যা করার দরকার তাই করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা মেনে সংবিধান মেনে আমাদের কর্মসূচি পালন করে যেতে হবে। স্বৈরাচার থেকে চিরদিনের জন্য যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।’
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম আমার সংবাদকে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ ছাড়া সবাই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য এককভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এটি হলো আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। এ ছাড়া এখন কিন্তু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সব রাজনৈতিক দল আন্দোলন করে যাচ্ছে। এক ব্যানারে হলে সেটি সবচেয়ে ভালো দিক। কিন্তু বাংলাদেশে এক ব্যানারে বা বিভিন্ন ব্যানারে একটি দাবিতে আন্দোলন হয়েছে অতীতে এমন ইতিহাস রয়েছে। এখন আন্তরিকতার সাথে মাঠে নামলে লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে। এখন যে সব দল আন্দোলনে রয়েছে সবাই ভূমিকা রাখছে। এটি ঠিক, এখন আন্দোলন করতে গিয়ে যে যতটা ক্ষতির সম্মুখীন হবে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করতে হবে। যেমন চরমোনাই পীর বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচারের কথা তুলে ধরেছেন। পক্ষান্তরে তিনি নিন্দা করেছেন। ঠিক এখন যারা আন্দোলনে রয়েছে কারো ওপর সরকার আক্রমণ করল সেটি নয়, যেকোনো দলের ওপর আক্রমণ করলে তখন সবার প্রতিবাদ করা উচিত।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য হারুন অর রশীদ আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমরা বরাবরই বলে আসছি— দেশে এখন জাতীয় সংকট চলছে, এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যারা আজকে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য যারা লড়াই করতে চায়, তাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সে ক্ষেত্রে যারা চলমান কর্মসূচির ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ হবে তাদের আমরা স্বাগত জানাব। এটি শুধু বিএনপির নয়, জাতীয় আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়েছে। সুতরাং আজকে ইসলামী আন্দোলন প্রান্তিক দল এবং যারাই আন্দোলনে আসবে, আমি মনে করি এতে আন্দোলনকে আরও বেগবান করবে।’ এক ব্যানারে আন্দোলন হওয়ার প্রয়োজনীয়তা মনে করছেন কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এক ব্যানারে বা যুগপৎ আন্দোলনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। অভিন্ন আন্দোলন নিয়ে মাঠে থাকলেই বলা যায় এক ব্যানারেই। যুগপৎভাবে হচ্ছে একত্রিত হতে পারে। সময় এলে একত্রিত হয়ে এক ব্যানারেও হতে পারে।’