বিআরটিসি

সাফল্যের ধারায় অদম্য যাত্রা

নুর মোহাম্মদ মিঠু প্রকাশিত: মে ১৮, ২০২৪, ১১:৩৭ পিএম
সাফল্যের ধারায় অদম্য যাত্রা

আধুনিকায়ন ও অগ্রগতিতে বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে এখন সাফল্যের মহাসড়কে অদম্য যাত্রায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন-বিআরটিসি। যে যাত্রার শুরুটা ক্ষণিকের জন্যও ছিল না মসৃণ বরং আধুনিকায়ন ও অগ্রগতির প্রতিটি ধাপেই মোকাবিলা করতে হয়েছে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ। বছরের পর বছর ধরে সংশ্লিষ্টদের বিদ্যমান অনিয়ম-দুর্নীতি আর বহিরাগত ষড়যন্ত্র, ঋণের ভারে ন্যুব্জ ছাড়াও অসংখ্য-অগণিত সমস্যায় জর্জরিত ছিল, সেই বিআরটিসিরই আধুনিকায়ন ও অগ্রগতির রূপকার হিসেবে ইতোমধ্যেই ব্যাপক সুনাম ও খ্যাতি পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই যার বিরুদ্ধে বিআরটিসির অসাধু কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে চলছে বহিরাগতদের ষড়যন্ত্র। মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমেও যাকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা হয়েছিল একাধিকবার। 

যদিও দৃঢ়চেতা, বিচক্ষণ, রাষ্ট্র ও জনবান্ধব এই আমলার ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বের কাছে কোণঠাসা কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বহিরাগতদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বিআরটিসির সুনাম বিধ্বংসী চক্র। এরই মধ্যে তিনি লাভ করেছেন শুদ্ধাচার পুরস্কারও। প্রশাসনিক সক্ষমতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকেও পেয়েছেন ডিও লেটার। শুধু তাই নয়, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আধুনিকায়নের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বার্ষিক উন্নয়ন চুক্তিতেও (২০২১-২২ অর্থবছর) সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার মধ্যে (৯৬.৮৪) সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছে বিআরটিসি। যা সংস্থাটির ইতিহাসে প্রথম এবং এরও নেপথ্যের নায়ক সংস্থাটির সাফল্যের কারিগর দক্ষ প্রশাসক খ্যাত চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম। বিআরটিসি সংশ্লিষ্টরা আমার সংবাদকে বলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় ‘আয় বৃদ্ধি, ব্যয় সংকোচন ও যাত্রীসেবার মান উন্নয়ন’ এই ব্রত নিয়ে যোগদানের পর থেকেই বর্তমান চেয়ারম্যানের নিরলস-নিরবচ্ছিন্ন নেতৃত্বে বিআরটিসিকে করেছেন আধুনিক ও লাভজনক। সেবা সহজীকরণ ছাড়াও তার বিভিন্ন উদ্ভাবনী উদ্যোগের মাধ্যমেই বিআরটিসিকে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের ক্যারিশমা দেখিয়েছেন তিনি।

বিআরটিসি সূত্র জানায়, বর্তমান গাড়ির নম্বর অনুসারে প্রদান করা হয় মেরামত বাজেট, করা হয় মনিটরও। এক্ষেত্রে আগের কোনো চেয়ারম্যান দেখাতে পারেননি স্বচ্ছতা, বরং গাড়ির নম্বরও সংরক্ষণ করা হতো না। পুরাতন গাড়ি নিলামের দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং গত একবছরে দুটি লটে ২৯৪টি বাস নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। যেখানে আগে নিলাম কার্যক্রম আশানুরূপ ছিল না। বর্তমানে ৬০৬টি ভারী গাড়ি মেরামত করে বিআরটিসির গাড়িবহরে সংযুক্ত করে বৃদ্ধি করা হয়েছে রাজস্ব আয়। অথচ আগের কোনো চেয়ারম্যানের আমলে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি তো দূরের কথা গাড়ি মেরামতই হতো নামমাত্র। ডিপো কিংবা ইউনিটগুলোতে ক্রয় করা হয়েছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, যা দ্বারা ভারী মেরামতের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বর্তমানে কারিগর নিয়োগ দিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কাজে দক্ষ করেও তোলা হচ্ছে। দক্ষ ও মানসম্মত জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যেই বিআরটিসি চলতি অর্থবছরে ১৪ হাজার ৭৯৪ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। নিজস্ব প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে আরও সাত হাজার ৩৯২ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। প্রত্যেক ডিপো বা ইউনিটেই নির্মাণ করা হয়েছে র্যাম্প। আধুনিক করা হয়েছে গাজীপুর কেন্দ্রীয় মেরামত কারখানা। যেটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ অবস্থায় পড়েছিল বর্তমান চেয়ারম্যান যোগদানের আগে।  

