নাগরিক জীবনে নামবে চিকিৎসাব্যয়ের নতুন খড়গ

ওষুধের দাম বৃদ্ধির তৎপরতা

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৪, ০৮:৫৫ এএম
ওষুধের দাম বৃদ্ধির তৎপরতা

দেশের অগ্রগামী শিল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ওষুধ শিল্প। দেশেই বিভিন্ন ওষুধ উৎপাদন হওয়াতে এতদিন সাধ্যের মধ্যেই মিলেছে অনেক ওষুধ। যদিও সাধ্যের এই স্বাদ আর বেশিদিন পাবে না দেশের মানুষ। সম্প্রতি এমন আভাস মিলেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রি নেতাদের ওষুধের দাম বৃদ্ধির তৎপরতায়। 

জানা গেছে, ডলার সংকট, বিশ্ব বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, জ্বালানি সংকটসহ বহুমুখী সংকটের কথা উল্লেখ করে ওষুধের দাম বাড়াতে অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গেও  সাক্ষাত করেছেন। যদিও জনস্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে জরুরি এই পণ্যটির দাম বাড়ানো হলে চিকিৎসা ব্যয়ে আরও নিঃস্ব হয়ে পড়বে দেশের মানুষ। যেখানে চিকিৎসা ব্যয় আকাশচুম্বী। এদিকে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলো ওষুধের দাম বাড়নোর সিদ্ধান্তে অনেকটাই অটল। যে কারণে ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রির নেতারা প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। সাক্ষাতে তারা ওষুধ শিল্পের বিভিন্ন সংকট উল্লেখ করে ওষুধের দাম বাড়ানোর দাবি জানান। 

ওষুধ কোম্পানিগুলো বলছে, ওষুধ শিল্পের প্রায় ৮০ শতাংশ কাঁচামালই আমদানি-নির্ভর। টাকার অবমূল্যায়ন, ডলার সংকট, জ্বালানি খরচ বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে গত এক বছরে উৎপাদন ব্যয় অন্তত ৩০ শতাংশ বেড়েছে। এক সময় ডলারের মূল্য ছিল ৮৬ টাকা। এখন ডলারের দাম বেড়ে অফিসিয়ালি ১১০ থেকে ১১১ টাকা হয়েছে। ওষুধের কাঁচামাল আমদানি করতে ১১৯ থেকে ১২০ টাকায় ডলার কিনতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই ওষুধের কাঁচামাল আমদানি, উৎপাদন ব্যয়, প্যাকেজিং মূল্যবৃদ্ধি ও পরিবহনসহ অন্যান্য ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের জিডিপিতে ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ অবদান রাখার পাশাপাশি দেশের ১৮ কোটি মানুষের ৯৮ শতাংশের জন্য ওষুধ সরবরাহ করা দেশীয় কোম্পানিগুলো আরও বলছে, ১৫০টিরও বেশি দেশে সহজলভ্য মূল্যে ওষুধ রপ্তানিও করা হচ্ছে। টিকে থাকতে হলে ওষুধের দাম বাড়াতেই হবে। 

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মোট ৩০৮টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ তৈরি করে আসছে। দেশে দেড় হাজারেরও বেশি জরুরি ওষুধের ২৭ হাজারেরও বেশি ব্র্যান্ডের ওষুধ উৎপাদন করা হচ্ছে। এর মধ্যে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকায় রয়েছে ২১৯টি। তার মধ্যে ১১৭টি ওষুধের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যই নির্ধারণ করে দেয় সরকার। অন্য সব ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের সর্বশেষ তথ্য মতে, চিকিৎসাপ্রার্থীদের ৬৪.৬ শতাংশ অর্থই ব্যয় হয় ওষুধের পেছনে। বাকিটা ব্যয় হয় রোগ নির্ণয় বা বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, চিকিৎসক  দেখানো, হাসপাতালে ভর্তি ও অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং সেবা নেয়ার পেছনে। ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালে স্বাস্থ্য ব্যয়ে সরকারের অংশ ছিল যথাক্রমে ২৮, ২৬ ও ২৩ শতাংশ; অর্থাৎ তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবেই তা কমেছে। বিপরীতে ওই বছরগুলোতে ব্যক্তির নিজ ব্যয় ছিল যথাক্রমে ৬৪, ৬৬ ও ৬৯ শতাংশ, অর্থাৎ পর্যায়ক্রমে তা বেড়েছে। এমতাবস্থায় ওষুধের দাম বাড়লে মানুষের চিকিৎসা ব্যয় আরও বাড়বে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। 

এদিকে ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০৩২ সাল পর্যন্ত সক্রিয় ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদানগুলোর (এপিআই) স্থানীয় উৎপাদন উৎসাহিত করে আমদানি নির্ভরতা কমানো এবং রপ্তানির উদ্দেশে কর রেয়াতের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। কর রেয়াতের পরও দেশে হচ্ছে না উল্লেখযোগ্য এপিআই উৎপাদন ও কমছে না আমদানি নির্ভরতা। 

ওষুধ শিল্পে সংকট ও দাম বাড়ানোর বিষয়ে আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামানের। 

আমার সংবাদকে তিনি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টার কাছে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণগুলো তুলে ধরেছি। বিশ্ববাজারে ওষুধ সংশ্লিষ্ট সব পণ্যের দাম বাড়ছে। এতে করে আমাদের উৎপাদন খরচও বাড়ছে। টিকে থাকতে হলে ওষুধের দাম বৃদ্ধি করতে হবে। আমরা বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর সাথেও আলোচনা করব। কোম্পানিগুলোর ওষুধের দাম বৃদ্ধির চলমান তৎপরতার বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র নুরুল ইসলামের সাথে কথা হলে আমার সংবাদকে তিনি বলেন, আমাদের কাছে এখনো কোনো প্রস্তাবনা আসেনি। প্রস্তাবনা এলে দাম বৃদ্ধির সরকারি যে প্রক্রিয়া আছে তা অনুসরণ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।