দেশের মেডিকেল শিক্ষার সংকট যেন কাটছেই না। অবকাঠামো সংকট, শিক্ষক সংকট নিয়ে ধুঁকছে মেডিকেল শিক্ষা কার্যক্রম। দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা এখন ১১০টি। বছর বছর বাড়ে কলেজের সংখ্যা ও আসন। সেই তুলনায় বাড়ে না মান। অনেক সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ চলছে নানা সংকট নিয়ে।
সামপ্রতিক সময়ে মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁস চক্র আটকের পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তথ্য বলছে, চক্রটি ২০০১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে অন্তত ১০ বার মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁস করেছে। মেডিকেল শিক্ষা দেয়ার লক্ষ্যে দেশে সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়েছে গত দেড় দশকে। এসব মেডিকেল কলেজে প্রতি বছর চার হাজার ৩৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তিপরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি খরচে মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পান। এসব মেডিকেল কলেজে শিক্ষকদের পদের বড় একটা অংশই ফাঁকা। এর মধ্যে সামপ্রতিক সময়ে প্রতিটি মেডিকেল কলেজ ২০ থেকে ৬০টি আসন বাড়িয়ে এক হাজার ৩০টি আসন বৃদ্ধি করার অনুমোদন দিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। মেডিকেল শিক্ষার নানান সংকটের মধ্যে যুক্ত হয়েছে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের (ডব্লিউএফএমই) স্বীকৃতি না পাওয়ার আশঙ্কা।
ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের (ডব্লিউএফএমই) স্বীকৃতি না পেলে ২০২৪ সালের জুন থেকে বিশ্বের অনেক দেশে বাংলাদেশের ব্যাচেলর অব মেডিসিন, ব্যাচেলর অব সার্জারি (এমবিবিএস) ডিগ্রি গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। এতে হাতছাড়া হবে চাকরির বাজার। অংশ নেয়া যাবে না কোনো প্রশিক্ষণেও। বাংলাদেশের এমবিবিএস ডিগ্রি গ্রহণযোগ্যতা হারালে একদিকে এদেশের ডিগ্রিধারীরা যেমন দেশের বাইরে চাকরির সুযোগ হারাবে, অন্যদিকে অন্য দেশের যেসব শিক্ষার্থী বাংলাদেশে পড়তে আসত তারা নিরুৎসাহিত হবে। সারা বিশ্বে মেডিকেল কলেজের আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিতে কাজ করে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন। প্রতিবেশী ভারত, এমনকি নেপালও তাদের স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু পিছিয়ে বাংলাদেশ। আগামী পাঁচ মাসের মধ্যে শর্ত পূরণ করে স্বীকৃতি না পেলে আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের অনেক দেশে বাংলাদেশের এমবিবিএস ডিগ্রি গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।
সারা বিশ্বে মেডিকেল কলেজের আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিতে কাজ করে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন। সেই প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতির জন্য মেডিকেল এক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন, মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষক, অবকাঠামোসহ নানা সংকটের সমাধানসহ ১১টি শর্ত পূরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। তা না হলে ২০২৪ সালের জুন থেকে বিশ্বের অনেক দেশে বাংলাদেশের ব্যাচেলর অব মেডিসিন, ব্যাচেলর অব সার্জারি (এমবিবিএস) ডিগ্রি গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতি দ্রুত ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের গাইডলাইন অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু চাকরি নয় বিভিন্ন প্রশিক্ষণে যেতে হলেও এই স্বীকৃতি দরকার।
দেশে এমবিবিএস ডিগ্রির বহির্বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা ও ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের (ডব্লিউএফএমই) স্বীকৃতি নিয়ে আমার সংবাদের এ প্রতিবেদক কথা বলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞার সাথে। তিনি বলেন, ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের (ডব্লিউএফএমই) শর্ত অনুসারে একটি অ্যাক্রিডিটেশন আইন পাস করতে হয় সংসদ থেকে। আইনটি আমাদের গত সংসদে পাস হয়ে গিয়েছে। অ্যাক্রিডিটেশন আইনের পর করতে হয় অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল। কাউন্সিল করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে প্রস্তাবনা স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে দেখিয়েছি। কাউন্সিল হয়ে গেলে আমরা ডব্লিউএফএমই দেয়া শর্ত অনুসারে কাজ শুরু করব। ডব্লিউএফএমই প্রতিনিধি আসবে, তারা শর্ত অনুযায়ী আমাদের মেডিকেল কলেজগুলো দেখবেন। ওই অনুসারে তার প্রতিবেদন দিবেন।
অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন হলেই আমরা খুব শিগগিরই কাজ শুরু করব। মেডিকেল কলেজে শিক্ষক সংকট নিরসনের বিষয়ে তিনি বলেন, মেডিকেল কলেজে শিক্ষক সংকটে যে পদোন্নতিজনিত সমস্যা ছিল তা আমরা কাটিয়ে উঠছি। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। দীর্ঘ দিন দেশে সর্বজনীন চিকিৎসাসেবা ও মানসম্মত মেডিকেল শিক্ষা নিশ্চিতে আন্দোলন করছেন জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ডা. ফয়জুল হাকিম। তার সাথে দেশের এমবিবিএস ডিগ্রির বহির্বিশ্বে গ্রহযোগ্যতার শঙ্কার বিষয়ে কথা হয় আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের।
তিনি বলেন, যাদের কাজগুলো করার প্রয়োজন ছিল তারা যথাসময়ে কাজগুলো করেনি বলেই এই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। জবাবদিহিতা ও অব্যবস্থাপনা থেকে বের না হতে পারলে আমাদের সংকট আরও বাড়বে।