অসীম কুমার (ছদ্মনাম) রাজশাহীর প্রতিষ্ঠিত কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর ইনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের আউটসোর্সিংয়ে চাকরি নেন। এক সময় চাকরি স্থায়ী হবে এমন কথা শুনেছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। সেই স্বপ্ন থেকেই অন্যত্র চাকরির চেষ্টা করেননি। বর্তমানে সরকারি চাকরির বয়স হারিয়ে পড়েছেন বিপাকে। স্ত্রী-পরিবার নিয়ে কোথায় যাবেন, কী করবেন, জানেন না তিনি।
এমন সমস্যায় শুধু অসীম কুমারই পড়েননি, ইসির আইডিইএ প্রকল্পে কর্মরত দুই হাজার ২৬১ কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই পড়েছেন। কারণ, আগামী ২৫ জুন এ প্রকল্পের দ্বিতীয় মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে। ইসি দীর্ঘদিন ধরে নিয়োজিত অভিজ্ঞ জনবল বাদ দিয়ে নতুন করে লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ফলে টানা দুই মেয়াদে কর্মরত থাকা অভিজ্ঞ এসব কর্মীবাহিনী জীবনের মাঝ পথে এসে বেকার হচ্ছেন।
জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) এই পদগুলোতে স্থায়ী কর্মকর্তা নেবে। এ মাসের ১৭ মে তাদের নিয়োগ পরীক্ষা। আউটসোর্সিংয়ে কর্মরতদের নতুন করে নিয়োগ না দেয়ার নানা চেষ্টা করেছে ইসি। পরীক্ষার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করতে চেয়েছিল ইসি। পরবর্তীতে তারা রিট করে পরীক্ষার সুযোগ নেয়। বর্তমানে ইসির বিভিন্ন দায়িত্বে থাকার কারণে পড়ারও সুযোগ পাচ্ছেন না। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের প্রথমদিকে ‘আইডিইএ’ প্রকল্পের মাধ্যমে আউটসোর্সিংয়ে জনবল নিয়োগ দেয় নির্বাচন কমিশন। এ প্রকল্পে এক হাজার ১৩০ জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ পায়। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ের দপ্তরে তারা কাজে যোগদান করেন। মাত্র ১৩ হাজার টাকা বেতনে এক বছর মেয়াদি এ চাকরির মেয়াদ ২০২০ পর্যন্ত বাড়ানো হয় পরবর্তীতে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে চার হাজার টাকা বেতন বাড়ানো হয়। ২০২০ সালে প্রকল্পটি ‘আইডিইএ (২য় পর্যায়)’ নামে অদ্যাবধি চলমান রয়েছে। বিভিন্ন সময় প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্তরা তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য দাবি করলেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পে দুই হাজার ২৬১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত আছেন। এর মধ্যে ২০ জন সহকারী পরিচালক, ২০ অ্যাসিস্টেন্ট মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার, একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, ৮৪ জন সহকারী ইঞ্জিনিয়ার, ২০ জন উপসহকারী পরিচালক, সাতজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা/ব্যক্তিগত সহকারী, ৩১ জন সিনিয়র কম্পিউটার অপারেটর, ১৫ জন অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর, ছয়জন ইলেকট্রিশিয়ান, চারজন সহকারী স্টোর কিপার, ১০ জন কাউন্টার, ৪৫ জন অফিস সহায়ক, দুজন প্যাকিং সুপারভাইজার, চারজন মেশিন সুপারভাইজার, ৩৫ জন ডেসপ্যাস অপারেটর, চারজন প্যাকিং অপারেটর, দুজন কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্স ইনচার্জ, ৩৬ জন স্ক্যানিং অপারেটর, পাঁচজন কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স অপারেটর, এক হাজার ৩৭২ জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, ৫১৯ জন স্ক্যানিং অ্যান্ড ইক্যুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স অপারেটর ও ১৫ জন ড্রাইভার রয়েছে।
প্রকল্পে চাকরি করা ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা জানান, সাত বছর যাবত চাকরি করছি। এখনো প্রকল্প শেষ হওয়ার ঘোষণাকে ভয় লাগে। বিভিন্ন সময় চাকরি স্থায়ীকরণের কথা বলা হলেও অদ্যাবধি স্থায়ী করা হয়নি। স্থায়ী হচ্ছে হচ্ছে অপেক্ষায় অন্য চাকরির পেছনে সময় দেয়া হয়নি। এখন সরকারি চাকরির বয়স নেই। সর্বসাকুল্যে আমরা বেতন পাই ১৮ হাজার টাকার মতো। অন্যান্য কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। তারা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, জাতীয় পরিচয়-সংক্রান্ত সব কাজই আমাদের করতে হয়। অথচ আমাদের নিয়ে কেউই ভাবছে না। দৃশ্যমান তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। আমাদের বাদ দেয়া হচ্ছে। এত বছর কাজ করার পরও আমাদের অভিজ্ঞতার কোনো মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। এমনকি আমাদের পরীক্ষা থেকে বাদ দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। আদালতে রিট করে আমরা সেই সুযোগ ফিরিয়ে আনি। তবে পরীক্ষার সুযোগ পেলেও প্রস্তুতির সুযোগ পাচ্ছি না। কর্তৃপক্ষ এমন সময় পরীক্ষা রেখেছেন, যখন সারা দেশে চলছে উপজেলা নির্বাচন। এ সময় দিনরাত দায়িত্ব পালন শেষে পড়ার সুযোগ কোথায়?
যদিও নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, এখানে আবেগের কোনো জায়গা নেই। আইন অনুযায়ী আমাদের কাজ করতে হবে। দীর্ঘ সময় কাজ করার পর তাদের অভিজ্ঞতাকে কেন গ্রহণ করতে চাচ্ছেন না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদেরই নিতে হবে এমন কোনো চুক্তি আমাদের হয়নি।