- ২০২৩ এইচএসসিতে পাস সাড়ে ১০ লাখের বেশি
- পাস করা ৩০ শতাংশ এইচএসসির গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ
- বিগত বছরের শিক্ষার্থী ভর্তি হয় এক থেকে দেড় লাখ
- আসন ১৩ লাখের বেশি
একক ভর্তি পরীক্ষা শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন কমে আসবে
—ড. হাসিনা খান, সদস্য, ইউজিসিবিশ্ববিদ্যালয়ের আসন না বাড়িয়ে মান তৈরি করতে হবে
—ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাবি
২০২৩ সালে এইচএসসিতে পাস করেছে সাড়ে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। প্রতি বছরই এমন সংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পার হন। তাদের মধ্যে অনার্সে প্রতি বছর যায় ৩০ শতাংশের মতো শিক্ষার্থী। অথচ দেশে উচ্চশিক্ষায় আসন রয়েছে ১৩ লাখের বেশি। অর্থাৎ প্রতি বছর উচ্চশিক্ষার কয়েক লাখ আসন ফাঁকা থাকে। এই পরিমাণ আসন রাখার কোনো কারণ জানাতে পারেনি ইউজিসি। তবে ইউজিসি আশা করছে আগামীতে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়বে। আর একক ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু হলে প্রতি বিভাগে সর্বোচ্চ ৪০ শিক্ষার্থী থাকবে। ফলে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমবে। শিক্ষাবিদরা বলেন, আসন না বাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান তৈরিতে মনোযোগ দেয়া উচিত।
জানা যায়, বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৭০ হাজার, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই লাখ তিন হাজার ৬৭৫, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আট লাখ ৭২ হাজার ৮১৫, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০ হাজার, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৭ হাজার ৭৫৬, দুটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৪০, মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ১০ হাজার ৫০০, ঢাবি সাত কলেজে ২৩ হাজার ৩৩০, চার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে সাত হাজার ২০৬টি, টেক্সটাইল কলেজে ৭২০, সরকারি ও বেসরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি পাঁচ হাজার ৬০০, ১৪টি মেরিন অ্যান্ড অ্যারোনটিক্যাল কলেজে ৬৫৪, ঢাবি ও রাবির অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানে তিন হাজার ৫০০ এবং চবি অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ২৯০টি আসন। মোট আসন আছে ১৩ লাখ ২৬ হাজার ৪৮৬টি।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৯ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছিল ৯ লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ শিক্ষার্থী। ওই বছর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও স্নাতক কলেজসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিল সাত লাখ ৮২ হাজার ৬১৬ জন। এদের মধ্যে অন্তত এক লাখ শিক্ষার্থী আগের বছর এইচএসসি পাস করা। অন্যদিকে ২০১৯ সালে বিভিন্ন ধরনের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসন ছিল ৯ লাখ ২৬ হাজার ৬১টি। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যার চেয়েও এক হাজার ৪১৩ জন বেশি ভর্তি করা হয়েছিল। এরপরও দুই লাখ ২৬ হাজার ৫৫৪টি আসন খালি ছিল। একক ভর্তি পরীক্ষা শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন কমার কথা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. হাসিনা খান আমার সংবাদকে বলেন, এ বছর কম পাস করায় আসন খালি রয়েছে। আগামীতে শিক্ষার্থী বাড়লে বা পাস বেশি করলে এতো আসন খালি থাকবে না। আর একক ভর্তি পরীক্ষার আইন হলে প্রতি বিভাগে সর্বোচ্চ ৪০ জন শিক্ষার্থী থাকবে। তখন আসন কিছু কমে আসবে। নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের কারণে আসন বাড়ছে কী না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কিছু বলেননি। ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন কেটে দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একই মানের তৈরি করতে হবে। এর জন্য শিক্ষক ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান বাড়ানোর জন্য যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নতি দরকার। তাহলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যেতে পারবে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ফাঁকা থাকে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগে আসন সংখ্যা শতাধিকও দেখা যায়। একটা ক্লাসে এতো শিক্ষার্থী থাকলে শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ কীভাবে গড়ে উঠবে? জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন নতুন নতুন বিষয় শেখানোর জন্য কলেজের অনুমোদন দেয়। কিন্তু সব বিভাগে হয়তো পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী পায় না। এর কারণ হলো, এইচএসসি শেষে অনেক শিক্ষার্থী দেশের বাইরে চলে যায় বা কর্মে যুক্ত হয়। এ শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী করার জন্য তাদের বিকল্প চিন্তা করা প্রয়োজন।