- পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ নেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়
- কাঙ্ক্ষিত ফলাফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা
- বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব শিক্ষার্থী পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ চান
ফার্স্ট, সেকেন্ড ও থার্ড এক্সামিনার থাকায় পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজন নেই
—অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু, উপাচার্য, রাবি
পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ
থাকা উচিত
—ড. হাফিজুর রহমান, পরিচালক, শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগ, ঢাবি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের মাস্টার্সের সদ্য রেজাল্ট প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে সিজিপিএ তিন পয়েন্ট ২৫-এর উপর পেয়েছে মাত্র চারজন। আর ৬৪ জনের মধ্যে তিন পয়েন্টের উপরে পেয়েছে মাত্র ২৮ জন শিক্ষার্থী। মাস্টার্সের এমন রেজাল্টে বিস্মিত হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ওই ব্যাচের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অনার্সের সিজিপিএ তিন পয়েন্ট ২৫-এর উপরে। হঠাৎ এমন রেজাল্ট কেন? এমন প্রশ্নের সদুত্তর নেই শিক্ষার্থীদের কাছে। তাদের কয়েকজন বলছেন, আমরা যে পরীক্ষা দিয়েছি, তাতে এত খারাপ ফলাফল আসার কথা না। নিশ্চয় কোথাও সমস্যা হয়েছে। একটি ব্যাচের একসঙ্গে এত শিক্ষার্থীর ফলাফল খারাপ হতে পারে না। আমরা যে পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করব, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের জন্য সেই সুযোগ রাখেনি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স-মাস্টার্সের সেমিস্টার ফাইনাল বা বছর শেষে পরীক্ষার ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ নেই। এর ফলে প্রত্যাশার তুলনায় কম ফলাফল পাচ্ছেন শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ। কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না পাওয়ায় চাকরির জন্য ভালো প্রতিষ্ঠানে আবেদন থেকে পিছিয়ে পড়ছেন তারা। এ কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে অসন্তোষ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলছে— ফাস্ট, সেকেন্ড ও থার্ড এক্সামিনারের সমন্বয়ে ফলাফল তৈরি হওয়ায় এ সুযোগের কোনো প্রয়োজন নেই। অন্যদিকে শিক্ষাবিদরা মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ সুযোগ রাখা উচিত।
জবি থেকে সদ্য মাস্টার্স পাস করা মাহফুজ নাফি বলেন, মাস্টার্সের দ্বিতীয় সেমিস্টারের টেলিভিশন, পাবলিক রিলেশন, এডভারটাইজিং— এই তিন কোর্সে আমি শতভাগ কনফিডেন্স নিয়ে চ্যালেঞ্জ করতে চাই। কিন্তু আমাদের এখানে চ্যালেঞ্জের নিয়ম নেই। বিভাগের চেয়ারম্যান আমাদের সঙ্গে একমত থাকার পরও আইন না থাকায় তিনি কিছুই করতে পারছেন না। আইন যেহেতু নেই, আইন কেন হবে না— এই মর্মে আমরা ভিসি বরাবর দরখাস্ত নিয়ে যাব। আমরা চাই, পরবর্তী ব্যাচগুলোতে যাতে এ সমস্যা তৈরি না হয়। এর একটি স্থায়ী সমাধান দরকার।
নাবিল হাসান বলেন, বর্তমান চাকরির বাজারে অন্যান্য স্কিলের সাথে সিজিপিএ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রথম সারির বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকে আবেদন করার যোগ্যতা ৩.৫০। গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান এবং এনজিওর রিসার্চ এসিস্টেন্সের মতো পদগুলোতে সিজিপিএর রিকোয়ারমেন্ট থাকে। কিছু দিন আগে একটি ফেলোশিপের আবেদন করার সময় খেয়াল করলাম তারা একটি নির্দিষ্ট সিজিপিএ চেয়েছে। কোনো প্রার্থীর সিজিপিএ কম থাকলে তাকে বর্ণনা করতে হবে কেন তার সিজিপিএ কম। এ ধরনের নানা রকম বিষয়ে আমরা বাধার সম্মুখীন হচ্ছি এবং আগামীতেও হবো। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের খাতা পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ রাখা হয়নি।
পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ না থাকার কারণ জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু আমার সংবাদকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালনার নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যরা সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। আমাদের এখানে ফাস্ট এক্সামিনার, সেকেন্ড এক্সামিনার আছে। এ ছাড়া প্রয়োজনে থার্ড এক্সামিনারের কাছে আমরা খাতা পাঠাই। এ কারণে এখানে পুনর্মূল্যায়নের কোনো প্রয়োজন নেই।’
পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করেই সেই সুযোগ রেখেছে। এ ব্যাপারে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনর্মূলায়নের সুযোগ আছে। একজন শিক্ষার্থী যদি মনে করে সে আরো বেশি নম্বর পেতো, তাহলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তার খাতা পুনর্মূলায়নের আবেদন করতে পারে। এ সুযোগ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির আবেদনকারীদের জন্যও আমরা রেখেছি। তারা চাইলে খাতা চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করতে পারে। আবেদন পাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের নিযুক্ত একজন প্রতিনিধির সামনে আমরা পুনরায় সেই খাতা মূল্যায়ন করে থাকি।’
খাতা পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ রাখার কথা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ থাকা উচিত। বিশেষ করে সাবজেক্টিভ পরীক্ষার ক্ষেত্রে এটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনার কাছে, যেটি চার ফুট আরেকজনের কাছে সেটি পাঁচ ফুট হতে পারে। সে জন্য পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ থাকলে শিক্ষার্থীরা ন্যায্য অধিকার পাবে।’