শরিয়ািভত্তিক ইসলামি ব্যাংক

সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা আমানত হারাল

জাহাঙ্গীর আলম আনসারী প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২৪, ০২:১৮ পিএম
সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা আমানত হারাল
  • ডিসেম্বরে ছিল ৪ লাখ ২২ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা
  • জানুয়ারিতে ৪ লাখ ১৩ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা

একসময় দেশের ব্যাংক খাতের মধ্যে মানুষের সবচেয়ে বেশি আগ্রহের জায়গা ছিল শরিয়ািভত্তিক পরিচালিত ইসলামি ব্যাংকগুলো। সুদমুক্ত লেনদেন হওয়ায় দিন দিন ইসলামি ব্যাংকগুলোর প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়তে থাকে। তারপর ইসলামি ব্যাংকগুলোর ব্যবসা দেখে কিছু কনভেনশনাল ব্যাংকও তাদের পলিসি পরিবর্তন করে ইসলামি শরিয়ািভত্তিক ব্যাংকব্যবস্থা পরিচালনা শুরু করে। কিন্তু ইসলামি ব্যাংকগুলোর ওই সুনাম বেশিদিন থাকেনি। ঋণ জালিয়াতিসহ নানা অনিয়মের কারণে ইসলামি ব্যাংকগুলো দুর্নামের সঙ্গে দুর্বলও হয়ে পড়ে। ব্যাংকগুলোতে দেখা দেয় তারল্য সংকট। এমনকি চলতি বছরের জানুয়ারিতেও দেশের ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোতে আমানত কমেছে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা। এছাড়া জানুয়ারিতে ইসলামি ব্যাংকগুলোয় আমানত কম হলেও তারা  ঋণ বিতরণ করেছে বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে দেশের পূর্ণাঙ্গ ১০টি ইসলামি ব্যাংক, কয়েকটি প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ইসলামিক শাখা ও উইন্ডোগুলোর আমানতের পরিমাণ ছিল চার লাখ ২২ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। আর চলতি ২০২৪ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ইসলামি ব্যাংক, প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ইসলামি শাখা ও উইন্ডোগুলোর আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার লাখ ১৩ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা। সে হিসেবে এক মাসে ইসলামি ব্যাংকগুলোর আমানত কমেছে আট হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। অপরদিকে ইসলামি ব্যাংকগুলো গত ডিসেম্বরের চেয়ে জানুয়ারিতে ঋণ বিতরণ বেশি করেছে চার হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। 

খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিকে আমানত কমছে, অপরদিকে ঋণ বিতরণ বাড়ছে— এটা প্রমাণ করে ইসলামি ব্যাংকগুলোর অবস্থা ভালো নয়। তাদের আয় হচ্ছে কম, আবার ব্যয় করছে বেশি। ব্যাংকগুলোতে সব সমস্যার মূলে হলো সুশাসন। সুশাসনের অভাবে ইসলামি ব্যাংকগুলোতে এসব সমস্যা দেখা দিয়েছে। একসময় ব্যাংকগুলোর অবস্থা এমন ছিল না। এখানে কর্পোরেট গভর্নেন্স প্রশ্নবিদ্ধ। আমানত কমে যাওয়া মানে এখানে মানুষের আস্থার অভাব আছে। তা না হলে মানুষ ইসলামি ব্যাংকগুলো থেকে আমানত তুলে নেবে কেন? অনিয়ম-জালিয়াতি বন্ধ করে মানুষের আস্থা ফেরাতে না পারলে ব্যাংকগুলো দিন দিন আরও ঝুঁকিতে পড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২৩ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে দেশের পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংকগুলোর আমানত ছিল তিন লাখ ৮৪ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। আর পরের মাস জানুয়ারিতে ইসলামি ব্যাংকগুলোর আমানত কমে দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৭৫ হাজার ৩০৪ কোটি। 

আর প্রচলিত ব্যাংকগুলোর ইসলামিক উইন্ডোগুলোয় গত ডিসেম্বরে আমানত ছিল ১৭ হাজার ২১০ কোটি টাকা। আর পরের মাস জানুয়ারিতে ইসলামিক উইন্ডোগুলোর আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা। সেই এক মাসে প্রচলিত ব্যাংকগুলোর ইসলামিক উইন্ডোগুলোতে আমানত কমেছে এক হাজার ৮১৬ কোটি টাকা।

অপরদিকে প্রচলিত ব্যাংকগুলোর ইসলামি শাখাগুলোতে জানুয়ারিতে আমানত বেড়েছে। তথ্যানুযায়ী প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর ইসলামি ব্যাংকিং শাখায় আমানত বেড়েছে দুই হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর ইসলামি ব্যাংকিং শাখায় আমানতের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ইসলামি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের স্থিতি ছিল চার লাখ ৭৭ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা। আর পরের মাস অর্থাৎ চলতি বছরের জানুয়ারিতে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের স্থিতি দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৮২ হাজার ৩২৫ কোটি। সে হিসেবে জানুয়ারিতে এসব ব্যাংকে ঋণ বিতরণ বেশি হয়েছে চার হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা।

ইসলামি ব্যাংকগুলোর আমানত কমার বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হককে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদেবার্তা দিলেও তিনি রিপ্লাই দেননি। এ বিষয়ে জানতে একটি ইসলামি ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে ফোন দিলে প্রথমে তিনি ফোন রিসিভ করেন। এই ধারার  ব্যাংকগুলোর আমানত কমার প্রসঙ্গ আনলেই তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে আর কথা বলতে চাননি।