জুলাই-মার্চ

বাণিজ্য ঘাটতি কমলেও বেড়েছে আর্থিক হিসাবে

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক প্রকাশিত: মে ১৫, ২০২৪, ১০:৫৬ এএম
বাণিজ্য ঘাটতি কমলেও বেড়েছে আর্থিক হিসাবে
  • ঘাটতি কমেছে ৯৮৮ কোটি ডলার
  • আর্থিক হিসাবে বেড়েছে ৬৩৩ কোটি ডলার

নানা পদক্ষেপে বাণিজ্য ঘাটতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে আনতে পেরেছে বাংলাদেশ। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ঘাটতি কমেছে ৯৮৮ কোটি ডলার। বাণিজ্য ঘাটতি কমায় চলতি হিসাবেও উদ্বৃত্ত দেখা দিয়েছে। তবে একই সময়ে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি বেড়েছে ৬৩৩ কোটি ডলার।  বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৭৪ কোটি ডলার। আর আগের বছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল এক হাজার ৪৬৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ মাসে মাসে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ৯৮৮ কোটি ডলার। একটি দেশের আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয়ের মধ্যকার পার্থক্যই হচ্ছে সেই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে আমদানি ১৫ দশমিক ৪২ শতাংশ কমে চার হাজার ৫৬২ কোটি ডলারে নেমেছে। এর আগের বছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল পাঁচ হাজার ৩৯৩ কোটি ডলার।

অপরদিকে একই সময়ে রপ্তানি তিন দশমিক ৯৯ শতাংশ বেড়ে চার হাজার ৮৭ কোটি ডলার হয়েছে। এতে বাণিজ্য ঘাটতি কমে এখন ৪৭৪ কোটি ডলারে নেমেছে। এর পেছনে ভূমিকা রেখেছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাণিজ্য ঘাটতি কমায় চলতি হিসাবে বড় ধরনের উদ্বৃত্ত তৈরি হয়েছে। অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে উদ্বৃত্ত আছে ৫৭৯ কোটি  ডলার। যদিও গত অর্থবছরের একই সময়ে ৩২৯ কোটি ডলারের ঘাটতি ছিল। সাধারণভাবে চলতি হিসাবের মাধ্যমে দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝানো হয়। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে সাধারণত কোনো ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে ঋণ নিতে হয়। 

এছাড়া চলতি হিসাবের ভারসাম্য উদ্বৃত্ত থাকায় বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।  এদিকে চলতি হিসাব ইতিবাচক থাকায় ডিসেম্বর শেষে সার্বিক ভারসাম্য হিসাবের ঘাটতির পরিমাণও কিছুটা কমেছে। অর্থবছরের ৯ মাসে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৭৫ কোটি ডলার, এক বছর আগে যা ছিল ৮৪৮ কোটি ডলার। অর্থাৎ সামগ্রিক লেনদেনে (ওভারঅল ব্যালেন্স) ঘাটতি কমেছে প্রায় অর্ধেক। লেনদেন ভারসাম্যের হিসাব বলতে বিভিন্ন দিক থেকে বা বিভিন্ন হিসাবে একটি দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি ও সরকারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অন্য সব দেশের নাগরিক, সরকার ও প্রতিষ্ঠানের যে লেনদেন হয়, তার সামগ্রিক হিসাব বোঝায়। অপরদিকে বাণিজ্য ঘাটতে কমলেও বেড়েছে আর্থিক হিসাবের ঘাটতি। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে বাংলাদেশের আর্থিক হিসাবের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯২৫ কোটি ডলার, যা গত বছরের জুলাই-মার্চে ছিল ২৯০ কোটি ডলার। আর চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ ঘাটতি ছিল আট দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার। বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ দ্রুত কমা, বিনিয়োগ প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন কারণে এমন হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী গত মার্চ পর্যন্ত বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে ১৭ দশমিক শূন্য সাত বিলিয়ন ডলার। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা মাত্র ছয় দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি। 

ডলার সংকট মেটাতে বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি বিদেশি ঋণ বাড়ানোর চেষ্টা করছে সরকার এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ (এডিবি) বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিচ্ছে। আবার ধরে রাখা ডলার ব্যাংকে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপও চলমা রয়েছে। বর্তমানে আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে বিভিন্ন শর্ত মানতে হচ্ছে। এসব শর্তের অন্যতম ছিল আগামী জুনে রিজার্ভ রাখতে হবে ২০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। 

তবে এ শর্ত শিথিল করে এখন ১৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার রাখতে বলা হয়েছে। আইএমএফ রিজার্ভের বিষয়টি শিথিলতার সঙ্গে দেখলেও অন্য শর্ত পরিপালনে জোর দিয়েছে। গত বুধবার সংস্থটির চাপে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাত টাকা বাড়িয়ে ডলারের মধ্যবর্তী দর নির্ধারণ করেছে ১১৭ টাকা। একইদিন সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে এবং নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে।