- আন্দোলনে ৩৯০ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
- রাজপথের ভূমিকা ও সাংগঠনিক দক্ষতায় পাঁচ নেতা আলোচনায়
- ভাই গ্রুপের অনুসারীর ১৭ নেতার নামও সবার মুখে মুখে
- ঢাবি সিন্ডিকেটের দুই ডজন নেতার নামও বিশেষ তালিকায়
আসছে ছাত্রদলের নতুন কমিটি। থাকছে না রাশেদ জুয়েলের নেতৃত্ব। চূড়ান্ত আন্দোলন সময়ে বিএনপির ভ্যানগার্ড-খ্যাত ছাত্রদলের নেতৃত্ব দুর্বলতা প্রকাশ্যে এসেছে। দ্বাদশেও সফল হয়নি বিএনপির এক দফার আন্দোলন। অতীতে স্বৈরাচার এরশাদের পতনসহ গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের ছাত্রসংগঠনটি অন্যতম শক্তি থাকলেও সরকার পতন কিংবা খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে কোনো ভূমিকাই দেখাতে পারেনি। দলটির সিনিয়র নেতারা বলছেন, বর্তমান কমিটিতে সিন্ডিকেট, আঞ্চলিকতা গুরুত্ব পাওয়ায় আন্দোলনের উপযুক্ত সময়ে যোগ্য নেতারা ভূমিকা দেখা পারেনি।
তবে ২৮ অক্টোবরের আগে পরে ঘুঁটি কয়েক জনকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে রাজপথে দেখা গেছে। জ্যেষ্ঠ নেতাদের ভাষ্য, ছাত্রদলের অতীত গৌরব এখন অনেকটাই ম্লান। সারা দেশে ছাত্রদলের জেলার মর্যাদাসম্পন্ন শাখার সংখ্যা ১১৮টি। এর প্রায় অর্ধেক কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। কমিটি থাকলেও ছাত্ররাজনীতির প্রাণকেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনেকটা অস্তিত্ব সংকটে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের অবস্থান এখন অনেকটাই আড়ালে চলে গেছে। নেতৃত্বের সেতুপথ অনেকটাই রুদ্ধ। যোগ্যতাকে অগ্রাধিকার না দিয়ে ভাই গ্রুপ ও আঞ্চলিকতাকে অগ্রাধিকার দেয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি বলেও মনে করা হচ্ছে।
বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ছাত্রদলের সাবেক দুই সভাপতি আমার সংবাদকে বলেন, ছাত্রদলের বর্তমানে ৩৯০ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি রয়েছে। তারা যদি এক সঙ্গে রাজপথে নামতেন তাহলে অবশ্যই আন্দোলনে বড় আলোড়ন সৃষ্টি হতো। খালেদা জিয়ার মুক্তি থেকে সরকার পতন কর্মসূচিতে সেই ভূমিকা দেখা যায়নি। যার মূল কারণ নিশ্চয়ই ছাত্রদলের অযোগ্যতা। কমিটি হয়েছে খুশি হয়েছে। কমিটি হয়েছে ভাই আঞ্চলিকতার। এখনি সময় আগামীতে সতর্কতার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়-২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে সভাপতি ও সাইফ মাহমুদ জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির পাঁচ নেতার নাম ঘোষণা করা হয়। একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বরে ৩০২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ ষ এরপর পৃষ্ঠা ১১ কলাম ৪
কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট আন্দোলনে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে শ্রাবণকে সরিয়ে রাশেদ ইকবাল খানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। তবে যে অভিযোগে শ্রাবণকে সরিয়ে দেয়া হয় আন্দোলন সময়ে অনেকটা তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। ২৮ অক্টোবরের পর বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের শীর্ষ নেতারা যখন আত্মগোপনে চলে যায় তখন শ্রাবণকে দেখা ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে আন্দোলনের ভূমিকা দেখাতে। যেই ভূমিকা ছাত্রদলের শীর্ষ পদের নেতাদের দেখা যায়নি। নেতৃত্বের পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান আমার সংবাদকে বলেন, আন্দোলন সময়ে আমাদের সাংগঠনিক কিছু দুর্বলতার বিষয় সামনে এসেছে। সেগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। আমাদের কেন্দ্র থেকে ছাত্র সংগঠন সব কিছুতে আমরা শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করছি। দুর্বলতা বাধাগুলো কাটিয়ে উঠতে আমাদের সাংগঠনিক ফোরামে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনে চলছে। চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমাদের প্রক্রিয়াগুলো অব্যাহত থাকবে।
