- ভোটে থাকা অন্য দলগুলোর প্রচার দৃষ্টিতে আসছে না
- নৌকা প্রতীকের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী
রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি; অন্যতম বিরোধী জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের মিত্র দলগুলো নির্বাচনে না আসায় আওয়ামী লীগকে ভোটের মাঠে চ্যালেঞ্জ করার মতো বিকল্প কোনো দলের প্রার্থী নেই বলে মনে করেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। ফলে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যে সহজ জয় পেতে যাচ্ছে, তা আন্দাজ করতে পারছেন বিশ্লেষকরা। অবশ্য আওয়ামী লীগের জন্য এখন মাঠে যেটুকু চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে, তা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্যই হয়েছে। আর এর একটি বিশেষ কারণও রয়েছে। সেটি হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অনেকেই আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। তাদের মধ্যে অনেকে আবার বর্তমান সংসদ সদস্যও। কেউ কেউ সংসদ সদস্য না হলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বা জেলা পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে অনেকে আবার এলাকায় বিপুল জনপ্রিয়। ফলে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য যেসব দল ভোটের মাঠে রয়েছে, তারা আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। ফলে নৌকার জন্য মূল চ্যালেঞ্জই হলো স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগ ছাড়া বড় দলের মধ্যে জাতীয় পার্টি ভোটে রয়েছে। ইতোমধ্যে দলটির সঙ্গে আওয়ামী লীগ আসন সমঝোতার অংশ হিসেবে ২৬টি আসন ছেড়ে দিয়ে ওইসব আসনে নৌকার প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ফলে মাঠে আওয়ামী লীগের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নয় জাতীয় পার্টি। এই ২৬টি আসনের বাইরেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টি দু’একটি স্থানে প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে; তবে সার্বিকভাবে এ দুটি দল আসন সমঝোতা করেই ভোটের মাঠে রয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর বাকি ১৩ দলের মধ্যে মাত্র তিনটি দলকে ছয়টি আসন ছেড়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। এ ছয় আসনে জোটনেতারা অংশ নিলেও তাদের প্রতীক কিন্তু নৌকা। ফলে এই ছয় আসনেও নৌকার সঙ্গে লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরই। এছাড়া ১৪ দলের বাকি ১০ দলকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আসন না ছাড়ায় তারা ভোটের মাঠে একেবারেই গুরুত্বহীন। এই দলগুলোর সঙ্গে সাধারণ ভোটারের কোনো সম্পৃক্ততা না থাকায় এরা আলোচনাতেই নেই। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে থাকা ‘কিংস পার্টি’খ্যাত কল্যাণ পার্টি ও তৃণমূল বিএনপির মতো দলগুলোও ভোটের মাঠে কোনো আলোচনায় নেই।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোটে নামসর্বস্ব অনেক দলই অংশ নিয়েছে। এসব দলের অধিকাংশের কেন্দ্রীয় নেতাকে তেমন কেউই চেনেন না। সাধারণ মানুষ দূরের কথা, রাজনীতিকরাও এদের চেনেন না বা জানেন না। রাজনীতিতে এদের কোনো প্রভাব না থাকায় ভোটের মাঠে এরা অনেকটাই হাওয়া। অনেক দলের দৃশ্যমান কোনো অস্তিত্বও নেই। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের শর্তের মধ্যে নির্বাচনে যাওয়ার একটি শর্ত জুড়ে দেয়ায় অনেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। কিন্তু ভোটের মাঠে এদের কোনো অস্তিত্ব নেই।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। এরপরই প্রচার-প্রচারণায় নামেন প্রার্থীরা। প্রতীক বরাদ্দের ১১ দিন পরও নির্বাচনি এলাকায় আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলগুলোকে তেমন প্রচারে দেখা যায়নি।
ঢাকার একাধিক আসনে এ প্রতিবেদক সরেজমিনে আওয়ামী লীগের বাইরে অন্য দলের কোনো প্রচার মাইক বা নির্বাচনি অফিস দেখেননি। আওয়ামী লীগের জোট শরিক বা নির্বাচনে থাকা দলগুলোকে ভোটের মাঠে গণসংযোগ করতে দেখা যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা বা ভাগাভাগিতে বঞ্চিত হওয়া জাতীয় পার্টির দুজন প্রার্থী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তারা হচ্ছেন ঢাকা-১ আসন (দোহার-নবাবগঞ্জ) লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা হলেও এ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছাড়েনি আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে গত নির্বাচনে সমঝোতার কারণে ঢাকা-৪ (শ্যামপুর-কদমতলী) আসনটি আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল। ফলে তখন এমপি হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবুল হোসেন বাবলা। এখনো তিনি এ আসনের এমপি। কিন্তু এবার আওয়ামী লীগ এই আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয়নি; তবে এমপি বাবলা ভোটে রয়েছেন। তিনি নিয়মিত তার প্রচারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ছাড়াও ভোটে রয়েছে আরও অন্তত ২৭টি রাজনৈতিক দল। কিন্তু ভোটের মাঠে তাদের কোনো তৎপরতা চোখে পড়ছে না। ওই ২৭টি দলের প্রচার-মাইক নেই, নির্বাচনি অফিস নেই; প্রার্থীদের গণসংযোগও নেই। ঢাকার বাইরের অবস্থাও ঠিক একই। ভোটে থাকলেও নির্বাচনি মাঠে নেই প্রার্থীরা। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ঠিকই মাঠে রয়েছেন। তথ্যসূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ৪০টির বেশি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাউজভাণ্ডারি তার আসনে গণসংযোগ করলেও অন্য প্রার্থীরা মাঠে নেই। দলটির চেয়ারম্যান বিগত কয়েক দফা এমপি থাকার কারণে তিনি ফের নির্বাচিত হওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে মাঠে রয়েছে।
কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও জনপ্রতিনিধিরা তার সঙ্গ ছাড়ায় তিনি ভোটের মাঠে অস্তিত্ব হারাচ্ছেন। তাই দলের চেয়ারম্যানের এই অবস্থা প্রত্যক্ষ করায় অন্যরা মাঠে নেমে সময় নষ্ট করতে চাচ্ছেন না। তবে দেশজুড়ে যেসব স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন, তারা কিন্তু বসে নেই। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুষ্ঠু নির্বাচনের যে ওয়াদা করেছেন, তার ওপর আস্থা রেখে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠে রয়েছেন। আবার তাদের মধ্যে অনেক বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় মাঠে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। ফলে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে।