স্বাস্থ্য খাত

তাড়া করেছে ডেঙ্গু আতঙ্ক

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩, ১২:৩০ এএম
তাড়া করেছে ডেঙ্গু আতঙ্ক
  • আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ডের বছর
  • স্বজন হারিয়ে অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত
  • বেড়েছে ডেঙ্গু চিকিৎসা সহায়ক সব পণ্যের দাম
     

চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু ছিল অপ্রত্যাশিত। চিকিৎসায় আমাদের ঘাটতি আছে

—অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ
জনস্বাস্থ্যবিদ

সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প নেই

—অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার
কীটতত্ত্ববিদ

চলতি বছর দেশে ডেঙ্গু রোগের ইতিহাস নতুন করে লেখা হয়েছে। দেশে ডেঙ্গু রোগ সংক্রমণ হওয়ার দুই যুগে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে এ বছর। ডেঙ্গু এক সময় বর্ষাকালের রোগ হলেও চলতি বছর জানুয়ারি মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত কখনও কম আবার কখনও বেশি ছিল। ডেঙ্গু এক সময় নগরের রোগ হলেও চলতি বছর ছড়িয়েছে সারা দেশে। এর কারণ হিসেবে মশক নিধনের দুর্বলতাকে দুষছেন বিশেষজ্ঞরা। মশক নিধন ব্যবস্থার দুর্বলতা ছিল বছরজুড়ে আলোচনায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি মশক নিধনের কাজ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা দেয়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ। কিন্তু ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসার ছিল না পর্যাপ্ত প্রস্তুতি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো সর্বশেষ তথ্য বলছে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৬৬ জন আর মৃত্যু ছয়জন। ফেব্রুয়ারি মাসে আক্রান্ত ১৬৬ জন মৃত্যু তিনজন। মার্চ মাসে আক্রান্ত ১১১ জন মৃত্যু শূন্য। এপ্রিল মাসে আক্রান্ত ১৪৩ জন মৃত্যু দুজন। মে মাসে আক্রান্ত এক হাজার ৩৬ জন মৃত্যু দুজন। জুন মাসে আক্রান্ত পাঁচ হাজার মৃত্যু ৩৪ জন। জুলাই মাসে আক্রান্ত ৪৩ হাজার ৮৫৪, মৃত্যু ২০৪ জন। আগস্ট মাসে ৭১ হাজার ৯৭৬ জন, মৃত্যু ৩৪২ জন। সেপ্টেম্বর মাসে ৭৯ হাজার ৫৯৮ জন, মৃত্যু ৩৯৬ জন। অক্টোবর মাসে ৬৭ হাজার ৭৬৯ জন মৃত্যু ৩৫৯ জন। নভেম্বর মাসে ৪০ হাজার ৭১৬ জন মৃত্যু ২৭৪ জন। ডিসেম্বর মাসে ৯ হাজার ১১০ জন, মৃত্যু ৮০ জন। এ তথ্য শুধুমাত্র ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে  হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়া রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা। আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসা নেয়া রোগী রয়ে গেছেন হিসাবের বাইরে। 

বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুহার উঠে এসেছে আন্তজার্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে। অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসাদানকারী আন্তর্জাতিক সংগঠন ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস, ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (ইসিডিসি) গবেষণার চলতি বছর শীর্ষ দশটি দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হারে বাংলাদেশে ছিল মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি। অনেকে হারিয়েছেন স্বামী-স্ত্রী, সন্তান, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে গিয়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে ছিল চিকিৎসক সংকটসহ সব ধরনের চিকিৎসা উপকরণের সংকট। ঢাকার বাইরে পর্যাপ্ত চিকিৎসা না থাকায় সারা দেশের রোগীরা ভিড় করেছেন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে। শেষ সময়ে চিকিৎসা নিতে আসা অনেক রোগীর মৃত্যু হয়েছে সময় মত চিকিৎসা না দিতে পারার কারণে। অন্যদিকে ডেঙ্গু চিকিৎসা সহায়ক সব পণ্যের দাম বেড়েছে দুই থেকে তিনগুণ। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে অনেকে ভেঙেছেন নিজের সব সঞ্চয়।

দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু হার বেশি এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে আমার সংবাদের এ প্রতিবেদক কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদের সাথে। তিনি বলেন, চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ছিল অপ্রত্যাশিত।  ডেঙ্গু এবার সারা বছর ছিল। আমাদের ডেঙ্গু চিকিৎসায় ঘাটতি ছিলো। আমাদের চিকিৎসা সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে নিতে হবে কার্যকরী পদক্ষেপ। তা না হলে আমাদের আগামী দিনগুলোতে ডেঙ্গু আরও ভোগাবে। 

এডিশ মশা নিয়ন্ত্রণ ও কীটতত্ত্ব নিয়ে দীর্ঘ দিন গবেষণা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার। তার সাথে কথা বলেন আমার সংবাদের এ প্রতিবেদক। তিনি বলেন, ডেঙ্গু এখন আর শহর কেন্দ্রিক নেই। সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে গেছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে এডিস মশা নিয়ন্ত্রক বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রশিক্ষণ শেষে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ সহায়ক সব উপকরণ তাদের প্রদান করতে হবে। সতর্কভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আগামী বছরের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।