- ৩০-৪০ শতাংশ
- ভ্রাম্যমাণ অস্বাস্থ্যকর খাবার বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
- তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়া জেলাগুলোয় আক্রান্তের হার বেশি
গরমে খাবার গ্রহণে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। এ সময় শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে
—অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ, জনস্বাস্থ্যবিদ
তীব্র গরমে দেশজুড়ে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। দাবদাহে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন শিশু থেকে বৃদ্ধরা। প্রতিদিন দেশের তাপমাত্রায় নতুন রেকর্ড যুক্ত হচ্ছে। এদিকে বিভিন্ন জেলায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। রাজধানীসহ সারা দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। যাদের বেশিরভাগই পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে (আইসিডিডিআর,বি) আট বছরের ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন উত্তরার বাসিন্দা ইসমাইল আলী।
তিনি বলেন, তিন দিন আগে ছেলে কোচিং থেকে ফেরার পথে আখের রস খেয়েছিল। সেদিন রাতেই শুরু হয় পেটব্যথা; সঙ্গে পাতলা পায়খানা। ফার্মেসি থেকে স্যালাইন এনে খাইয়েছিলাম। কিন্তু কোনোভাবেই পেটব্যথা কমছিল না। স্থানীয় ডাক্তারের পরামর্শে আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখন সে আগের চেয়ে ভালো আছে।
ফুটপাতে বিক্রি হওয়া বেলের শরবত খেয়ে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছয় বছরের শিশু মারিয়া আক্রার। মেয়ের পাশে বসে আছেন মা আসমা আক্তার। তিনি বলেন, চার দিন আগে বিকালে ঘুরতে বের হয়ে ফেরার পথে মেয়ে ফুটপাতে বিক্রি করা শরবত খায়। পরদিন সকালে তার বমি ও ডায়রিয়া শুরু হয়। স্যালাইন খাওয়ালেও কোনো পরিবর্তন আসেনি। একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে গেলে চিকিৎসক আইসিডিডিআর,বিতে নিয়ে আসতে বলেন। এখানে দুদিন হলো ভর্তি আছে। অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে। কলেরা হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত আইসিডিডিআর,বিতে সাধারণ সময়ে রোগী ভর্তি থাকে ২০০ থেকে ৩০০ জন। তবে দেশে চলমান দাবদাহে বর্তমানে গড়ে রোগী ভর্তির সংখ্যা ৫০০ থেকে ৬০০ ছাড়িয়ে গেছে।
হাসপাতালটির তথ্য বলছে, গরমে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা বেশিরভাগ রোগীই শিশু। যারা বাইরের বিভিন্ন তরল-জাতীয় খাবার গ্রহণ করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। এমন অবস্থা শুধুমাত্র আইসিডিডিআর,বি নয়, রাজধানীর প্রায় সবকটি হাসপাতালেই ডায়রিয়া, জ্বর, ঠাণ্ডা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন অনেকে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়া যশোর, চুয়াডাঙ্গা, দিনাজপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন বাড়ছে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। কোনো কোনো জেলায় পর্যাপ্ত স্যালাইনও পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে চলমান তাপপ্রবাহে ২১ জেলার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গবেষণা বলছে, ফুটপাতের চা-দোকানে ব্যবহূত পানির ৯৪ শতাংশে মলের জীবাণু, ৪৪ শতাংশ পানিতে অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া ও ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ পানিতে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় ভারী ধাতুর উপস্থিতি রয়েছে।
পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ার কারণ সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, প্রচণ্ড গরমে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। অনেকে রাস্তাঘাটে অস্বাস্থ্যকর শরবত ও পানি খান।
এসব খাবার বেশিরভাগই অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতিতে তৈরি হয়। গবেষণায় দেখা যায়, এসব খাবারে শরীরের জন্য বিভিন্ন ক্ষতিকর জীবাণু রয়েছে। যে কারণে হাসপাতালগুলোয় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়া টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, জন্ডিসসহ এ ধরনের রোগীও বাড়তে পারে। এ সময় যারা বিভিন্ন শ্বাসজনিত রোগে আক্রান্ত, তাদেরও শ্বাসকষ্ট, কাশিসহ হাঁপানি দেখা যাচ্ছে। যারা গরমে বাইরে গিয়ে কাজ করবেন, তাদের দুই ঘণ্টা পরপর ছায়ায় বসে ১৫-২০ মিনিটের জন্য বিশ্রাম নিতে হবে। গরমে শরীর থেকে লবণ বের হয়ে যায়। এজন্য প্রচুর পানি, লবণমিশ্রিত পানি, ওরস্যালাইন, ডাব খেতে হবে। যে কোনো খাবার গ্রহণের পূর্বে সচেতন হতে হবে। কারণ, গরমে খাবার অনেকক্ষণ ভালো থাকে না। যে কারণে খাবারে অল্প পরিমাণ জীবাণু থাকলেও সেটি এ গরমে অনেক বেড়ে যায়, যা খেলে ডায়রিয়া হয়। এ সময় শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।