- ভরমৌসুমেও ঊর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের দাম
- অস্থিরতা বিরাজ করছে বাজারে
- সিন্ডিকেটের কারণেই বাড়ছে দাম
- রোজাকে কেন্দ্র করে দাম বাড়ছে
- সবজির বাজারে ফের ঊর্ধ্বগতি
শীত মৌসুমে নিত্যপণ্য ও সবজির বাজার কিছুটা কমার কথা থাকলেও এবার দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। তবে শীত শেষ হতে না হতেই বাড়তে শুরু করেছে সবজির দাম। প্রতিটি সবজির দাম আগের চেয়ে বেশি দেখা গেছে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে। তাছাড়া রমজান সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে প্রতিযোগিতা করে। সাধারণ মানুষ বাজারে গিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী জিনিস কিনতে পারছে না। তবে অনেকে মনে করছেন সামনে রমজানকে কেন্দ্র করে একটি সিন্ডিকেটচক্র দাম বাড়াচ্ছে। এতে মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে আবারও বেড়েছে কিছু কিছু সবজির দাম।
সাধারণ মানুষের দাবি, বিগত বছরের মতো রমজান শুরুর আগে থেকেই নিত্যপণ্যের বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়তে শুরু হয়েছে। তবে রোজায় যেসব পণ্যের দাম বাড়ে, তা অসাধু চক্রের কারণেই হয়ে থাকে। সমাধানে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় আশ্বাস দিলেও তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এতে বোঝা যাচ্ছে, ভোক্তার জন্য সরকারের দেয়া শুল্ক ছাড়ের সুবিধা চলে যাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীদের পকেটে। রাজধানীর কাঁঠালবাগান বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা আর মিনিকেট ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি। মসুর ডাল বক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি দরে। মুগ ডাল ১৭৫, খেসারি ১১০, বুটের ডাল ১০০, ছোলা ১০০, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৩ এবং খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪৯ টাকায়। আর প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫, খোলা চিনি ১৪০, দুই কেজির প্যাকেট ময়দা ১৫০, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ এবং খোলা সরিষার তেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ১৯০ টাকায়।
বাজার করতে আসা এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, আমরা সারা বছরই তো বেশি দামেই সবজি কিনে খেলাম। সিজন তো খুব বেশি কাজ করল না। কখনো অনেক বেশি দামে কিনি, আবার কখনো কিছুটা কম দামে কিনি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতকালীন সবজি এখন শেষদিকে। আবারও নতুন করে বাজারে সবজি আসবে। সব মিলিয়ে দাম একটু বাড়তি। এমনকি আসন্ন রমজান মাসেও সবজির বাজার চড়া থাকবে বলে ধারণা তাদের। এর কারণ ব্যাখ্যা করে বলছেন, একটি সিজনের (ঋতু) শেষ, আরেকটির শুরু— এমন সময়েই আসছে রোজা। যে কারণে সবজির দাম বাড়তি থাকতে পারে।
সবজির বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। তাছাড়া ফুলকপি ৫০, বাঁধাকপি ৫০, ব্রকলি ৫০ টাকা করে পিস বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায় পেঁয়াজকলি, লম্বা বেগুন, কচুরমুখী, উচ্ছে, ধুন্দল, বরবটির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০, লাল ও সাদা আলু ৪০, নতুন দেশি রসুন ১৫০, চায়না রসুন ২০০, ভারতীয় আদা ২০০ থেকে ২২০, চায়না আদা ২২০ থেকে ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, গতকাল আলুর দাম কমেছে পাঁচ টাকা এবং চায়না আদার দাম বেড়েছে ২০ টাকা।
প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। এছাড়াও শালগম ৫০, টমেটো ৫০, পেঁয়াজকলি ৬০, মটরশুঁটি ৮০-১০০, মুলা ৪০, দেশি গাজর ৪০, বেগুন ৮০, শসা ৮০ থেকে ১০০, ক্ষিরা ৬০, করলা ১৬০, পেঁপে ৪০, মিষ্টিকুমড়া ৪০, ঢেঁড়স ১২০, চিচিঙ্গা ৬০, ধুন্দল ১০০, বরবটি ১৪০, কচুরলতি ১০০, সজনে ২০০, কচুরমুখী ১২০, কাঁচামরিচ ৬০, ধনেপাতা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারে দেখা যায়, প্রতিটি মাছের ওজন অনুযায়ী ইলিশ ১৭০০, রুই ৩৮০, কাতল ৪০০, কালিবাউশ ৫০০, চিংড়ি ৭০০ টাকা, কাঁচকি ৫০০ টাকা, কৈ মাছ ২৫০, পাবদা ৪০০, শিং মাছ ৪০০, টেংরা ৬০০, মেনি ৫০০, কাজলি ১১০০, বোয়াল ৬০০, রূপচাঁদা ১০০০, শোল ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
তাছাড়া আরও দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৯৮-২১০, কক ২৮৩-৩০০, লেয়ার ২৮৫-২৯০, দেশি মুরগি ৫০০, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মুরগির লাল ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায় এবং সাদা ডিম ১৩০ টাকা। সবজি ব্যবসায়ী জাবের বলেন, শীতের শেষে সবজির দাম তুলনামূলক বাড়ে। এবার রোজার মাসটা এমন সময় আসছে, যখন শীতের সবজির শেষ পর্যায়ে। আবার নতুন সবজিরও শুরুর দিকে। তাই বলা যায়, এবার রোজায় সবজির দাম বেশিই থাকবে।
রূপস নামের এক ক্রেতা বলেন, অনেকে দামের কারণে গরুর মাংস কেনা ছেড়ে দিয়েছিলেন। মাঝখানে দাম কমানোয় ক্রেতা বেড়েছিল। এখন আবার দাম বাড়া শুরু করেছে। রমজান মাসে গরুর মাংসের দাম বেশ বাড়বে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বর্তমানে মোটামুটি স্থিতিশীল আছে ডলারের দাম, ডলারের জোগানও বাড়ানো হয়েছে আমদানির জন্য। বাকিতে পণ্য আমদানির সুযোগ দেয়া হয়েছে। শিথিল করা হয়েছে এলসি মার্জিন। কমানো হয়েছে শুল্ক। তবুও কমছে না নিত্যপণ্যের দাম। সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধে সময়মতো জোরালো পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে জানান তারা। নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দামে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষকে। দেশে বর্তমানে সরবরাহ সংকট না থাকলেও কিছু অসাধু আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীর একটি অংশ রমজান সামনে রেখে কীভাবে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির করে তুলছে, তার তদন্ত হওয়া দরকার।