এসএসসি পরীক্ষা-২০২৪

করোনার পর পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে পরীক্ষা

মো. নাঈমুল হক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৪, ০৮:১৭ এএম
করোনার পর পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে পরীক্ষা
  • বাংলা প্রথম পত্রে অনুপস্থিত ৯৭৩১, বহিষ্কার ছয়
  • দাখিল ও  কারিগরিতে অনুপস্থিত ৯৬২৮, বহিষ্কার ১৮
  • বিদেশে আট কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে ৩৫২ জন 
  • কমেছে প্রায় ৪৮ হাজার পরীক্ষার্থী
  • সীমান্তে সংঘর্ষের কারণে অনুপস্থিতদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ

অনিয়মিত কম থাকায় এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে 
—মহিবুল হাসান চৌধুরী,  শিক্ষামন্ত্রী

করোনা মহামারির পর প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে শুরু হয়েছে সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) বা সমমানের পরীক্ষা-২০২৪। এবার মোট ২০ লাখ ২৪ হাজার পরীক্ষা দিচ্ছে। যা গত বছরের থেকে ৪৮ হাজারের মতো কম। প্রথম দিন এসএসসিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা। কারিগরি ও মাদ্রাসায় হয়েছে যথাক্রমে বাংলা দ্বিতীয় পত্র ও কুরআন পরীক্ষা। এবার অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৯ হাজার ৩৫৯ জন। এর মধ্যে এসএসসিতে অনুপস্থিত ৯ হাজার ৭৩১ জন। দাখিল ও কারিগরি পরীক্ষায় অনুপস্থিত  ৯ হাজার ৬২৮ জন। অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে সারা দেশে বহিষ্কৃত হয়েছে ২৪ জন। এবার বিদেশি আট কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে ৩৫২ জন। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে সংঘর্ষের কারণে শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা হলে তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। 

জানা গেছে, করোনার কারণে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছর শুধু তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে তত্ত্বীয় পরীক্ষা নেয়া হয়। এরপর ২০২২ ও ২০২৩ সালের পুনর্বিন্যাস করা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এসএসসি পরীক্ষা হয়। ২০২২ সালে এসএসসিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিতের মতো আবশ্যিক বিষয়েও পরীক্ষা হয়। তবে বিভাগভেদে অন্তত তিনটি বিষয়ের ওপর পরীক্ষা হয়নি। আর সর্বশেষ ২০২৩ সালে সব বিষয়ের ওপর পরীক্ষা হলেও সিলেবাস ছিল সংক্ষিপ্ত।

৯ বোর্ডে অনুপস্থিত ৯৭৩১, বহিষ্কার ছয় : এসএসসি পরীক্ষা ২০২৪ সালের সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডে প্রথম দিনে বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষায় সারা দেশে অনুপস্থিত ছিল ৯ হাজার ৭৩১ জন পরীক্ষার্থী। এ ছাড়া অসদুপায় অবলম্বন করায় ছয় শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সাথে নিয়ম না মানায় বহিষ্কার হয়েছেন কুমিল্লা বোর্ডের একজন কক্ষ পরিদর্শকও। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী— সাধারণ ৯ বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৪ লাখ ১৮ হাজার ২৯২ জন। এর মধ্যে উপস্থিত ছিল ১৪ লাখ আট হাজার ৫৬১ জন। অনুপস্থিত ৯ হাজার ৭৩১ জন। মোট পরীক্ষার্থীর হিসাবে সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডে অনুপস্থিতির হার শূন্য দশমিক ৬৯ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি অনুপস্থিতি ঢাকা বোর্ডে। এ বোর্ডে দুই হাজার ৩৪৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বোর্ডে ৮০৯ জন, রাজশাহীতে এক হাজার ১৮১, বরিশালে ৬৮২, সিলেটে ৫৬৪, দিনাজপুরে এক হাজার ৪৩, কুমিল্লায় এক হাজার ৩৭০, ময়মনসিংহে ৬০৪ ও যশোর বোর্ডে এক হাজার ১৩৩ জন অনুপস্থিত ছিল।

মাদ্রাসা ও কারিগরিতে অনুপস্থিত ৯৬২৮, বহিষ্কার সাত : দাখিলের কুরআন মাজিদ ও তাজভিদ পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল সাত হাজার ৬৬০ জন শিক্ষার্থী। আর অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে বহিষ্কার হয়েছে সাতজন। গতকাল বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিলে (ভোকেশনাল) বাংলা-২ পরীক্ষায় প্রথম দিনে অনুপস্থিতির সংখ্যা  ষ এরপর পৃষ্ঠা ২ কলাম ১

এক হাজার ১৬৮ জন। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্যানুযায়ী— মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে সারা দেশে ৭১৮টি কেন্দ্রে মোট পরীক্ষার্থী ছিল দুই লাখ ৪৮ হাজার ৪১৭ জন। তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিল দুই লাখ ৪০ হাজার ৮৩৭ জন। অনুপস্থিত সাত হাজার ৬৬০ জন। আর অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে বহিষ্কার হয়েছে সাতজন। মোট শিক্ষার্থীর হিসাবে অনুপস্থিতির হার ৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। অন্যদিকে, কারিগরি বোর্ডের অধীনে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিলে (ভোকেশনাল) ৭০৯টি কেন্দ্রে মোট পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ১৬ হাজার ২০৩ জন। এর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ২৩৫ জন। অনুপস্থিত এক হাজার ১৬৮ জন। এ ছাড়া কারিগরিতে বহিষ্কার হয়েছে ১১ শিক্ষার্থী। মোট পরীক্ষার্থীর হিসাবে অনুপস্থিতির হার ১ দশমিক ৭০ শতাংশ।

বিদেশে আট কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ৩৫২ জন : বিদেশে আটটি কেন্দ্রে ৩৫২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। কেন্দ্রগুলোর নাম ও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা— জেদ্দা ৭৪, রিয়াদ ৪৮, ত্রিপলী দুই, দোহা ৮২, আবুধাবি ৩৭, দুবাই ৩৬, বাহরাইন ৪৫, সাহাম, ওমান ২৮।

অভিভাবকদের জটলায় কেন্দ্রে প্রবেশে বিঘ্ন : রাজধানীর মতিঝিল, বনশ্রী, মিরপুর এলাকা পরিদর্শনে দেখা যায়, এসএসসি পরীক্ষার্থী, অভিভাবক ও অফিসগামী মানুষদের কারণে রাস্তায় প্রচুর জটলা তৈরি হয়। এর ফলে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছাতে দীর্ঘ সময় হাঁটতে হয়েছে। কয়েক কিলোমিটারের যানজটে সকাল ১০টায়ও অনেক শিক্ষার্থীকে কেন্দ্রে পৌঁছাতে দেখা গেছে। এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী অভিভাবকদের জটলা না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্ষতির কথা চিন্তা করে আমরা পরিদর্শনে যাইনি। যদিও আমাদের মন্ত্রণালয়ের টিম পরিদর্শনে থাকবে। নিজের সন্তানের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে এই জড়ো হওয়া থেকে বিরত থাকি।

সীমান্তে সংঘর্ষের কারণে অনুপস্থিতদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার নির্দেশ : শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল বলেন, অনিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমায় এবার এসএসসির পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। সীমান্ত সংঘর্ষের ব্যাপারে মহিবুল হাসান বলেন, মিয়ানমারের বর্ডার এলাকার সাথে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ চলছে। সংঘর্ষে কারণে সেখানে কোনো শিক্ষার্থী  অনুপস্থিত থাকলে আমরা তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে পারব। চট্টগ্রাম বোর্ড তাদের জন্য সে ব্যবস্থা নেবে।

এসএসসিতে কমেছে পরীক্ষার্থী : ২০২৩ সালের চেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কম। গত বছর এ পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করেছিল ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন। সেই হিসাবে এবার পরীক্ষার্থী কমেছে ৪৭ হাজার ৯৭১ জন। এ বছর অর্থাৎ, ২০২৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন। পরীক্ষার্থী কমায় এবার কেন্দ্র সংখ্যাও কমেছে। গত বছর তিন হাজার ৮১০টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হয়। এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৭০০টিতে।