- দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অধিভুক্ত হচ্ছে ৯ কলেজ
- পর্যায়ক্রমে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে যুক্ত করার পরিকল্পনা
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমনিতেই সমস্যা রয়েছে
—ড. মনজুর আহমেদ, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ৯টি সরকারি কলেজ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পাঁচটি কলেজ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চারটি কলেজ। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শতরূপা তালুকদার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে। শিক্ষাবিদরা বলেন, দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ৯ কলেজকে অধিভুক্ত করায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান কমার শঙ্কা রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মান বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন তারা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনা ও অনুশাসন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিম্নোক্ত কলেজগুলোকে অধিভুক্ত করার জন্য এ বিভাগ থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এমতাবস্থায়, ওই অনুশাসন যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যকরী পদক্ষেপ যেমন: বিদ্যমান বিধি-বিধান সংশোধন (প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে) ও অপরাপর করণীয় বিষয় সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে এ বিভাগে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। চট্টগ্রামের কলেজগুলো হলো— চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, হাজী মুহম্মদ মহসিন সরকারি কলেজ, স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ, বোয়ালখালী সরকারি কমার্স কলেজ ও সাতকানিয়া সরকারি কলেজ। রাজশাহীর অধিভুক্ত কলেজগুলো হলো— রাজশাহী সরকারি কলেজ, সরকারি সিটি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ।
জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর পড়াশোনার মান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন আছে। ঠিকমতো ক্লাস না করে পরীক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়ার অভিযোগ আছে। বাস্তবতা ও চাহিদার মধ্যে সমন্বয় না করেই দীর্ঘদিন ধরে ঢালাওভাবে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কলেজে স্নাতক (সম্মান) চালু করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ কলেজেই উচ্চশিক্ষায় পড়ানোর মতো পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। শিক্ষার্থী ও কলেজের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সব কলেজকে ঠিকমতো দেখভাল করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এসব কলেজ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জনে সক্ষম হচ্ছে না। এ কারণে ২০১৭ সালে সর্বপ্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধীনে সাত কলেজকে যুক্ত করা হয়। কিন্তু সাত কলেজের কাঙ্ক্ষিত মানোন্নয়ন নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের ভোগান্তির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। নানা ধরনের হয়রানিতে বছরে কয়েকবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এর মাঝেও নতুন করে ৯টি কলেজকে অধিভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি জেলায় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইচ্ছা রয়েছে সরকারের। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজগুলোকে যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে এক বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী এমনটি জানিয়েছেন।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ আমার সংবাদকে বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কলেজগুলোর দেখাশোনা করার জন্য। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া কেন ভালো হচ্ছে না? এটা নিয়ে পর্যালোচনা করা দরকার। কিন্তু এর জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কলেজগুলো যুক্ত করাই সমাধান নয়। এটা ভালো ফল নিয়ে আসবে বলে মনে হয় না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমনিতেই সমস্যায় রয়েছে। সেখানে নতুন কলেজ যুক্ত হলে সমস্যা বাড়ার শঙ্কা থেকে যায়। আমরা সাত কলেজের পরিস্থিতি জানি। ঢাবির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণে কলেজের শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ রয়েছে। সাত কলেজের লেখাপড়ার মান বেড়েছে কিনা সেটাও নিশ্চিত না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতির ব্যাপারে এ শিক্ষাবিদ বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেয়ার পরিবর্তে যোগ্যদের নিয়োগ দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়টির বিকেন্দ্রীকরণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জনবল ও বাজেট বাড়াতে হবে। শিক্ষক ও অবকাঠামো সমস্যা দূর করতে হবে। সমাধান এখানেই খুঁজতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবু তাহের আমার সংবাদকে বলেন, গতকাল আমাদের এ সংক্রান্ত একটা সভা হয়েছে। সেই সভায় অধিভুক্তির সার্বিক প্রক্রিয়া নিয়ে কথা হয়েছে। এই কলেজগুলোর আলাদা উইং থাকবে। তাদের পরীক্ষা, ভর্তি ও অন্যান্য কার্যক্রম আলাদাভাবে গ্রহণ করা হবে। আমরা কলেজগুলোকে তাদের সব ডাটা দিতে বলেছি। সাত কলেজের মতো ভোগান্তির কোনো বিষয় থাকবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের কিছু হবে না। বরং কলেজগুলোর মান আরও বাড়বে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কলেজগুলোর কার্যক্রমের মিল থাকবে না। কলেজগুলো তাদের মতোই পরিচালিত হবে।