- আক্রান্ত নেমে এসেছে হাজারের নিচে
- তিন মাস পর আক্রান্ত ও মৃত্যু নিম্নমুখী
- দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়ার এখনই সময় —বলছেন বিশেষজ্ঞরা
শীতে ডেঙ্গু কমবে, বর্ষায় বাড়বে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে
—অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার, কীটতত্ত্ববিদ
চলতি বছর দেশে ডেঙ্গুতে রেকর্ড সংখ্যক আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হলেও নভেম্বর মাসে মৃদু শীত নামলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু কমে আসত। কিন্তু চলতি বছর নভেম্বরের প্রথম ১৫ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু বেড়েই চলছিল। নভেম্বর মাসের শেষ ১৫ দিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু কমে এসেছে। দৈনিক এক হাজারের বেশি আক্রান্তের সংখ্যা কমে নেমে এসেছে কয়েকশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে শীত শুরু হওয়ায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু কমছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো সবশেষ তথ্য বলছে, চলতি বছর নভেম্বর মাসের শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৩৮ হাজার ৮৭১ জন ও মৃত্যু ২৬২ জন। অক্টোবর মাসে আক্রান্ত ছিল ৬৭ হাজার ৭৫৯ জন ও মৃত্যু ৩৫৯ জন। চলতি বছর মার্চ মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিল বছরের সবচেয়ে কম। মার্চ মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিল ১১১ জন এবং মৃত্যু ছিল শূন্য। চলতি বছর সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু ছিল সেপ্টেম্বর মাসে। সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুতে ৭৯ হাজার ৫৯৮ জন আক্রান্ত ও ৩৯৬ জনের মৃত্যু হয়। ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বছরের শুরুতে শুরু হলেও ঢাকার বাইরে আগস্ট মাসে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। আক্রান্ত সংখ্যা ঢাকার বাইরে বেশি হলেও মৃত্যু হয়েছে ঢাকায় বেশি। চলতি বছর ডেঙ্গুতে ঢাকায় মৃত্যু ৯৩১ জন এবং ঢাকার বাইরে মৃত্যু ৬৭৯ জন। ডেঙ্গুতে দেশে আক্রান্ত হওয়া ৫৯ দশমিক ৯ শতাংশ পুরুষ ও ৪০ দশমিক ১ শতাংশ নারী। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত সংখ্যায় পুরুষ বেশি হলেও মৃত্যু বেশি হয়েছে নারীর। চলতি বছর নারীর মৃত্যু হয়েছে ৯২০ জন এবং পুরুষের মৃত্যু হয়েছে ৬৯০ জন। এ তথ্য শুধুমাত্র ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়া রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা। আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসা নেয়া রোগী রয়ে গেছেন হিসাবের বাইরে।
দেশে ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমার সংবাদের এ প্রতিবেদক কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদের সাথে। তিনি বলেন, ডেঙ্গু কমে আসছে এটা সত্য। কিন্তু এতে স্বস্তি নিয়ে বসে থাকা যাবে না। গবেষণার মাধ্যমে ডেঙ্গুর ধরনগুলো চিহ্নিত করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ না হলে ডেঙ্গু নিয়ে আমাদের আরও ভুগতে হবে।
কীটতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার। তার সাথে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন আমার সংবাদের এ প্রতিবেদক। তিনি বলেন, ডেঙ্গু আমাদের দেশে এখন সারা বছরই থাকবে, হয়ত কখনও বাড়বে কখনও কমবে। বর্ষাকালে বেশি থাকবে শীতকালে কম থাকবে এমনই হবে। স্থানীয় পর্যায়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কীটতত্ত্ববিদদের নিয়ে পরিকল্পনা সাজাতে হবে।