- ঢাকার বাইরে রোগী বাড়ছে প্রায় তিনগুণ হারে
- নভেম্বরে প্রতিদিন গড়ে মৃত্যু ১১ জন
- আক্রান্ত বেশি পুরুষমৃত্যু বেশি নারীর
আমাদের ডেঙ্গু ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি খুব বেশি কাজে আসছে না
—অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ, জনস্বাস্থ্যবিদ
দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েই চলছে। বছরের প্রথম দিকে ডেঙ্গু ঢাকায় ছড়িয়ে পড়লেও জুন-জুলাই মাসে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। দেশে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকে। গত আগস্টে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যু অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। আগস্ট মাসে ডেঙ্গু রোগী ঢাকার বাইরে কিছুসংখ্যক বাড়তে শুরু করলেও সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিদিন ঢাকার চেয়ে তিন থেকে চারগুণ হারে বাড়ছে। মৃত্যুও বাড়ছে ঢাকার বাইরের রোগীর। ঢাকার আশেপাশের জেলা থেকে ঢাকায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মৃত্যু হচ্ছে বেশি। তার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত চিকিৎসা না থাকা ও রোগী শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে আসাই মৃত্যুর প্রধান কারণ। বিগত বছরগুলোতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু বর্ষাকালে বেড়ে শীতকালে কমতে শুরু করলেও চলতি বছর শীত শুরু হলেও আক্রান্ত ও মৃত্যুসংখ্যা বেড়েই চলেছে। চলতি বছরের নভেম্বরের শুরু থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৩৯৭ জন; আর মৃত্যু হয়েছে ১১২ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৬৬ আর মৃত্যু হয় ছয়জনের। ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ১৬৬; মৃত্যু হয় তিনজনের। মার্চে আক্রান্ত ১১১ জন হলেও মৃত্যু ছিল শূন্য। এপ্রিল মাসে আক্রান্ত ১৪৩; মৃত্যু হয় দুজনের। মে মাসে আক্রান্ত এক হাজার ৩৬; মৃত্যু হয় দুজনের। জুন মাসে আক্রান্ত পাঁচ হাজার, মৃত্যু হয় ৩৪ জনের। জুলাইয়ে আক্রান্ত ৪৩ হাজার ৮৫৪; মৃত্যু হয় ২০৪ জনের। আগস্টে আক্রান্ত ৭১ হাজার ৯৭৬; মৃত্যু হয় ৩৪২ জনের। সেপ্টেম্বরে আক্রান্ত ৭৯ হাজার ৫৯৮, মৃত্যু হয় ৩৯৬ জনের। অক্টোবরে আক্রান্ত ৬৭ হাজার ৭৬৯, মৃত্যু হয় ৩৫৯ জনের।
দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের ৬০ শতাংশ পুরুষ ও ৪০ শতাংশ নারী। রোগটিতে পুরুষ বেশি আক্রান্ত হলেও মৃত্যু বেশি নারীর। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু এক হাজার ৪৬০ জনের মধ্যে ৮৩১ জন নারী এবং ৬২৯ জন পুরুষ। এ তথ্য শুধুমাত্র ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়া রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা। আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসা নেয়া রোগী রয়ে যাচ্ছেন হিসাবের বাইরে। সাম্প্রতিক সময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ঢাকার বাইরের রোগী যেন ঢাকায় স্থানান্তর না করা হয়। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ডেঙ্গু বিষয়ে যে গাইডলাইন দেয়া হয়েছে, তা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমার সংবাদের এ প্রতিবেদক কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের এখন দুটো বিষয় জানতে হবে। প্রথমটি হলো ডেঙ্গু ভাইরাস মানুষের মধ্যে কতটুকু আছে; অন্যটি হলো মশার মধ্যে কতটুকু ভাইরাস আছে। ডেঙ্গু ভাইরাস মানুষের শরীরে ১৫ থেকে ২০ দিন স্থায়ী হয়। এ সময়ে ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী কাউকে যদি মশা কামড়ায়, সে মশা যদি আবার অন্য কাউকে কামড়ায়, তাহলে কামড়ানো ব্যক্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবেন। বাহক যদি না থাকত, তাহলে ডেঙ্গু আক্রান্ত বাড়ত না। বাহক আছে বলেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বাড়ছে। আমাদের ডেঙ্গু ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি খুব বেশি একটা কাজে আসছে না।
কীটতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার। তার সঙ্গে কথা বলেন আমার সংবাদের এ প্রতিবেদক। তিনি বলেন, ডেঙ্গু আমাদের দেশে এখন সারা বছরই থাকবে। হয়তো কখনো বাড়বে, কখনো কমবে। বর্ষাকালে বেশি থাকবে আর শীতকালে কম থাকবে— এমনই হবে। স্থানীয় পর্যায়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ঢাকার আশেপাশের রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ঢাকা থেকে যেহেতু ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়েছে, তাই ডেঙ্গু বেশি ছড়িয়েছে ঢাকার আশেপাশের জেলায়।