বিএনপি এখন কী করবে

আবদুর রহিম প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২৪, ১২:৫৮ এএম
বিএনপি এখন কী করবে
  • উপজেলা নির্বাচনে গেলে হামলা-মামলা প্রাণহানির আশঙ্কা
  • অন্যের ওপর নির্ভরতা বাদ দিয়ে নেতাকর্মীদের ওপর আস্থার পরামর্শ  
  • লোক হাসানো কর্মকাণ্ড কর্মসূচি পরিহার করে বড় কর্মসূচির আহ্বান
  • চাল, ডাল, গণসংগীত গণনাটক কর্মসূচি পরিহারেরও জোর দাবি   
  • ভোটকেন্দ্রে না যাওয়া জনগণকে নিয়ে হাইকমান্ডের ভূমিকা দেখতে চায় তৃণমূল

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে জাতীয় নির্বাচন বর্জন শেষে দ্বাদশ সংসদের এমপি ও মন্ত্রীদের শপথ গ্রহণ শেষ হয়েছে। এর মধ্যেই আগামী সপ্তাহে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। আর রোজার আগেই একগুচ্ছ স্থানীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারে নির্বাচন কমিশন। দলটির দ্বিতীয় নেতাসহ শতাধিক নেতা কারাগারে। তৃণমূল নেতারা এখনো পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আদালতের বারান্দায় সময় কাটাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে— বিএনপি এখন কী করবে? তারা কী আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে পিছু হটে নেতাকর্মীদের মুক্তির দিকে মনোযোগী হবে! সামনে যে নির্বাচনগুলো রয়েছে তাতে অংশগ্রহণ করে কী চাঙ্গা হওয়ার চেষ্টা করবে— নাকি ক্ষমতাসীন সরকারের কাছে নিজেদের দুর্বলতা স্বীকার করে অতীতের মতো ঘরোয়া কর্মসূচির দিকে মনোযোগী হবে? দলটির মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংঘাত-সহিংসতা নিয়ে বিএনপির গায়ে সরকার পরিকল্পিতভাবে যে সব কাদা লাগাতে চেয়েছিল সেখানে তারা ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপিকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিতে চেয়েছে, সেখানেও সরকার সফল হয়নি। মাঠপর্যায়ের কোনো নেতাকর্মী লোভের ফাঁদে পা দেননি। বিএনপি জনগণকে ভোটকেন্দ্রে না যেতে যে ডাক দিয়েছে, কর্মসূচি পালন করেছে, সেখানে দেশের ৭৫-৮৫ শতাংশ জনগণ সাড়া দিয়েছে। সরকার যে ৪০ শতাংশ ভোট গ্রহণ হয়েছে বলে উপস্থাপন করেছে, দেশের মানুষ ও বিদেশিরা তাও বিশ্বাস করেনি। দেশের মানুষ বিএনপির ওপর আস্থা রেখেছে এখন বিএনপির উচিত দেশের মানুষের জন্য কাজ করা, নেতাকর্মীদের বাঁচানোর পথ বের করা। 

বিএনপির রাজনীতিতে চোখ রাখা দুই বিশ্লেষকের সাথে কথা হয় আমার সংবাদের। তারা বলেন, বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে সরকারের রূপ দেশের জনগণ ও সারা দুনিয়ায় উপস্থাপন করতে সফল হয়েছে। এই নির্বাচনে না যাওয়া ছিল বিএনপির জন্য লাভজনক। যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ অনেকে এখনো এই নির্বাচনকে বৈধতা দেয়নি।  নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বন্দি ও সাজা। দলীয় কার্যালয়ে তালা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারা এবং নির্বাচনের পর সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই শপথ গ্রহণে একসাথে দুটো সংসদ ও ৬৪৮ এমপি বহালে বিতার্কিক বিষয়গুলোর ফলাফল দিন শেষে বিএনপির ঘরেই গেছে। এখন বিএনপির উচিত দলের নীতি-আদর্শ লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থাকা। কোনোভাবেই কোনোমতেই আওয়ামী ফাঁদে পা না দেয়া। দলের ভেতরে যারা বিভিন্ন দেশের পন্থি রয়েছেন, অন্যের উদ্দেশ্য ও অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে চেষ্টা চালায় তাদের সম্পর্কে সচেতন থাকা। 

