- থাকতে হবে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে দক্ষতা উচ্চশিক্ষা ও করোনাকালীন ভূমিকা
- বাদ পড়ার শঙ্কায় পুরোনো এমপিদের অনেক পরিবার থেকে একাধিক প্রার্থী এমন আসন প্রায় ১৫টি
- চার বিভাগের মনোনয়ন আগেই চূড়ান্ত কৌশলগত কারণে প্রকাশ করা হয়নি
গতকালের সভায়ও কিছু পুরোনো প্রার্থী বাদ পড়েছেন, নতুনরাও মনোনয়ন পেয়েছেন
—ওবায়দুল কাদের, সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ৩০০ আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এ পর্যন্ত চারটি বিভাগে মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে দলটি। আজ শনিবার ও আগামীকাল রোববারের মধ্যেই প্রার্থী ঘোষণা করবে দলটি। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে এবার তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে দক্ষ, উচ্চ শিক্ষিত ও করোনাকালীন ভূমিকা। এ কারণে বাদও পড়েছেন বর্তমান অনেক এমপি। একই পরিবারের দুই বা ততোধিক সদস্যের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের মূলেও রয়েছে তিন ক্যাটাগরিতে বাদ পড়ার শঙ্কা। এমন আসনের সংখ্যা প্রায় ১৫টি। আওয়ামী লীগের নির্বাচনি মনোনয়ন বোর্ডের দুই সদস্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে এক-এগারোর ভূমিকা বিবেচনা করা হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, আজ শনিবার সম্ভব না হলে আগামীকাল রোববার দলীয়ভাবে ৩০০ আসনেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। গতকাল শুক্রবার তিনি বলেন, আজকের সভায়ও কিছু পুরোনো প্রার্থী বাদ পড়েছেন, নতুনরাও মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে কৌশলগত কারণে কোন কোন বিভাগের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে তা আর প্রকাশ করা হচ্ছে না। একসাথে ৩০০ আসনের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। দুদিন অপেক্ষা করুন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এখন দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার পথ বেছে নিয়েছে। তারা এখন চোরাগোপ্তা হামলা, নাশকতা চালাচ্ছে, গাড়ি ভাঙচুর— এসব অপকর্ম করছে। জনগণ নির্বাচনমুখী হয়েছে এটি সরকারের সাফল্য। এসব চোরাগোপ্তা হামলা করে নির্বাচন পণ্ড করা সম্ভব নয়। নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে হবে। বিএনপির আরও কঠোর কর্মসূচি নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি যা যা করেছে এর চেয়ে কঠোর কর্মসূচি পৃথিবীতে দৃষ্টান্ত আর নেই। আগুন দিয়ে বাস পোড়ানো, পার্কিং করা গাড়িতে ঘুমন্ত চালককে মারা, হরতাল, অবরোধ- ২০১৩-১৪ সালের পুনরাবৃত্তি। নাশকতার চেয়ে আর কি কঠোর কর্মসূচি আছে? ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এক কথায় উড়িয়ে দেয়া যায় না। বিএনপির এখনো সুযোগ আছে। বিএনপি জোটগতভাবে না এলেও বিএনপির ভেতরের অনেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত ছবিটা কোথায় যায় দেখা যাক। নির্বাচন নিয়ে বহিঃশক্তির মন্তব্যকে স্বাগত জানাচ্ছি না উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে আমাদের মনোযোগ। আমাদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৃহৎশক্তির দেশগুলোর মন্তব্যে আমরা শরিক হতে চাই না। মনোনয়নে বাদ পড়ার কারণ সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা উইনঅ্যাবল, ইলেক্টঅ্যাবল না, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অনেকেই হারিয়ে ফেলেছেন। নারী-পুরুষ সব প্রার্থীর ক্ষেত্রেই মনোনয়নে এটি প্রযোজ্য।
ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের মনোনয়ন প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কত নায়ক-নায়িকা এমপি। তারা তো সরাসরি দল করে না। ভারতের মতো বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশেও আছে। আর সাকিব আল হাসান রাজনীতি করবে, জনগণের সেবা করবে। বাংলাদেশের যেকোনো জায়গায় সে দাঁড়াতে পারে।
এদিকে তিন ক্যাটাগরিতে মনোনয়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন ঢাকা-১৭ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাতও (মোহাম্মদ এ আরাফাত)। তিনি বর্তমানে এই আসনের সংসদ সদস্য। রাজনৈতিক ক্যারিয়ার না থাকলেও উল্লিখিত তিন ক্যাটাগরির পাশাপাশি ক্রীড়াঙ্গনে ব্যাপক জনপ্রিয় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। তিনি ঢাকা-১০ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে জানা গেছে। ধানমন্ডি-নিউমার্কেট-কলাবাগান-হাজারীবাগ থানার সমন্বয়ে গঠিত এই আসনটি। বর্তমানে এই আসনে সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১০ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। পরে তিনি সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হন।
