‘ভোটযুদ্ধ নয় শবযাত্রা!’

আবদুর রহিম প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩, ১১:৪৯ পিএম
‘ভোটযুদ্ধ নয় শবযাত্রা!’

দেশের ৮০ শতাংশ মানুষের ভোটে আগ্রহ নেই
—নিতাই রায় চৌধুরী ভাইস চেয়ারম্যান বিএনপি  

বিএনপি ছাড়া এই নির্বাচন কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না
—ড. বদিউল আলম মজুমদার
সম্পাদক, সুজন

জনগণ আ.লীগের অধীনে নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে যাবে না
—মাওলানা ইউনুছ আহমাদ
মহাসচিব, ইসলামী আন্দোলন

বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রতীক। ভোটযুদ্ধে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ একাংশ। নেই বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দলসহ অন্তত ৬৪টি দল। বিএনপিবিহীন ভোটযুদ্ধকে ‘শবযাত্রা’ বলে মন্তব্য করেছেন সরকারবিরোধীরা। তারা বলছেন, দেশের ৮০ শতাংশ লোক দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ নির্বাচনকে তামাশা মনে করছে। নিজেরাই প্রার্থী নিজেরাই আবার ডামি। কে কোন আসনে জিতে আসবে তা গত ১৭ তারিখ চূড়ান্ত হয়ে গেছে। আগামী সাত জানুয়ারি শুধু নাটকের শেষাংশ বাকি। এ জন্য তারা দেশের নাগরিকদের ভোটকেন্দ্রে না যেতে উদাত্ত আহ্বান জানান। 

আবার সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, দেশের উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ছাড়া কখনো  অংশগ্রহণ, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও গ্রহণযোগ্য ভোট হতে পারে না। বিএনপিকে বাইরে রেখে যে ভোট হচ্ছে তার জন্য অনেক অশনি সঙ্কেত অপেক্ষা করছে। অনেক বিপদ সামাল দেয়া কঠিন হয়ে যাবে। সমপ্রতি বিএনপির অনুপস্থিত অনুভব করে স্বয়ং প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালও বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে ভালো হতো, সেটি সবাই অনুভব করেছে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, দেশে সহিংসতা আটকাতে পরিকল্পিতভাবেই বিএনপি নেতাকর্মীদের জেলে রাখা হয়েছে। তারা যদি ভোটে আসতে রাজি হতেন, এক রাতেই বিএনপির সব নেতাকর্মীকে মুক্তি দেয়া হতো। এ  মন্তব্যের এক দিন পর জোর দিয়ে এও বলেছেন, তিনি সামান্যতম ভুলও বলেননি। যা বলেছেন সত্যে বলেছেন। এ নিয়ে পাল্টা জবাব দিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য প্রমাণ করে, সহিংসতা-মামলা-গ্রেপ্তার সব কিছু পূর্বপরিকল্পিত। 

বিএনপি ছাড়াই ক্ষমতাসীন দলের আনুষ্ঠানিক ভোট যাত্রা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, ‘দেশের ৮০ শতাংশ লোক জানে আওয়ামী লীগের অধীনে যে নির্বাচন হচ্ছে এটি হচ্ছে তামাশার নির্বাচন। এ নির্বাচন দেশের মানুষের কাছে কৌতুকে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের কার্যালয় ও গণভবন থেকে গত পরশু চূড়ান্ত হয়ে গেছে কে কোন আসনে জিতবে। এখন শুধু একটি নাটকীয় ঘোষণা বাকি মাত্র। শুধু দেশের মানুষের কাছে নয়, সারাবিশ্ব জানে আওয়ামী লীগ আবারও একটি পাতানো নির্বাচনের আয়োজন করছে। যে ভোটে জনগণের কোনো আগ্রহ নেই। ভোট মানেই মানুষের মধ্যে পছন্দের প্রার্থীকে বাচাইয়ে একটি উচ্ছ্বাসের বিষয় থাকে। এবার দেশের ৮০ শতাংশ মানুষের কাছে ভোট নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। আওয়ামী লীগই প্রার্থী আবার তারাই ডামি। জনগণের কাছে বিষয়গুলো স্পষ্ট। আমি বলব, এটি কোনো ভোটযুদ্ধ বা ভোটযাত্রা নয়— এটি হচ্ছে গণতন্ত্রের শবযাত্রা।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার আমার সংবাদকে বলেন, ‘কতগুলো নিবন্ধিত দল ভোটে গেছে আর কতগুলো দল জোটগতভাবে ভোটে যায়নি এটিতে খুব বড় কিছু আসে-যায় না। নির্বাচন হলো অধিক সংখ্যা থেকে জনগণ পছন্দের ব্যক্তিকে বেছে নেয়া। অর্থাৎ ভালো থেকে ভালো বিকল্প হিসেবে বেছে নেয়া। বাংলাদেশে নির্বাচনি অঙ্গনে দুটো ব্র্যান্ড দুটো দল তা হলো— আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এর একটি যদি নির্বাচনে না থাকে ওই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পায় না, পেতে পারে না। আন্তর্জাতিকভাবেও তা গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠিতে পড়ে না। তাই কতগুলো নিবন্ধিত বা নামকাওয়াস্তে রয়েছে এগুলো নির্বাচনে আসলো নাকি না এলো তাতে কিছু আসে যায় না। প্রধান দুটো দলের কেউ একটি না আসলে নির্বাচন কখনোই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে না। সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্যও হবে না। বিএনপি ছাড়া এই নির্বাচন কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না। এই ভোট উৎসব নিয়েও কোনো আগ্রহ থাকবে না মানুষের কাছে। আমাদের জন্য অনেক অশনি সংকেত অপেক্ষা করছে। আরেকটি লোকদেখানো সাজানো নির্বাচনের বিপর্যয় বাংলাদেশ সামাল দিতে পারবে না। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে সর্বজনীন মানধিকারের ঘোষণায় যথার্থ নির্বাচনের কথা বলা আছে। আমরা পছন্দ করি আর না করি, বাংলাদেশে প্রধান দুটি দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। এর একটিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হতে পারে না। ভোটাররা যদি শতভাগও আসেন, কিন্তু তাদের সামনে যদি বিকল্প না থাকে; তাহলে নির্বাচন হয় কীভাবে?’ 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ আমার সংবাদকে বলেছেন, ‘প্রহসনের নির্বাচনে ভোটদানে বিরত থাকতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাই। সরকার নির্বাচনের নামে নাটক শুরু করেছে। বিরোধী দলগুলোকে বাইরে রেখে খালি মাঠে গোল দিতে সরকার তামাশার নির্বাচনের আয়োজন করছে। জনগণ এই নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘সরকার উন্নয়নের জিগির তুলে দুর্নীতি সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছে।’