নির্বাচন হেরে যাওয়ার পরও যেন দলটিতে কোনো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হয়। আন্দোলনের ফলাফল ঘরে নেয়ার এবার মুখ্য সময়। কূটনীতি, মাঠের রাজনীতির বিষয়গুলো বিচক্ষণতার সাথে মোকাবিলা করা। অন্যের ওপর নির্ভরতা বাদ দিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের শক্তির ওপর আস্থা রাখা। মাঠের কর্মসূচিতে টিকে থাকার শক্তি অর্জন করা। জনগণ বিএনপির ডাকে দিয়েছে সেই জনগণের কথা চিন্তা করেও চূড়ান্ত পথে হাঁটা। এবার দলটিকে অবশ্যই অবশ্যই লোকহাসানো কর্মকাণ্ড ও কর্মসূচি পরিহার করতে হবে। চাল-ডালের কর্মসূচি পালন না করে সরকার পতনের আন্দোলনে যাওয়া উচিত। দলটির শরিকদের অনেকে গণসঙ্গীত, গণতন্ত্রের পক্ষে গণনাটক, ইত্যাদি সময় ক্ষেপণের কর্মসূচিতে বিএনপিকে হাঁটানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। সেগুলোতে পা নিয়ে দলটির যে বিশাল জনশক্তির শক্তি রয়েছে সেদিকেই মনোযোগী হওয়া আবশ্যক। কূটনীতি ও অর্থনৈতিকভাবে সরকার অল্প সময়ের মধ্যে বড় চাপের মুখোমুখি হতে পারে বলেও বিশেজ্ঞদের ভাষ্য। তখন বিএনপির উচিত, রাজপথের শক্তিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা। যে কর্মসূচিতে সরকার ধাক্কা খাবে সেই কর্মসূচি নির্ধারণ করা।   

গত বছরের ১৪ জুলাই থেকে সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করেছে বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো। ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর গত ২০ ডিসেম্বর থেকে ভোট বর্জনসহ অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয় বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধী পক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন শেষে দলটির  নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ মনে করছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপি তা সঠিক ছিল। নির্বাচনে তা প্রমাণিত হয়েছে। সংসদ নির্বাচনের আদলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করবে সরকার। ফলে নির্বাচনে গিয়ে তেমন লাভ হবে না; বরং এই নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে হামলা-মামলা আরও বাড়বে। তাই কোনোভাবে সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যাওয়া উচিত হবে না। এতে মানুষ হাসাহাসি করবে। বিএনপি ভোটে না গিয়ে যে আস্থা অর্জন করেছে তা নষ্ট হয়ে যাবে। বিএনপির এক উপদেষ্টা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুুক) বলেন, উপজেলা নির্বাচনে যদি বিএনপি যায় তাহলে আত্মহত্যার শামিল হবে। সরকার জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিকে যে ফাঁদে ফেলতে চায়নি সেই ফাঁদে স্থানীয় নির্বাচনে ফেলবে। অনেক নেতাকর্মীর প্রাণহানির আশঙ্কাও রয়েছে। 

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান আমার সংবাদকে বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে যে কোনো নির্বাচন হয় না তা বিশ্ববাসী দেখেছে। কেন এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যায় না সেটিও প্রমাণ হয়েছে। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে বিএনপি যাবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি এখন সরকার পতনের আন্দোলনে রয়েছে।’ এ বিষয়ে দলের হাইকমান্ড থেকে সিদ্ধান্ত আসবে। আলোচনা সাড়া তিনি কিছু বলতে চাননি।

দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে কেমন নির্বাচন হয়েছে আজ এটি শুধু আমরা বলছি না— সারা বিশ্ব বলছে ... সরকারের পতন পর্যন্ত বিএনপি রাজপথ ছাড়বে না। সরকারের পতন ছাড়া আপাতত বিএনপি আর কিছু ভাবছে না’ বলে তিনি যোগ করেন।