- নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপির ৭৬ নেতাকে বহিষ্কার
- ভোটে থাকা মন্ত্রী এমপির স্বজনদের বিরুদ্ধে নীরব আ.লীগ
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দল— বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি দলের নির্বাচন-সংশ্লিষ্টদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়— মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য এবং নিকটাত্মীয়দের নির্বাচন রাখা যাবে না। ওই সিদ্ধান্ত মোতাবেক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-এমপিদের ফোন করে দলের পক্ষ থেকে বলা হয় পরিবারের সদস্য বা স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিতে। কিন্তু সেই নির্দেশনা মানেননি মন্ত্রী-এমপিরা; বরং উল্টো নিজের মতো করে প্রার্থী থাকার পক্ষে নানা ব্যাখ্যা তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-এমপি। দলীয় নির্দেশনা না মানলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কিন্তু প্রথম ধাপে ভোটে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন একজন প্রতিমন্ত্রীর আত্মীয় ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থী প্রত্যাহার না করলেও এ বিষয়ে কোনো অ্যাকশনে যায়নি আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরাম। নমনীয়তা দেখিয়ে ভোটের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথা জানায় আওয়ামী লীগ।
অন্যদিকে বিএনপিও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেয়। বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে যেতে পারে শুরুতে এমন গুঞ্জন শোনা গেলেও দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন দেয়া হয়— বিএনপি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেবে না এবং দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা এ দলটি সিদ্ধান্ত নেয়, দলের নির্দেশনা অমান্য করে যারা নির্বাচনে অংশ নেবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নীতিনির্ধারণী ফোরামের এমন সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন শুরু করে দিয়েছে দলটি। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তাদের মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অন্তত ৭৬ প্রার্থীকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। বিএনপির এই বহিষ্কারাদেশকে ত্বরিত অ্যাকশন হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
গতকাল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়, প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় দল ও অঙ্গসংগঠন থেকে নতুন করে আরও তিন জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। এই বহিষ্কৃত নেতারা হলেন— ময়মনসিংহ উত্তর জেলার হালুয়াঘাট উপজেলা বিএনপির সদস্য আব্দুল হামিদ। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচন করছেন। শেরপুরের শ্রীবর্দী উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাম মোস্তফা (সোনাহার)। তিনি ২নং পৌর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। অপর একজন হলেন চট্টগ্রাম বিভাগের রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা মংসুইউ চৌধুরী। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন। এর আগে গত শুক্রবার ৭৩ জনকে বহিষ্কার করেছে দলটি। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা অটুট রাখতে এ শক্ত অবস্থান নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। ভবিষ্যতেও যারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করবে তাদের বিষয়ে একই অবস্থান নেবে বিএনপি। দলটি মনে করে শৃঙ্খলার বাইরে গেলে তার জন্য কোনো ছাড় নেই।
নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল বিএনপির হাইকমান্ডের, ওই সিদ্ধান্ত আমলে না নিয়ে যারা নির্বাচনে অংশ নিলেন— বিএনপির হাইকমান্ড ভোটে অংশ নেয়া সেই নেতাদের বিরুদ্ধে ঠিকই অ্যাকশন নিয়েছে। কিন্তু এ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন ও পরিবারের সদস্যদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরিয়ে দেয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেই সিদ্ধান্ত সিকিভাগও বাস্তবায়ন করতে পারেনি আ.লীগ। দলীয় নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও আওয়ামী লীগ সেই ঘোষণা বাস্তবায়নে শিথিলতা প্রদর্শন করছে। প্রথম ধাপে ভোটে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা ভোটের মাঠ না ছাড়ার পর পরবর্তী করণীয় জানতে চান সাংবাদিকরা।
দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভোট গ্রহণের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করার ইঙ্গিত দেন। দলটির নেতাকর্মীরা মনে করেন, শেষ সময়ে এসে এই স্বজনরা ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা খুবই কম।