মিয়ানমার যুদ্ধে ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
- বাংলাদেশের সীমানা ডিঙ্গিয়ে মিয়ানমারের বিজিপি, রোহিঙ্গা সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ
মিয়ানমার ইস্যুতে পররাষ্ট্রনীতির দুর্বলতা এখন প্রকাশ্যে
—নিতাই রায় চৌধুরী
ভাইস চেয়ারম্যান, বিএনপি
মিয়ানমারকে প্রতিরোধের শক্তি বর্তমান সরকারের নেই বলেই সহ্য করছে
—ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ প্রেসিডেন্ট, এলডিপি
পররাষ্ট্র বিষয় নিয়ে কে কী বলছেন, এখনই জবাব
দিতে চাই না
—মো. আফজাল হোসেন সাংগঠনিক সম্পাদক, আ.লীগ
মিয়ানমার যুদ্ধ ইস্যুতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দুর্বলতা নিয়ে রাজনীতিতে প্রশ্ন উঠেছে। মিয়ানমারে ১৩৫টি গোষ্ঠীর সঙ্গে সে দেশের উগ্র সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ চলছে। তার উত্তাপ পড়েছে বাংলাদেশে। মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি, মর্টার শেল এসে পড়ছে বাংলাদেশের মানুষের বসতঘরে। কিছুক্ষণ পরপর বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠছে বাংলাদেশের সীমান্ত। আতঙ্কে স্থানীয়রা ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। গত পরশু মিয়ানমারের গুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে আশ্রিত ১৬ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার মধ্যে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের বিজিপি, রোহিঙ্গা, সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বাংলাদেশে অবৈধভাবে ঢুকে পড়ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২৬৪ জন মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে আশ্রয় নিয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ভারত দুটো দেশই ঝুঁকিতে পড়ছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। তবে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে উঠেছে পররাষ্ট্র দুর্বলতা নিয়ে। শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশে দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির কারণে সীমান্তে মিয়ানমার যুদ্ধে হাওয়া দেশে এসে পড়েছে। মানুষ মরছে, ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে হচ্ছে। সীমান্তে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড থাকা অবস্থায় অতীতেও ১৬ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা দেশে ঢুকেছে। এখন সেই দেশের বিশেষ বাহিনী অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করছে, সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ জন্য বাংলাদেশের কূটনৈতিক দুর্বলতাকে দায়ী করা হচ্ছে।
এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, আমার মনে হয়, ভারত যদি এ ব্যাপারে ভূমিকা পালন করে তাহলে বড় ধরনের চাপ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বুঝতে পারবে। এখানে ভারতেরও স্বার্থ রয়েছে। জটিল একটা অবস্থা দাঁড়িয়েছে এবং সংঘর্ষ হচ্ছে। তার মানে, বিভিন্ন অস্ত্র সেখানে আসা-যাওয়া শুরু করেছে। একই সঙ্গে আমরা দেখছি, যুক্তরাষ্ট্র কিছু দিন আগে ‘বার্মা অ্যাক্ট’ নামে একটি আইন পাস করেছে। সেই আইনে প্রয়োজনে মিয়ানমারের বিভিন্ন গোষ্ঠীকে সহায়তা দিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এটি হলে আগামী দিনগুলোতে বিষয়টি আরো জটিল হবে। বিশেষ করে যদি অস্ত্রের আনাগোনা বেড়ে যায় তবে সেটি ভারতের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এ সম্পর্ক বিশ্লেষক গতকাল আমার সংবাদকে আরও জানান, চলমান পরিস্থিতিগুলো দ্রুত জাতিসংঘকে অবহিত করতে হবে। এখন জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ খুবই জরুরি। এটি যদি তীব্র আকার ধারণ করে তখন জাতিসংঘই প্রশ্ন উঠাতে পারে— তাদের অবগত করা হয়নি কেন। যেভাবেই হোক চলমান উদ্বেগের পরিস্থিতি জাতিসংঘে তুলে ধরে বাংলাদেশের সীমান্ত নিরাপদ করতে হবে, ঝুঁকিমুক্ত করতে হবে।
এ নিয়ে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ আমার সংবাদকে এক বিশেষ প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার হলো একটি মেরুদণ্ডহীন সরকার। কারণ তারা জনগণের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। জনগণ এই সরকারের সঙ্গে নেই। আমার মিয়ানমার থেকে মার খাচ্ছি, নিহত হচ্ছে তবুও মিয়ানমারকে প্রতিরোধের শক্তি বর্তমান সরকারের নেই। সে কারণে মিয়ানমারের আক্রমণ নীরবে সহ্য করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে মিয়ানমারের অনেক সোলজার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে, সারেন্ডার করেছে। প্রতিনিয়ত মিয়ানমারের সংঘর্ষের গোলাগুলি বাংলাদেশের সীমান্তে এসে পড়েছে। তবুও বাংলাদেশ সরকার নীরব। বুঝতে হবে এ সরকারের পেছনে বিদেশি কোনো শক্তি নেই। বাংলাদেশের জনগণও নেই। আল্লাহ ভালো জানেন, হয়তো আরো কঠিন পরিণতি আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, মিয়ানমার ইস্যুতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির যে দুর্বলতা রয়েছে এটি এখন প্রকাশ্যে চলে এসেছে। দিন দিন বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ইস্যু আমাদের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য বড় হুমকি হয়ে দেখা যাচ্ছে। পররাষ্ট্রনীতির ভূমিকা অনেক দুর্বলভাবেই দেখা যাচ্ছে, সেটি এ কয়েক দিনের ঘটনায় স্পষ্ট। আকাশসীমা, স্থলসীমা সব কিছুর নীতি ভঙ্গ হচ্ছে। মানুষ মারা যাচ্ছে, মানুষ আতঙ্কের মধ্যে সময় পার করছে। এই চলমান ঝুঁকির নিরসন অতি দ্রুত না হলে তার দায় দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আফজাল হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, ‘দেশের পররাষ্ট্র বিষয় নিয়ে কে কী বলছেন, আমরা এখনই সেগুলোর জবাব দিতে চাই না। মিয়ানমার ইস্যুতে আমাদের সরকার পররাষ্ট্রমন্ত্রালয় যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বিশেষ মন্তব্যে আমার সংবাদকে বলেন, মিয়ানমারের প্রস্তুতি নিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তে যে উদ্বেগ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে আমাদের অবশ্যই আরো কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। আমাদের বিজেবির আরো সতর্ক অবস্থায় থাকতে হবে। কিভাবে তাদের টপকে সে দেশের বাহিনী অস্ত্রসহ এ দেশে ঢুকে পড়ছে সেটি অবশ্যই প্রশ্নের বিষয়। আমাদের দেশের বাহিনীর টহলের বিষয় আরো শক্তিশালী করতে হবে। মিয়ানমারে একটি সংকট চলছে। সে সংকটের আবহাওয়া যাতে আমাদের এখানে প্রভাব না পড়ে, সে ব্যাপারে অবশ্যই তীক্ষ নজর রাখতে হবে। কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে সংকট দূরীভূত হতে পারে বলে আমি মনে করি।