- ২০১৫-২০ সালের অডিটে দুর্নীতির প্রমাণ পায় গভর্নিং বডি
- আয়-ব্যয়ের প্রায় দুই কোটি ৮৫ লাখ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ
- শিক্ষক ফান্ডের এক লাখ ৯৮ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন মো. কাওছার আলী শেখ। তার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে সারা দেশ থেকে জাতীয়করণ আন্দোলনে জড়ো হন শিক্ষকরা। নিজস্ব খরচে দীর্ঘ ২১ দিনের মতো আন্দোলনে ছিলেন শিক্ষকরা। নানা অপমান, হামলা, ভয়ভীতি সত্ত্বেও শিক্ষকরা নিজেদের অধিকার আদায়ে রাজপথে সরব ছিলেন। সেই আন্দোলনের সবার পরিচিত মুখ ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শেখ কাওছার আলী শেখ। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে সম্প্রতি তাকে সবুজ বিদ্যাপীঠ স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছেন গভর্নিং বডির সভাপতি। তবে তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এ শিক্ষক নেতা। নিজেকে ষড়যন্ত্রের শিকার বলে দাবি করে তিনি বলেন, নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্য আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে। জাতীয়করণ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র চলছে।
গভর্নিং বডির সভাপতি আবুল কালাম অনু স্বাক্ষরিত সাময়িক বরখাস্তের আদেশে বলা হয়েছে, মো. কাওছার আলী শেখ (ইনডেক্স নং-৪৮০৯) ৩১ মে ২০১২ থেকে সবুজ বিদ্যাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপিত হলে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ম্যানেজিং কমিটির ১০ নং আলোচ্যসূচিতে প্রতিষ্ঠানের অডিট সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়। এ লক্ষ্য ২০১৫-২০ সাল পর্যন্ত সময়ের তথ্য উপাত্ত চাইলে অডিট দলকে তিনি কোন তথ্য উপাত্ত ও সহযোগিতা করেননি। ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের অডিট করা দলটি আয়ের খাতের এক কোটি ৪২ লাখ সাত হাজার ৪৮৯ টাকা ও ব্যয় খাতের এক কোটি ৪৩ লাখ ৪৭ হাজার ২৫০ টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পায়। এ ছাড়া এমপিও নাম করে শিক্ষকদের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ ও ২০২০ সালের শিক্ষকদের প্রভিডেন্ড ফান্ডের এক লাখ ৯৮ হাজার টাকা আত্মসাতের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এ ব্যাপারে দুবার কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হলেও তিনি সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এমতাবস্থায়, আর্থিক দুর্নীতি, জাল সনদের মাধ্যমে নিজ আত্মীয়কে নিয়োগ প্রদান, এমপিওভুক্তির আশ্বাস দিয়ে টাকা আদায়, নারী শিক্ষিকাদের নিপীড়নসহ প্রতিষ্ঠানের কাজে সময় না দিয়ে জমি ব্যবসায় নিজেকে ব্যস্ত রাখার মাধ্যমে দায়িত্বে অবহেলার কারণে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষকদের চাকরির শর্ত বিধিমালা-১৯৭৯ অনুযায়ী কাউসার আলী শেখকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। অনতি বিলম্বে প্রতিষ্ঠানের টাকা ফান্ডে জমা করার নির্দেশ দেয়া হলো। অন্যথায় বিধি অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে মো. কাওসার আলী শেখ আমার সংবাদকে বলেন, আন্দোলন, সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে একটি শ্রেণি পরিকল্পিতভাবে আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ এনেছে। আমার কাছে সব অভিযোগের জবাব আছে। একটি সিএ ফার্ম অডিটের নামে গভর্নিং বডির সভাপতি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। অথচ এর আগেই চার দফা অডিট করা হয়েছে। সেই অডিটের কপিও আমার কাছে আছে। সর্বশেষ এ বছরের মে মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদের অডিট করেছে। তখনো দুর্নীতির কোনো তথ্য পায়নি।
হঠাৎ করে গভর্নিং বডির সভাপতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অভিযোগ আনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, গভর্নিং বডি চার ধরনের অডিটে কোনো ধরনের দুর্নীতির তথ্য পায়নি। সব কিছুই ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু গভর্নিং বডির সভাপতি এসএসসির রেজিস্ট্রেশন ফর্ম পূরণে নির্ধারিত ফির তুলনায় তিনি ছয় হাজার টাকা বেশি নিয়েছেন। সরকার নির্ধারিত ফি ছিল দুই হাজার ১৪০ টাকা। তিনি নিয়েছেন আট হাজার ১৪০ টাকা করে। অভিভাবকরা ভয়ে কিছু বলতে পারেননি। আমাদের নির্দিষ্ট কেরানীর পরিবর্তে তিনি নিজের দুই জামাইয়ের মাধ্যমে অভিভাবকদের থেকে এ টাকা নেন। এ টাকা নেয়ার কোনো রশিদ তিনি অভিভাবক বা শিক্ষার্থীদের দেননি। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে স্কুলের অর্থ আত্মসাতের অনেক অভিযোগ রয়েছে। এসবে বাধা দেয়ার কারণে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক নাটক সাজানো হয়েছে।
সবুজ বিদ্যাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবুল কালাম অনু আমার সংবাদকে বলেন, এখানে ষড়যন্ত্র বা ফাঁসানোর কোনো সুযোগ নেই। ম্যানেজিং কমিটিতে সর্বসম্মতিক্রমে অডিটের সিদ্ধান্ত হয়। অডিট কারা করবে, সেটিও সেখানে সিদ্ধান্ত হয়। অডিট হয়েছে, তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ফলে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।