রাজপথের ভূমিকা ও ত্যাগীদের মধ্যে আলোচিত : সাংগঠনিক দক্ষতা, দলের জন্য ত্যাগ এবং ২৮ অক্টোবরের আগে পরে রাজনৈতিক ভূমিকার উপযুক্ত সময়ে যারা রাজপথের অগ্রভাগে ছিলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দলের আদর্শ বাস্তবায়ন করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের নাম জানিয়েছেন দলটির মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা। অন্তত দুই সপ্তাহ পর্যন্ত প্রায় তিন ডজন নেতার সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদক। তাতে ত্যাগী, সাংগঠনিক এবং বিচক্ষণতা উল্লেখে বিশেষ করে পাঁচ নেতার নাম পাওয়া যায়। তারা হলেন— ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি নাছির উদ্দীন নাছির, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রকিবুল ইসলাম রাকিব, আমান উল্লাহ আমান, ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়াল, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া।
এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য আলোচনায় রয়েছেন ছাত্রসংগঠনটির সহসভাপতি তানজিল হাসান, মো. মুতাছিম বিল্লাহ, মাহবুব মিয়া, আক্তার হোসেন, মারুফ এলাহি রনি, করিম প্রধান রনি। যুগ্ম সম্পাদককদের মধ্যে মনজুরুল ইসলাম রিয়াদ, এইচ এম আবু জাফর, সোহেল রানা, সাফি ইসলাম, মমিনুল ইসলাম জিসান, ফারুক আহমেদ, নিজামুদ্দিন রিপন।
ভাই গ্রুপের অনুসারীর ১৭ নেতা বেশি আলোচনায় :
বিএনপির নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী, রিজভী ও সোহেল গ্রুপ থেকে সহ সভাপতি নাসির উদ্দিন নাসির, সহসভাপতি। বিএনপির নির্বাহী কমিটির ছাত্র-বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলের অনুসারীর মধ্যে রয়েছেন— ১.আক্তারুজ্জামান আক্তার সহসভাপতি, ২. শাফি ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক ৩. রিয়াদ উর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক। এ ছাড়া যুবদল সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকুর অনুসারীর মধ্যে রয়েছেন— ১. নিজাম উদ্দিন রিপন, সহসভাপতি ২. রাকিবুল ইসলাম রাকিব, ১ নং যুগ্ম সম্পাদক। চট্টগ্রাম গ্রুপের মধ্যে সাংগঠনিক দক্ষতায় সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন— ১. আবু আফসান ইয়াহিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক। ২৮ অক্টোবরের পর দুঃসময়ে রাজপথের আন্দোলনে সবচেয়ে আলোচিত নেতা সাবেক ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের অনুসারী হিসেবে রয়েছেন— ১. মো. মুতাছিম বিল্লাহ, সহসভাপতি, ২. জহির রায়হান আহমেদ, যুগ্ম সম্পাদক।
বরিশাল গ্রুপের (আলোচিত ছাত্রদল নেতা হাসান মামুন) অনুসারী— ১. তানজিল হাসান, সহ সভাপতি, ২. আবু জাফর যুগ্ম সম্পাদক। উত্তর বঙ্গ গ্রুপের( ছাত্রদল নেতা আলিম ,মতিন, হিরু, রুম্মন ) অনুসারী— ১. শেখ আল ফয়সাল, সহসভাপতি, ২. মাহবুব মিয়া, সহসভাপতি। নরসিংদী গ্রুপের (সাবেক ছাত্রদল নেতা আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল) অনুসারী— ১. আকতার হোসেন, সহসভাপতি, ২. করিম প্রধান রনি, সহসভাপতি। এ ছাড়া নরসিংদী গ্রুপের (আকরাম- শ্যামল) অনুসারীর মধ্যে রয়েছেন— ১. মারুফ এলাহি রনি, সহ সভাপতি, ২. শ্যামল মালুম, সহসভাপতি।
ঢাবিতে সেশন-ভিত্তিক যারা আলোচনায় : ছাত্রদলের নেতৃত্বের ধারাবাহিকতায় সিনিয়র দিক বিবেচনা করে সব সময় কিছু নাম এগিয়ে থাকে। ছাত্রদলের কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৫-০৬ সেশনের মধ্যে আলোচনায় রয়েছে ছাত্রদলের সহসভাপতি— ১. তানজিল হাসান; ২. তবিবুর রহমান সাগর; ৩. শেখ আল ফয়সাল; ৪. মো. মুতাছিম বিল্লাহ; ৫. মো. ঝলক মিয়া; ৬. জুবায়ের আল মাহমুদ রিজভী; ৭. সৈয়দ সাইফুজ্জামান। ২০০৬-০৭ সেশনে— ১. রিয়াদ মো. ইকবাল হোসেন (সহসভাপতি); ২. কামরুজ্জামান আসাদ (সহসভাপতি); ৩. রোকনুজ্জামান রোকন (সহসভাপতি); ৪. রাকিবুল ইসলাম রাকিব (১ নং যুগ্ম সম্পাদক); ৫. আবু আফসান ইয়াহিয়া (সাংগঠনিক সম্পাদক) ২০০৭-০৮ সেশনের মধ্যে রয়েছেন— ১. নিজাম উদ্দিন রিপন; ২. মাহবুব মিয়া; ৩. আক্তারুজ্জামান আক্তার; ৪. আকতার হোসেন; ৫. নাছির উদ্দীন নাছির; ৬. করিম প্রধান রনি; ৭. মারুফ এলাহি রনি ও ৮. শ্যামল মালুম।
বর্তমান কমিটিতে থাকা শীর্ষ দুই নেতা আমার সংবাদকে বলেন, আন্দোলন সময়ে ব্যর্থতার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এই কমিটি মূলত খুশি করার কমিটি ছিল। আগামীতে ব্যবসায়ী ভাই গ্রুপ বাদ দিয়ে যদি আন্দোলনের ভূমিকা, সাংগঠনিক দক্ষতা বিবেচনা করে ছোট ছোট করে কমিটি হয় তাহলে ছাত্রদল পুরোনো ঐতিহ্য ফিরে আসবে।