- স্কুলে চলছে বার্ষিক পরীক্ষা ও সামষ্টিক মূল্যায়ন
- কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে সেমিস্টার ও ইয়ার ফাইনাল
- ৩০ নভেম্বরের মধ্যে শেষ হবে স্কুলের পরীক্ষা
- পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে কৌশলী ভূমিকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
অবরোধের মধ্যে পরীক্ষা বিষয়ে অভিভাবকদের ভীতি কেটে গেছে আশা করি ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে পারব
—রোকনুজ্জামান শেখ, সহকারী প্রধান শিক্ষক, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের চতুর্থ দফা অবরোধের শেষ দিন ছিল গতকাল। অবরোধ-হরতাল নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে ছিল অজানা আতঙ্ক। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) নির্দেশনায় নভেম্বরের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা ও সামষ্টিক মূল্যায়ন বাস্তবায়নের শঙ্কা ছিল। কিন্তু অভিভাবকদের সচেতনতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্ক অবস্থানে অবরোধে যান চলাচল ও জনজীবন অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থা ফিরছে। ফলে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বার্ষিক পরীক্ষা ও সামষ্টিক মূল্যায়ন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরীক্ষা শেষ করতে নিয়েছে কৌশলী ভূমিকা। মাউশির নির্দেশিত ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করার কথা জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে পারবেন বলে তারা আশাবাদী।
জানা যায়, নির্বাচন ও নতুন কারিকুলামের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য এ বছর ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এরই আলোকে গতকাল থেকে অনেক প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। রাজধানীর কয়েকটি স্কুল পরিদর্শনে জানা যায়, গেন্ডারিয়ার মনিজা রহমান গার্লস স্কুল, কসমোপলিটন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, স্বামীবাগের মিতালী বিদ্যাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়, রুকনপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ে তারা পরীক্ষা শুরু করতে পেরেছেন। পরীক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা হলে এসেছে। পরিস্থিতি এরকম থাকলে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করার কথা জানিয়েছেন তারা। কয়েকজন অভিভাবক এই প্রতিবদেককে নিজেদের শঙ্কার কথা জানালেও অধিকাংশই বলেছেন, এখন আর তারা আতঙ্কিত নন। এ মাসের মধ্যে তারা সন্তানদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হোক এটাই চান।
পরীক্ষা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা জানিয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক রোকনুজ্জামান শেখ আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের অভিভাবকদের মধ্যে অবরোধ নিয়ে ভীতি ছিল। এখন সে ভীতি অনেকেরই কেটে গেছে। আমরা গতকাল থেকে পরীক্ষা শুরু করেছি। নতুন কারিকুলামের সামষ্টিক মূল্যায়ন কয়েক দিন আগেই শুরু করেছি। শতভাগ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় উপস্থিত থাকছে। আমাদের বার্ষিক পরীক্ষা ২৭ নভেম্বর শেষ করার রুটিন রয়েছে। আর সামষ্টিক মূল্যায়ন ৩০ নভেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। পরিস্থিতি এরকম থাকলে আশা করি ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে পারব।’
একইভাবে দেশের অনেক কলেজে চলছে ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা। কয়েকবার তারিখ পেছানো হলেও পুনরায় গতকাল থেকে পরীক্ষা শুরু করেছে কলেজগুলো। ঢাকার সাত কলেজে চলছে অনার্স ও মাস্টার্সের ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, অবরোধে প্রথম থেকে শঙ্কায় থাকলেও বর্তমানে সেই শঙ্কা অনেকটাই কেটেছে। করোনার কারণে তাদের এক বছর লস হয়েছে। এখন আর কোনোভাবেই সময় ব্যয় করতে চাচ্ছেন না তারা। পরীক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়েছে কৌশলী ভূমিকা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই ক্লাসে অবরোধের কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে দূরের শিক্ষার্থী থাকা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম দিকে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও চলছে ক্লাস ও সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে। আর শুক্র ও শনিবার পরীক্ষা নিচ্ছে। মঙ্গলবার অবরোধ না থাকলে ওই দিনও পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে।
অবরোধে ক্লাস-পরীক্ষা নেয়ার কথা জানিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আশরাফুল আলম আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের বিভাগে গাজীপুর, নরসিংদী, কুমিল্লা থেকে নিয়মিত যাতায়াত করা অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে। সে জন্য অবরোধের শুরুতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করেনি। শিক্ষার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছি। আর অবরোধ না থাকলে শিক্ষার্থীরা সরাসরি ক্লাস করছে। সামনে তাদের সেমিস্টার ফাইনাল। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে আমরা শুক্র ও শনিবার সশরীরে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’