মাঘের সঙ্গে শীতও বিদায় নিচ্ছে। বাড়তে শুরু করেছে তাপমাত্রা। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুৎ চাহিদাও। আসন্ন গ্রীষ্ম, রোজা ও সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে দুশ্চিন্তায় বিদ্যুৎ বিভাগ। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিন দিন বৈশ্বিক জলাবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। উষ্ণ হচ্ছে পৃথিবী। গত বছরের চেয়ে চলতি বছর বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়বে।
চলতি বছর দেশে গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা ১৭ থেকে ১৮ হাজার মেগাওয়াটে দাঁড়াতে পারে— এমন তথ্য মেলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে। ফলে দুই থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। চলতি শীতেও গড়ে এক ঘণ্টা করে বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল। তার রেশ কাটতে না কাটতেই চলে আসছে গ্রীষ্ম। শীত শেষে এবার গ্রীষ্ম সামলানো এখন বড় চ্যালেঞ্জ। পল্লী এলাকাগুলোতে ইতোমধ্যে কৃষিজমিতে সেচ দেয়া শুরু হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ ঘাটতি কিছুটা দৃশ্যমান হয়েছে। বেড়েছে লোডশেডিংয়ের মাত্রাও।
এদিকে সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে গ্রাহকদের প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগ সাত নির্দেশনা জারি করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি সেচ, রমজান ও গ্রীষ্মে সর্বোচ্চ লোডশেডিংয়ের শঙ্কা রয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড-আরইবি ও পাওয়ার সেলের তথ্য বলছে, বার্তমানে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৮০০ মেগাওয়াট ঘাটতি থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সংকটের অন্যতম কারণ অতিরিক্ত আমদানিনির্ভরতা। গ্যাস অনুসন্ধানে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হলে জ্বালানি খাত এতটা নাজুক পরিস্থিতির মুখে পড়ত না। দেশে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায়ও সমস্যা রয়েছে। রোজা এবং কৃষকদের সেচ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে এ চাহিদা ১৭ হাজার মেগাওয়াটেও পৌঁছাতে পারে। বর্তমানে চাহিদা কম থাকায় সর্বোচ্চ উৎপাদন হচ্ছে ১০ হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ। আগামী মার্চ-এপ্রিলে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা থাকবে। বিপরীতে চাহিদামতো বিদ্যুতের জোগান দেয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয় বিদ্যুৎ বিভাগের। পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, গ্রীষ্মে বিদ্যুতের ঘাটতি থাকবে দুই হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি।
এর আগে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের পর বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় দেশে এলএনজি ও জ্বালানি তেল আমদানিতে বড় ধরনের ছন্দপতন ঘটে। ফলে বাড়তে থাকে লোডশেডিং। সে সময় দৈনিক গড়ে ১৪-১৫ ঘণ্টা লোডশেডিং রাখতে হয়েছে। পরে শীত ও বর্ষার কারণে বিদ্যুৎ চাহিদা অনেকাংশ কমে যায়। আসন্ন গ্রীষ্মে আগের রূপে ফের ভোগান্তি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন বিশ্লেষকরা। রোজার দিনে দীর্ঘ সময় লোডশেডিং সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়বে। বাড়বে রোজাদারের কষ্ট। এদিকে বিদ্যুৎ ঘাটতির ফলে শিল্প-কারখানার উৎপাদনও থাকবে নিম্নমুখী।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন আমার সংবাদকে জানান, গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়বে। তাছাড়া বোরো মৌসুমে সেচে এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াটের চাপ থাকবে। আসন্ন রমজানেও বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়বে। তিনি বলেন, রামপাল, পায়রা ও ভারতের আদানির সরবরাহ ঠিক থাকলে আমরা আমাদের চাহিদার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারব।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম মনে করেন, আমাদের দেশে গ্যাস স্বল্পতা হওয়া উচিত নয়। কারণ আমাদের যথেষ্ট গ্যাস আছে। আমাদের এই সংকটের মূল কারণ হচ্ছে জ্বালানি খাতের অব্যবস্থাপনা। তিনি বলেন, আমরা দেশে যে সাশ্রয়ী গ্যাস আছে, সেটা এক্সপ্লোর না করে ভুল পথে গিয়ে উচ্চমূল্যের এলএনজি আনলাম। এই নীতি না পাল্টালে আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ বিভাগের সাত নির্দেশনা : সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে গ্রাহকদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা জানায় প্রতিষ্ঠানটি। আসন্ন সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে গ্রাহকদের সহযোগিতা কামনা করে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে : ১. সেচপাম্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতের লক্ষ্যে রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত সেচপাম্প চালু রাখুন। ২. দুর্ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে হুকিং বা অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বিরত থাকুন। ৩. নিম্নহারে বিদ্যুৎ বিল সুবিধা প্রাপ্তির লক্ষ্যে দোকান, শপিংমল, পেট্রোল পাম্প ও সিএনজি স্টেশনে অতিরিক্ত বাতি ব্যবহারে বিরত থাকুন। ৪. বেআইনিভাবে ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশার ব্যাটারি চার্জ থেকে বিরত থাকুন। ৫. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ওয়েট অ্যান্ড ড্রাই পদ্ধতিতে সেচকাজ সম্পাদন করুন। ৬. সর্বোপরি বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হোন। এতে আপনার লাভ, দেশের লাভ। ৭. বিদ্যুৎসেবা প্রাপ্তিতে আপনার যে কোনো অভিযোগ বা তথ্যের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের হটলাইন নম্বর ১৬৯৯৯-এ যোগাযোগ করুন।