- দেশে মিয়ানমার সংঘাতের প্রভাব মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে তিন বাংলাদেশি আহত
- বিজিবি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমারের ৫৮ পুলিশ সদস্য
- বাংলাদেশ সীমান্তের ছয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা
- নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছেন সীমান্তের বাসিন্দারা
মিয়ানমারের চলমান সংঘাতের বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি। বাংলাদেশে কাউকে অনুপ্রবেশ করতে দেয়া হবে না —আসাদুজ্জামান খান কামাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমার অংশে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর ফের ব্যাপক গোলাগুলি ও বোমা বর্ষণ শুরু হয়েছে। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর তীব্র সংঘাত চলার মধ্যেই জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও এক দফায় ছয় মাসের জন্য বৃদ্ধি করেছে মিয়ানমার জান্তা সরকার। জরুরি অবস্থার সময় বৃদ্ধির সাথে সাথে মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের সাথে জান্তা সরকারের রক্তক্ষয়ী সংঘাতও বেড়েছে। যে সংঘাত মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।
সর্বশেষ গত শনিবার দিবাগত রাত থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে থেমে থেমে গুলি ও বোমাবর্ষণ চলছিল। বেশ কয়েকটি গুলি ও মর্টারশেল এসে পড়েছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে। এদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের দেয়া তথ্যমতে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে এখন পর্যন্ত তিন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন— প্রবীন্দ্র ধর (৫০), রহমা বেগম (৪০) ও শামশুল আলম। তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তারা তিনজনই তুমব্রু সীমান্তের হিন্দুপাড়ার বাসিন্দা বলে নিশ্চিত করেছেন ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ি তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ মাহফুজ ইমতিয়াজ ভুঁইয়া। গোলাগুলিতে কোনাপাড়ার কয়েকটি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক বাংলাদেশি সীমান্ত ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছেন। তুমব্রু সীমান্তের কাছে দুই গ্রামের প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশি অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে গোলাগুলি ও সংঘর্ষে প্রাণহানির শঙ্কায় মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপির গুলিবিদ্ধ ১০ সদস্যসহ ৫৮ জনেরও বেশি বাংলাদেশ ভূখণ্ডে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের ঘুমধুম বিজিবি ক্যাম্পে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। সীমান্ত পথে আরও বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে ঢোকার জন্য অবস্থান নিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, মিয়ানমারের বিজিপির সদস্যরা তুমব্রু সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে সীমান্তের ১০০ গজ দূরত্বে থাকা মিশকাতুন নবী দাখিল মাদ্রাসা বন্ধ করে দেয়ার কথা জানান বান্দরবান জেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ ফরিদুল আলম হোসাইনী। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল মান্নান বলেন, গতকাল থেকে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকার অভ্যন্তরে গোলাগুলি বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্ত এলাকার বাইশ ফাঁড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজা বনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম কুল তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবিও সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। নিরাপত্তা চৌকিগুলোতে সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি।
মিয়ানমারের বর্তমান সংঘাতময় অবস্থা ও নতুন করে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘মিয়ানমারে যে যুদ্ধ চলছে তা কতদিন চলবে আমরা জানি না। আমাদের সীমান্ত ক্রস করে কাউকে আসতে দেবো না। আমাদের বিজিবিকে আমরা সেই নির্দেশনা দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো যুদ্ধে জড়াতে চাই না, যুদ্ধ চাই-ও না। এটি প্রধানমন্ত্রী সবসময় আমাদের নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন। তার মানে এই নয় যে, আমাদের গায়ে এসে পড়বে আর আমরা ছেড়ে দেবো। এর জন্য আমরা সবসময় তৈরি আছি।’ সীমান্তে শক্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে বলে দিয়েছি এবং কোস্টগার্ডকেও নির্দেশনা দিয়েছি যাতে কোনোভাবেই আমাদের সীমানায় কেউ অনুপ্রবেশ করতে না পারে। সে ব্যাপারে আমরা খুব সতর্ক রয়েছি।’
নতুন করে রোহিঙ্গাদের আর প্রবেশ করতে দেয়া হবে কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত একটিই, সীমান্তে এখন যুদ্ধ চলছে, এখানে এখন কারো আসা উচিত হবে না। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যদি মনে করে, তাদের ওখানে যুদ্ধ হচ্ছে, তারা অন্য কোথাও যাবে। এই মুহূর্তে আর কাউকে আমরা ঢুকতে দেবো না।’ মন্ত্রী আরও বলেন, ‘মানবাধিকারের প্রশ্ন এখন আসবে না, কারণ যুদ্ধ চলছে। গোলাগুলি চলছে। এখানে কারো আসা উচিত হবে না। যে-ই আসবে, তাকে সাথে সাথে আবার মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেবো।’
মিয়ানমারের চলমান সংঘর্ষের বিষয়ে গতকাল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আরাকানে যে অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ চলছে, এটি সীমান্তে চলে এসেছে। আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ নয়, তবে গোলাগুলির কারণে ভয়ভীতি ছড়াচ্ছে। এ ক্ষেত্রে চীনের হস্তক্ষেপ চেয়েছি। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতেও চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে চীন ভূমিকা নিতে পারে। মিয়ানমার যেন তাড়াতাড়ি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয় এ জন্য সহযোগিতাও চাওয়া হয়েছে।’