- বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা
- এপ্রিলজুড়ে থাকবে তাপপ্রবাহ
গরমে পানিবাহিত রোগ বেড়ে যায়। বিশুদ্ধ খাবার পানি নিশ্চিতের পাশাপাশি শিশু ও বয়স্কদের বিশেষ যত্ন নিতে হবে
—অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ, জনস্বাস্থ্যবিদ
দেশে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে ডায়রিয়া, জ্বর, আমাশয়ের মতো রোগবালাই বাড়ছে। রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রসহ (আইসিডিডিআর,বি) বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, চিকিৎসা নিতে আসা বেশিরভাগ রোগীই ডায়রিয়া আক্রান্ত। সাধারণ সময়ে আইসিডিডিআর,বিতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি থাকে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ পর্যন্ত। তবে বর্তমানে হাসপাতালটিতে দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। সর্বশেষ তথ্যমতে আইসিডিডিআর,বিতে গত রোববার ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৩৪, শনিবার ৫২৫, শুক্রবার ভর্তি হয়েছিলেন ৫৯৫ জন। চিকিৎসকরা বলছেন, কদিন ধরেই অতিরিক্ত গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়ে গেছে। অনিরাপদ পানি ও খাবার গ্রহণের কারণে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে।
আইসিডিডিআর,বিতে পাঁচ বছর বয়সি আদনানকে নিয়ে এসেছেন যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা আসমাত আরা। তিনি বলেন, এক সাপ্তাহ আগে ছেলের হঠাৎ করে পাতলা পায়খানা শুরু হয়; সঙ্গে জ্বরও আসে। স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ খাইয়েছি। কিন্তু কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে এখানে নিয়ে এসেছি। এখন তার ছেলে আগের চেয়ে ভালো আছে বলে জানান। আদনানের মতো শতাধিক শিশু ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর আইসিডিডিআর,বিতে চিকিৎসাধীন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে যে পরিমাণ রোগী ভর্তি আছে, ঈদের ছুটি শেষে ঘরমুখো সব মানুষ রাজধানীতে ফিরলে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তবে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছে আইসিডিডিআর,বি কর্তৃপক্ষ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। সাধারণত দিনে তিন বা এর চেয়ে বেশিবার পাতলা পায়খানা হতে শুরু করলে তার ডায়রিয়া হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। গরম এলেই ডায়রিয়া সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। বিশেষ করে শিশু-কিশোর ও বয়স্করাই এ রোগে বেশি ভোগেন। তাদের মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শহরে ট্যাপের পানি সেপটিক ট্যাংক বা স্যুয়ারেজ লাইনের সংস্পর্শে দূষিত হয়ে পড়ে। অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন, যেখানে-সেখানে ও পানির উৎসের কাছে মলত্যাগ, সঠিক উপায়ে হাত না ধোয়া, অপরিচ্ছন্ন উপায়ে খাদ্য সংরক্ষণ এবং ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে এ সময় দোকান, রেস্তোরাঁ বা বাসায় পচন ধরা ফ্রিজের খাবার গ্রহণ ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে ধরে নেয়া হয়।
আইসিডিডিআর,বি ছাড়াও বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট ঘুরে দেখা গেছে, অনেকে এসেছেন ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি, হাঁচি-কাশির চিকিৎসা নিতে। তাছাড়া দেশজুড়েই বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে তীব্র গরমে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এপ্রিল মাসজুড়েই দেশে থাকবে তাপপ্রবাহ। এ সময় দেশের কোনো কোনো জেলায় ৪২ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা পৌঁছাতে পারে।
চলমান তাপপ্রবাহে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগবালাই ও প্রতিকার নিয়ে আমার সংবাদের এ প্রতিবেদক কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, গরমে সবচেয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশু ও বয়স্করা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এ বয়সিদেরই ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হার বেশি। ডায়রিয়া মূলত পানিবাহিত রোগ। গরমে যেহেতু শরীরে পানির চাহিদা বেশি থাকে; তাই আমাদের বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করতে হবে। যতটুকু সম্ভব ঠাণ্ডা যায়গায় অবস্থান করতে হবে। গরমে খাবার অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। খাবার গ্রহণের পূর্বে ভালো আছে কি না দেখে খেতে হবে। বাইরে বের হলে ছাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। কোনো কারণে অসুস্থতা অনুভব করলে নিকটস্থ হাসপাতালে যেতে পরামর্শ দেন তিনি।