- চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ইনু মেনন মঞ্জু
- ছাড় দেয়া ৩২ আসনের অধিকাংশই অনিশ্চয়তায়
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ রাজপথের বিরোধী দলগুলো ভোটে না থাকায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাদের রাজনৈতিক মিত্র জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোট শরিকের মধ্যে আসন সমঝোতা করে ভোটের মাঠে রয়েছে। জাতীয় পার্টির সঙ্গে রাজনৈতিক মিত্রতা ও ১৪ দলীয় জোট শরিকদের সঙ্গে আদর্শিক সম্পর্কের অংশ কারণে শেষ সময়ে এসে আসন সমঝোতা করেছে আওয়ামী লীগ। এই সমঝোতার অংশ হিসেবে চারটি দলকে ৩২টি আসন ছেড়ে দেয় ক্ষমতাসীন দলটি। কিন্তু আসন সমঝোতা করে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের মাঠ থেকে উঠিয়ে নিলেও স্বস্তিতে নেই ক্ষমতাসীন দলের মিত্ররা। তারা মাঠে দুই ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন। আওয়ামী লীগের ছাড় দেয়া আসনগুলোর মধ্যে অধিকাংশই অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এবার আওয়ামী লীগের জাতীয় পার্টির জন্য ২৬টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির জন্য দুটি, জাসদের জন্য তিনটি এবং জাতীয় পার্টি জেপির জন্য একটি আসন ছেড়ে দেয়। আওয়ামী লীগের এই মিত্র চার দলের ৩২ প্রার্থী মাঠে নৌকা বা ধানের শীষ প্রতীকের মোকাবিলা করতে না হলেও যে দুটি চ্যালেঞ্জে পড়ছেন, তার মধ্যে প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে— আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী যারা সাবেক এমপি ও স্থায়ীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা তারা জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের ভোটের মাঠে বিনাচ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেবে না। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন আসনে জাতীয় পার্টির সাবেক জনপ্রিয় নেতা ও এমপি রয়েছে তারা এবারও প্রার্থী হয়েছেন। তারাও ভোটের মাঠে যথেষ্ট শক্তিশালী। ফলে জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ এবং জেপির জন্য আওয়ামী লীগ আসন ছাড়লেও মাঠ থাকা প্রার্থীরা তাদের ছাড় দিচ্ছেন না। ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির শক্তিশালী প্রার্থীদের মোকাবিলা করেই জয়ী হতে হবে তাদেরকে।
কোনো কোনো প্রার্থী মাঠে কঠিন চ্যালেঞ্জর মুখে পড়বেন। যেমন— পিরোজপুর-২ আসনটি ১৪ দলের শরিক জাতীয় পার্টির (জেপি) জন্য ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। কিন্তু তার জন্য জয় সহজ হচ্ছে না। মাঠে নৌকা প্রতীকের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে ধানের শীষ, এবার নির্বাচনে ধানের শীষ ভোটে নেই। কিন্তু এরপরও ১৪ দলের অন্যতম শীর্ষ এ নেতা নৌকা প্রতীক নিয়েও স্বস্তিতে নেই। কারণ, এখানে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মহিউদ্দিন মহারাজ নির্বাচন করছেন। ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন মহারাজ এলাকাবাসীর কাছে খুবই জনপ্রিয়। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারমান। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালে তিনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। সব সময় এলাকায় থাকার কারণে তিনি সাধারণ মানুষের কাছে খুবই আস্থাভাজন। তা ছাড়া সর্বশেষ অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে জাননি। দলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীও হননি। ফলে কেন্দ্রীয় সংগঠন ও স্থায়ী আওয়ামী লীগ তার পক্ষে রয়েছে। ফলে এ আসনে জয়ী হওয়া আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জন্য সহজ হবে না। এই দুজনের মধ্যে তীব্র লড়াই হবে বলে স্থায়ী সূত্রগুলো জানিয়েছে।
পিরোজপুর-৩ আসনটি রুস্তম আলী ফরাজীর আসন। তিনি এ আসন থেকে একাধিকবার নির্বাচিত হয়েছেন। দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পরও তিনি জনগণের সমর্থন থেকে বঞ্চিত হননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও নির্বাচিত হওয়ার ইতিহাস রয়েছে তা। এবারও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী। এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয় এই জনপ্রতিনিধিকে হারাতে হবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাশরেকুল আজমকে। এ আসন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুর রহমান। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের আলোকে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাশরেকুল আজম এ আসনের বর্তমান এবং রুস্তম আলী ফরাজীর কাছ থেকে আসনটি ছিনিয়ে আনা সহজ হবে বলে মনে করেন না স্থায়ীরা। অনেকেই মনে করেন, ফরাজীর কাছ থেকে লাঙলের প্রার্থী আসন ছিনিয়ে আনার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
একইভাবে ঢাকা-১৮ আসনে জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরকে বিনাচ্যালেঞ্জে ছাড়ছেন না ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. খসরু চৌধুরী। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এ আসনে খসরু খুবই শক্ত প্রার্থী। দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকার সাথে তার নিবিড় সম্পর্ক। স্থানীয়দের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা ছাড়া ভোটের মাঠে আসা শেরিফা কতটা ভালো করতে পারবেন তা এখনই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
এভাবেই বরিশাল-২ আসনে জোট প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন নৌকা প্রতীকে ভোটের মাঠে থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম মনি (ঢেঁকি প্রতীক) তাকে খালি মাঠে গোল দিতে দিচ্ছেন না। কুষ্টিয়া-২ আসনে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু নৌকা প্রতীকে মাঠে থাকছেন, তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মাঠে রয়েছেন মিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল আরেফিন। তিনি ট্রাক নিয়ে মাঠে লড়ছেন। সাতক্ষীরা-২ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. আশরাফুজ্জামান। এই আসনের আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ ববি।
এ ছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এনছান বাহার বুলবুল মাঠে রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। নীলফামারী-৩ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী রানা মোহাম্মদ সোহেল। এখানে জাপার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী ফারুক কাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। মানিকগঞ্জ-১ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জহিরুল আলম রুবেলকে আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সালাউদ্দিন মাহমুদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।