বিতরণ ও আদায়ের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে
—ইকতেদার আহমেদ অর্থনীতি বিশ্লেষক
- শিল্প খাতে বেড়েছে ১৯ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা
- ব্যবসা-বাণিজ্যে বেড়েছে তিন হাজার ৪৪৭ কোটি
- ভোক্তায় বেড়েছে দুই হাজার ৩৪৩ কোটি
- নির্মাণ খাতে বেড়েছে দুই হাজার ৬৭৬ কোটি
- পরিবহনে কমেছে ৪৭৩ কোটি
২০২৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, ভোক্তা, কৃষি ও নির্মাণ খাতে বেড়েছে ঋণ বিতরণ। শুধু কমেছে শুধু পরিবহন খাতে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ১২৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আর একই বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৩৮ হাজার ৩৪২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। সেই হিসাবে ব্যাংক খাতে ডিসেম্বর প্রান্তিকে ঋণ বিতরণ বেশি হয়েছে ৬৫ হাজার ২১৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণে শীর্ষে উঠে এসেছে শিল্প খাত।
তথ্য বলছে, গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে মৌলিক শিল্প খাতে বিতরণ করা হয়েছে ছয় লাখ ১২ হাজার ৮৬৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আর এর আগে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বিতরণ করা হয়েছিল পাঁচ লাখ ৯৩ হাজার ২৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসে শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ বেশি হয়েছে ১৯ হাজার ৫৭২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের পরিস্থিতি আগের চেয়ে স্বাভাবিক হচ্ছে। তাই প্রতিটি আর্থিক সেক্টর ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এসব কারণে ঋণ বিতরণ বেড়েছে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পর আবার নতুন উদ্যমে শিল্পোদ্যোক্তারা ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন। শিল্প-কলকারখানার চাকাও ঘুরছে আগের মতো। এতে দেশের অর্থনীতিও গতি পাচ্ছে। দেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের ৮৪ ভাগ নেতৃত্ব দেয়া তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আগের অবস্থানে ফিরেছে। এমনকি অন্যান্য সেক্টরও ঘুরে দাড়াচ্ছে। এ জন্য সব খাতেই ঋণ বিতরণের পরিমাণ বাড়ছে।
এ বিষয়ে কথা বললে অর্থনীতি বিশ্লেষক ইকতেদার আহমেদ দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, ঋণ শুধু বিতরণ করলে হবে না, ঋণ আদায়েও গুরুত্ব দিতে হবে। ঋণ বিতরণ ও আদায়ের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যাংখাতের ঋণ বিতরণ নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। কারণ খেলাপি ঋণের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। খেলাপি আদায় হচ্ছে না। খেলাপি কমাতে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন কৌশল নিয়েছে। এ জন্য ঋণ বিতরণের সময় সতর্ক থাকতে হবে যে টাকাগুলো আসলে কোথায় যাচ্ছে। যদি ফেরত না এলে তাহলে ঋণ বিতরণের পরিমাণ বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে মৌলিক শিল্প খাতের মধ্যে মেয়াদি ঋণ বিতরণ হয়েছে তিন লাখ চার হাজার ৭৫৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর এর আগে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বিতরণ করা হয়েছিল তিন লাখ এক হাজার ২১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সেই হিসাবে ডিসেম্বর প্রান্তিকে বেশি বিতরণ করা হয়েছে তিন হাজার ৫৪৪ কোটি ২২ লাখ টাকা। আর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে চলতি মূলধন হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে তিন লাখ আট হাজার ১০৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ২০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। আর এর আগে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে চলতি মূলধন হিসেবে বিতরণ করা হয়েছিল দুই লাখ ৯২ হাজার ৭৯ কোটি শূন্য চার লাখ টাকা। সেই হিসাবে ডিসেম্বর প্রান্তিকে বেশি বিতরণ করা হয়েছে ১৬ হাজার ২৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মেয়াদি ঋণের চেয়ে চলতি মূলধন হিসাবে বেশি বিতরণ করা হয়েছে তিন হাজার ৩৪৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা। আর এককভাবে ঋণ বিতরণে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্যবসা ও বাণিজ্য খাত। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে এ খাতের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৩০ হাজার ৪৩০ কোটি লাখ টাকা। যা মোট ঋণের ৩৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আর সেপ্টেম্বর শেষে এ খাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল চার লাখ ৯৫ হাজার ৯৫২ কোটি কোটি ৭৪ লাখ টাকা। সেই হিসাবে ডিসেম্বর প্রান্তিকে বেশি বিতরণ করা হয়েছে ৩৪ হাজার ৪৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে গ্রাহকদের বিভিন্ন পণ্য কেনার বিপরীতে ভোক্তা ঋণ বিতরণ বেড়েছে। ডিসেম্বর শেষে এ খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩২ হাজার ৮৫৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আর এর আগে সেপ্টেম্বর শেষে এ খাতের বিতরণকৃত ঋণ ছিল এক লাখ ৩০ হাজার ৫১০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। সেই হিসাবে ডিসেম্বর প্রান্তিকে ভোক্তা ঋণ বেড়েছে দুই হাজার ৩৪৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা। তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে নির্মাণ খাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৪ হাজার ৪৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৮ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। আর এর আগে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে নির্মাণখাতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল এক লাখ ২১ হাজার ৩৭০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। সেই হিসাবে ডিসেম্বর প্রান্তিকে নির্মাণ খাতে বেশি বিতরণ করা হয়েছে দুই হাজার ৬৭৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে পরিবহন খাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ২৩১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের শূন্য দশমিক ৭৩ শতাংশ। আর এর আগে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে পরিবহন খাতে বিতরণ করা হয়েছিল ১১ হাজার ৭০৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সেই হিসাবে ডিসেম্বর প্রান্তিকে এই খাতে ঋণ বিতরণ কমেছে ৪৭৩ কোটি ৫২লাখ টাকা। এ ছাড়া, ডিসেম্বর প্রান্তিকে কৃষি খাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ৯১৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৫ শতাংশ। আর এর আগে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কৃষি খাতে বিতরণ করা হয়েছিল ৭১ হাজার ৭৮৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা। সেই হিসাবে ডিসেম্বর প্রান্তিকে কৃষি খাতে বেশি বিতরণ করা হয়েছে পাঁচ হাজার ১৩২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, অন্যান্য খাতে দেয়া হয়েছে ৪৯ হাজার ৯৯৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর এর আগে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বিতরণ হয়েছিল ৪৮ হাজার ৫০৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। সেই হিসাবে ডিসেম্বর প্রান্তিকে অন্যান্য খাতে ঋণ বিতরণ বেশি হয়েছে এক হাজার ৪৮৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা।