দ্রব্যমূল্যের অব্যাহত ঊর্ধ্বগতি, মূল্যস্ফীতি ও ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ কমতির ইস্যুকে সামনে রেখে ফের রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি তার মিত্রদের সক্রিয় করে তুলতে উদ্যোগ নিয়েছে। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে রাজপথে থাকা অন্য বিরোধী দল ও জোট নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠকও করেছে বিএনপি। ওইসব বৈঠক থেকে আন্দোলনের নতুন রূপরেখা তৈরি, কর্মসূচি বাস্তবায়নে করণীয় নির্ধারণ ও দলগুলোর মধ্যে সমন্বয়ে লিয়াজোঁ গঠন, বিএনপির সঙ্গে কর্মসূচিতে জামায়াতে ইসলামীকে একইমঞ্চে সম্পৃক্ত করার প্রস্তাব এসেছে। এসব প্রস্তাবের কতটুকু বাস্তবায়ন হবে, নাকি হবে না— তা এখনই ঠিক করেনি বিএনপি। দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি বৈঠক করে মিত্র দল ও জোট নেতাদের প্রস্তাবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি।
এদিকে, বিএনপির সঙ্গে একমঞ্চে আন্দোলনের বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীও দোটানায় রয়েছে। দলটির একটি বড় অংশ মনে করছে, এই মুহূর্তে বিএনপির সঙ্গে একইমঞ্চে কর্মসূচিতে অংশ নিলে লাভ-লোকসান দুটি দিকই রয়েছে। প্রথমত, গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে গ্রেপ্তার হওয়া জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষনেতাদের জামিনে মুক্তির ব্যাপারে তারা দেশব্যাপী নানা কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে অংশ নিচ্ছে। কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী এখন কোনো টেনশনে নেই। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর গঠিত সরকারের শুরুতেই রাজপথে বিএনপির সঙ্গে একসঙ্গে উঠলে সরকার এই প্রক্রিয়াকে নিজেদের জন্য থ্রেট মনে করবে এবং পরবর্তীতে জামায়াতে ইসলামীর ওপর সরকারি চাপ বাড়বে বলে মনে করছেন দলটির এ অংশের নেতারা। তারা এ-ও মনে করছেন, গত নির্বাচনের আগে জামায়াতে ইসলামী চেয়েছিল একমঞ্চে একসঙ্গে একই কর্মসূচি পালন করতে, কিন্তু এতে কৌশলগত কারণে বিএনপি সায় দেয়নি। তখন একসঙ্গে কর্মসূচি পালন করা হলে রাজপথে সরকারি দলকে মোকাবিলা করা বিরোধী দলগুলোর পক্ষে অনেকাংশে সহজ হতো। দীর্ঘ সময় ধরে করা আন্দোলনের ফলও ঘরে তুলতে পারত। কিন্তু সে সময় বিএনপি নিজেদের কৌশলের অংশ হিসেবে জামায়াতের সঙ্গে একমঞ্চে উঠতে চায়নি। ফলে আন্দোলনে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছায়নি। নতুন সরকারের শুরুতেই বিএনপির সঙ্গে একমঞ্চে আন্দোলনে এখনই যাওয়া জরুরি নয় বলে মনে করছে জামায়াতের এই অংশটি।
অন্যদিকে দলটির একটি অংশ মনে করে, জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সব বিরোধী দলকেই একমঞ্চে আসতে হবে, আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হবে জনগুরুত্বসম্পন্ন ইস্যুগুলো নিয়ে।
সূত্র জানিয়েছে, গত ১২ মে থেকে মিত্র দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয় বিএনপি। ওই বৈঠকের অংশ হিসেবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট, গণফোরাম, গণঅধিকার পরিষদ (নুর), পিপলস পার্টি, গণতন্ত্র মঞ্চ, গণঅধিকার পরিষদ (রেজা), বাংলাদেশ লেবার পার্টি (ইরান), এনডিএম ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। ওই বৈঠক থেকে জামায়াতে ইসলামীকে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে একসঙ্গে একমঞ্চে নিয়ে আসার প্রস্তাব এসেছে। অবশ্য গণতন্ত্র মঞ্চে থাকা ছয়টি দল জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে একমঞ্চে কর্মসূচি পালনে আপত্তির কথা জানিয়েছে বিএনপিকে। তবে পৃথক স্থানে যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী কর্মসূচি পালন করলে এতে মঞ্চের কোনো অসুবিধা নেই বলে বিএনপিকে জানিয়েছে।
সাম্প্রতিককালে বিএনপি তার মিত্রদের সঙ্গে যে বৈঠক করেছে তার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে এমন আভাস পাওয়া গেলেও কোনো পক্ষ থেকেই তা স্বীকার করা হচ্ছে না। নতুন করে আন্দোলন কর্মসূচি পালনে বিএনপির ধারাবাহিক বৈঠকের অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনো বৈঠক হয়েছে কিনা জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার একজন সদস্য এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। পরে দলটির কেন্দ্রীয় সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বিএনপির সঙ্গে লিয়াজোঁর দায়িত্বে থাকা আবদুল হালিমের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার ফোন নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জোট সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি জানান, দলের পক্ষ থেকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বৈঠক করার দায়িত্বে তিনি ছিলেন না, তাকে যে কয়টি দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তা তিনি পালন করেছেন। অবশ্য এর বাইরে তিনি আর কিছু বলতে চাননি।