বিআরটিসি জানায়, বর্তমানে বিআরটিসির বহরে সচল বাস সংখ্যা প্রায় এক হাজার ৩৫০টি। খুব শিগগিরই নতুন করে আরও গাড়ি যুক্ত হবে বিআরটিসির বহরে। সচল করা হয়েছে বিভিন্ন বাস ডিপোতে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা পেট্রোল পাম্পগুলো। যার ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে রাজস্ব আয়; জ্বালানি খাতে সাশ্রয় হয়েছে ব্যয়। ১৯১টি বাসে চালু করা হয়েছে আনলিমিটেড ওয়াইফাই সুবিধা। এক হাজার ২০০ এরও বেশি গাড়িতে ভিটিএস প্রক্রিয়ার সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। গ্রহণ করা হয়েছে ইনহাউজ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও। শুদ্ধাচার, এপিএ, তথ্য অধিকার, সেবা প্রদান প্রতিশ্রুতি, জিআরএস, ই-গভর্ন্যান্স ও উদ্ভাবন কর্মপরিকল্পনা, কম্পিউটার অপারেটরদের ওরিয়েন্টেশন কর্মকর্তাদেরও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এ যাবত বিভিন্ন বিষয়ে ৪২টি প্রশিক্ষণে এক হাজার ৪২০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে ৭৩৫ জনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। আরও ১৩৮ জনের নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রকাশ করা হচ্ছে ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনও। 

শুধু তাই নয়, প্রধান কার্যালয়সহ প্রতিটি ডিপো কিংবা ইউনিটেই চালু করা হয়েছে আইসিটি শাখা। ৮৫ শতাংশ কাজই এখন ই-ফাইলের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের ভর্তি ফিও অনলাইনে প্রদান করা হচ্ছে এবং সিমুলেটর সংযোজন করে আধুনিক করা হয়েছে। যাত্রীসেবা প্রদানের জন্য ‘আমাদের বিআরটিসি’ নামক মোবাইল অ্যাপস চালু করা হয়েছে। প্রতিটি ডিপো বা ইউনিটেই সিসিক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে, যা প্রধান কার্যালয় থেকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। প্রতিটি কার্যালয়েই চালু করা হয়েছে ডিজিটাল হাজিরা। ১১টি রুটে ই-টিকেটিং ও তিনটি রুটে অনলাইন টিকিট ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে। প্রধান কার্যালয় ও ডিপো বা ইউনিটগুলোতে অপেক্ষাগারসহ অন্যান্য স্থাপনাসমূহও দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। প্রধান কার্যালয় ছাড়াও প্রতিটি ডিপো বা ইউনিটেই স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার। আধুনিকায়ন করা হয়েছে প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষ। মতিঝিল বাস ডিপোতে একটি অত্যাধুনিক কাউন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে ইয়ার্ড, র্যাম্প, ওয়াশিং প্লান্ট, পেইন্ট বুথসহ বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

বিআরটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, বিআরটিসি এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠান। প্রধান কার্যালয়সহ ডিপো বা ইউনিটের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতনভাতা প্রতি মাসের এক তারিখে নিজস্ব আয় থেকে পরিশোধ করা হচ্ছে। তিন মাস অন্তর অন্তর গ্র্যাচুইটি সিপিএফ ও ছুটি নগদায়নের টাকাও পরিশোধ করা হচ্ছে অনলাইনে। যার ফলে দূর হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আর্থিক দুর্ভোগ। অথচ একসময় বিআরটিসির জন্য এসব ছিল শুধুই স্বপ্ন। যা বাস্তবে রূপান্তরের নায়ক বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম।

সার্বিক অগ্রগতি ও আধুনিকায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, ‘নতুন গাড়ি নিয়েও যেখানে ছয় কোটি টাকা বেতন দিতে পারেনি বিআরটিসির সাবেক চেয়ারম্যান। সেখানে আমি ১০১ কোটি টাকা দেনার দায় কাঁধে নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণের পরই পরিশোধ করেছি ৮০ কোটি টাকা। আর পুরাতন গাড়ি নিয়েই এখন আমার কর্মচারীদের বেতন দিচ্ছি ১১ কোটি টাকা। আগের চেয়ারম্যান বেতন দেয়ার ভয়ে লোকবলও নিয়োগ দিতো না। সেখানে রাজস্ব খাতে ১২০০ লোকবল নিয়োগ দিয়েছি আমি।’