তফসিল চূড়ান্ত করতে এখনো বৈঠক ডাকা হয়নি
—মো. জাহাংগীর আলম সচিব, নির্বাচন কমিশন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল কবে ঘোষিত হচ্ছে তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের কথাবার্তা ও নির্বাচন কমিশনারদের ভাষ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা হওয়ার কথা। সেই পূর্বাভাস যদি ঠিক থাকে তাহলে আজ-কালের মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হওয়ার কথা। গতকাল দুপুরে নির্বাচন কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম। তিনি নির্বাচন কমিশন নভেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার পূর্বাভাস দিয়েছেন, প্রথমার্ধ যেহেতু এখনো সামনে আছে (এখনো শেষ হয়ে যায়নি), অতএব অপেক্ষা করুন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার আগে কমিশন একটি বৈঠক করে। ওই বৈঠকের পর যেকোনো সময় তফসিল ঘোষণা দেয়া হয়, কিন্তু দ্বাদশ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা দেয়ার জন্য গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো সভা আহ্বান করা হয়নি।
নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আগে দেয়া বক্তব্য যদি ঠিক থাকে তাহলে নভেম্বরের প্রথমার্ধের বাকি আছে আজ মঙ্গলবার এবং আগামীকাল বুধবার। সেই অনুযায়ী আজ না হলেও আগামীকাল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে বলে মনে করছেন নির্বাচন-সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলমের সঙ্গে গতকাল সন্ধ্যায় কথা হয় আমার সংবাদের এই প্রতিবেদকের। প্রকৃতপক্ষে কবে বা কখন তফসিল হবে সে বিষয়ে তিনি আমার সংবাদকে নিশ্চিত করে কিছুই জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, তফসিলের বিষয়ে নির্ধারিত দিনক্ষণ বলা যাচ্ছে না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সাধারণত তফসিল ঘোষণা করার আগে কমিশন সভা হয়ে থাকে। ওই সভায় চূড়ান্তভাবে দিনক্ষণ ঠিক করা হয়। কিন্তু এখন (গতকাল সোমবার সন্ধ্যা) পর্যন্ত কমিশন কোনো সভায় মিলিত হয়নি। তিনি জানান, কমিশন সভা কবে হবে সেটিই এখনো জানি না। কমিশন সভা ডাকার বিষয়ে আমি এখনো আদেশপ্রাপ্ত হইনি। ইসি সচিবের এমন বক্তব্যে তফসিল প্রথমার্ধে নাও হতে পারে বলে মনে করছেন নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ। তবে সচিব মো. জাহাংগীর আলম এমন ধারণাও দিয়েছেন যে, কমিশন সভা ও তফসিল এক দিনেও হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে নভেম্বরের প্রথমার্ধে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা এখনো রয়েছে।
এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা ছাড়া তফসিল ঘোষণা দেয়া হলে কী ধরনের কর্মসূচি দেয়া হবে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী কোনো ধারণা না দিলেও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানিয়েছে দেয়া হয়েছে তারা নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করবে। অবশ্য সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত মা?র্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস কমিশনের সঙ্গে দেখা করার পর সিইসি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন চলমান সংকট নিরসনের দায়িত্ব ইসির নয়, রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেরাই দূরত্ব কমিয়ে সমঝোতায় আসতে হবে। অন্যদিকে যেকোনো সময় দ্বাদশ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার এই সময়ে এসেও বসে নেই পিটার হাস। তিনি বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচ?ন ইস্যুতে তিন?টি প্রধান রাজনৈ?তিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে চাচ্ছেন। গতকাল ঢাকার মা?র্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবে?লি এক বিবৃতিতে এমন আগ্রহের কথা জানানো হয়েছে। দলগুলো হলো— আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। গতকালের বিবৃতিতেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষকে পূর্বশর্ত ছাড়াই সংলাপে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানায়।
একই দিন (১৩ নভেম্বর) ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের সঙ্গে জাতীয় পার্টির বনানীর চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে একটি বৈঠকে মিলিত হন। ওই বৈঠক শেষে জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত তাদের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া-বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লু লিখিত একটি চিঠি নিয়ে এসেছেন। তিনি চিঠিটি আমাদের পার্টির চেয়ারম্যানকে হস্তান্তর করেছেন। চুন্নু বলেন, পিটার হাস জানিয়েছেন, একই চিঠি আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকেও দেয়া হয়েছে। জাপা মহাসচিব প্রাপ্ত চিঠির সারসংক্ষেপে বলেন, বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়।