আগামী নির্বাচনে ঢাকা-১০, মাগুরা-১ ও মাগুরা-২ আসন থেকে আ.লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। এবার তিনি দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। ঢাকা-১৪ আসনে আ.লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী কাজী ফরিদুল হক হ্যাপি উল্লিখিত তিন ক্যাটাগরিতে এগিয়ে রয়েছেন। উচ্চ শিক্ষিত হ্যাপি করোনাকালে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন।
‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’ এই বার্তা নিয়ে লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষদের জন্য চালু করেছিলেন ‘মানবতার ডাকঘর’। সেই ডাকঘরের সন্ধান পেতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয় একটি মোবাইল ফোন নম্বর। ফোন করে অসহায় কোনো মানুষ তাদের সমস্যার কথা জানালেই তার ঘরে পৌঁছে দেয়া হয়েছিল প্রয়োজনীয় খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য অনুষঙ্গ। এমনকি কাজী ফরিদুল হক হ্যাপি রাতের বেলাও অনেকটা গোপনে মানুষের ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলেন প্রয়োজনীয় সামগ্রী। যা দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছিল।
এদিকে তিন ক্যাটাগরিতে বাদ পড়ার শঙ্কায় বেশ কয়েকটি জায়গায় বাবা-ছেলে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চাঁদপুর-২ (মতলব দক্ষিণ-মতলব উত্তর) আসন থেকে আ.লীগের নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (মায়া) ও তার বড় ছেলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আ.লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য সাজেদুল হোসেন চৌধুরী (দিপু)।
একই পরিবারের সবচেয়ে বেশি সদস্যের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের ঘটনা ঘটেছে ঠাকুরগাঁও-২ (বালিয়াডাঙ্গী-হরিপুর) ও পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনে। ঠাকুরগাঁয়ে দলীয় মনোনয়নের জন্য জেলা আ.লীগের সভাপতি দবিরুল ইসলাম, তার ছেলে, মেজো ভাই, ভাতিজাসহ চারজন আ.লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। দবিরুলের বড় ছেলে ও জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মাজহারুল ইসলাম সুজন, এ নেতার মেজো ভাই উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী এবং ভাতিজা বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আসলাম জুয়েলও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
পাবনা-৪ আসনে দলীয় মনোনয়নের জন্য প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর দুই ছেলে ও মেয়ে, জামাতাসহ চারজন আ.লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। পরিবারের বড় মেয়ে মাহজেবিন শিরিন পিয়া, দুই ছেলে গালিবুর রহমান শরীফ, সাকিবুর রহমান শরীফ, জামাতা আবুল কালাম আজাদ মিন্টু আ.লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দেন।
কক্সবাজার-৩ (সদর, রামু ও ঈদগাঁও) আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে আ.লীগের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তিন সহোদর। তারা হলেন— আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, তার বড় ভাই ও রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল এবং তাদের ছোট বোন জেলা আ.লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী।
কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসন থেকে নৌকার প্রার্থী হতে আ.লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র কেনে প্রয়াত সংসদ সদস্য (এমপি) আফাজ উদ্দীন আহমেদের তিন ছেলে। নৌকার প্রার্থী হতে চাওয়া তিন ভাই হলেন আফাজ উদ্দীন আহমেদের বড় ছেলে নাজমুল হুদা পটল বিশ্বাস, মেজো ছেলে আরিফ আহমেদ বিশ্বাস ও ছোট ছেলে দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ মামুন বিশ্বাস। য
শোর-২ (ঝিকরগাছা ও চৌগাছা) আসন থেকে নৌকার প্রার্থী হতে আ.লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র কেনেন বাবা ও ছেলে। বাবা-ছেলে হলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী রফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে যশোর জেলা আ.লীগের সদস্য মোস্তফা আশিষ ইসলাম।
একই ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-তিতাস) আসনের বেলায়ও। এখান থেকে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভূঁইয়া ও তার ছেলে দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সুমন। জাসদের এক সময়ের আধ্যাত্মিক নেতা প্রয়াত কর্নেল তাহেরের এক ছোট ভাইয়ের আসনে এবার মনোনয়ন চেয়েছেন আরেক ছোট ভাই।
নেত্রকোনা-৫ আসনের (পূর্বধলা উপজেলা) জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য তার ছোট ভাই ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল। আবার এমন ঘটনাও আছে যে, নিজের আসনে ছেলে মনোনয়ন পাইয়ে দিতে বাবা নিজেই দলীয় কার্যালয়ে ছেলের সঙ্গে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মঙ্গলবার ছেলে মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিমের মনোনয়নপত্র জমা দিতে আ.লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজী সেলিম। তিন ক্যাটাগরিতে এগিয়ে আছেন বলে দাবি সোলায়মান সেলিমের।