মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে প্রথম ডিজিটাল তফসিলি ব্যাংক হিসেবে চূড়ান্ত অনুমোদন পেলো ‘নগদ লিমিটেড’। এর মাধ্যমে ডিজিটাল ব্যাংকিং যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। গত ৩ জুন তফসিলি ব্যাংকের তালিকায় ‘নগদ লিমিটেড’কে যুক্ত করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ-সংক্রান্ত অনুমোদনপত্রটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে গ্রহণ করেন নগদ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর এ মিশুক।
২০১৯ সালে ২৬ মার্চ যাত্রা শুরু করে অতি অল্প সময়ের মধ্যে নগদ আজ সাত কোটি গ্রাহকের পরিবার। ৯ দশমিক ১৩ কোটি কাউন্টার আর তিন লাখের বেশি উদ্যোক্তার নিরলস পরিশ্রমে নগদে প্রতিদিন লেনদেন হয় গড়ে ১৩০০ কোটি টাকা। জনপ্রিয়তা ও মানুষের আস্থার তুঙ্গে থাকা নগদ ইতোমধ্যে অর্জন করেছে দেশি-বিদেশি বেশ কিছু সম্মাননা।
নগদের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান জাহিদুল ইসলাম সজল আমার সংবাদকে বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে লাইসেন্স পাওয়াটা অবশ্যই নগদের জন্য গর্বের ব্যাপার। এখন থেকে ব্যাংকিং সেবা নিতে গ্রাহকদের আর ব্যাংকে আসতে হবে না, বরং মানুষের হাতে হাতেই ঘুরবে ব্যাংক। জামানত ছাড়াই নগদ থেকে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ নিতে পারবেন। পাশাপাশি ক্ষুদ্র সঞ্চয় স্কিম চালুসহ সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সব লেনদেন করতে পারবেন গ্রাহক।’
কবে থেকে নগদের ডিজিটাল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হবে জানতে চাইলে কোম্পানিটির মুখপাত্র বলেন, একটি কোম্পানি লাইসেন্স পেলেই সঙ্গে সঙ্গে কার্যক্রম শুরু করতে পারে না। গত বছরের ২৪ অক্টোবর আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া সবগুলো ক্যাটেগরি পূরণ করে আবেদন করেছি। ওই সময়ের মধ্যে আমরা নেটওয়ার্ক আপগ্রেড করাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। চলতি মাসে লাইসেন্স গ্রহণ করার পর এখন সফটওয়্যার আপডেটের কাজ চলছে। আশা করছি আগামী জুলাই মাসে আমাদের যে আট শতাধিক কর্মী ও মার্চেন্ট ব্যাংকার রয়েছেন, তাদের দিয়ে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করব। পর্যায়ক্রমে এটা গ্রাহকের হাতে হাতে পৌঁছাবে। তবে তিনি নির্দিষ্ট দিন-তারিখ জানাননি। নগদ টাকার ব্যবহার কমিয়ে আনা ও লেনদেন আরও সহজ করতে ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ গড়ার উদ্যোগে ডিজিটাল ব্যাংক চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত বছরের জুন থেকে ‘ডিজিটাল ব্যাংক’ চালু করতে আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই বছরের ২৫ অক্টোবর ৫২টি আবেদনের মধ্যে আটটি প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রাথমিকভাবে ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিগুলো হলো ‘নগদ’, এসিআইয়ের ‘কড়ি’, কয়েকটি ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগ ‘ডিজি টেন’, ব্র্যাকের উদ্যোগ ‘বিকাশ’ ও ব্যাংক এশিয়ার উদ্যোগে ‘ডিজিটাল ব্যাংক লিমিটেড’। লাইসেন্স পাওয়া এই কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম পর্যালোচনা করে আরও তিনটি কোম্পানিকে লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
যেসব শর্তে দেয়া হয় ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন : নীতিমালা অনুযায়ী ডিজিটাল ব্যাংকের একটি প্রধান কার্যালয় থাকবে বাংলাদেশে। এই কার্যালয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা ও সাপোর্ট স্টাফদের দপ্তর হিসেবে ব্যবহূত হবে। পাশাপাশি সশরীরে বা ডিজিটাল পদ্ধতিতে গ্রাহকের অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তির কাজটি এই কেন্দ্রীয় দপ্তরে হবে। কিন্তু ডিজিটাল ব্যাংকগুলো প্রচলিত ব্যাংকের মতো সরাসরি কাউন্টারে গ্রাহকদের লেনদেন সেবা দিতে পারবে না। এ ব্যাংকের নিজস্ব কোনো শাখা, উপশাখা, এজেন্ট বা উইন্ডো থাকবে না। এমনকি নিজস্ব কোনো এটিএম/সিডিএম/সিআরএম বা স্পর্শযোগ্য ইনস্ট্রুমেন্টও থাকতে পারবে না।
ডিজিটাল ব্যাংকে কীভাবে অ্যাকাউন্ট খুলবেন গ্রাহক : ডিজিটাল ব্যাংকে হিসাব খোলার পর ভিন্ন কোনো ব্যাংক বা এমএএফএস এজেন্ট, এটিএম বুথ, সিডিএম, সিআরএম নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অনলাইনে অর্থ স্থানান্তর এবং ব্যবহার করতে পারবেন গ্রাহক। নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা যাবে একই পদ্ধতিতে। লেনদেন সহজ করতে ভার্চুয়াল কার্ড, কিউআর কোড বা অন্য কোনো অগ্রসর প্রযুক্তিনির্ভর পণ্য চালু করতে পারবেন ডিজিটাল ব্যাংক।
ঋণ দিতে পারবে ডিজিটাল ব্যাংক : ডিজিটাল ব্যাংক বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে কোনো পর্যায়ের গ্রাহককে ঋণ দিতে পারবে; তবে বৈদেশিক লেনদেনের সুযোগ থাকবে সীমিত। ডিজিটাল ব্যাংক প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স গ্রহণ করতে পারবে এবং ফরেন কারেন্সি হিসাব (এফসি) পরিচালনা করতে পারবে। তাছাড়াও এই ব্যাংক কারো পক্ষে পেমেন্ট বা পরিশোধকারী ব্যাংক হিসেবে কাজ করতে পারবে। এছাড়া প্রান্তিক ও এসএমই খাতে ঋণ দিতে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে নীতিমালায়।
আরও যেসব সেবা থাকবে ডিজিটাল ব্যাংকে : বিদেশে লেখাপড়া, চিকিৎসা, ভ্রমণ বা অন্য কোনো প্রয়োজনে অনুমোদনসাপেক্ষে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করতে পারবেন গ্রাহক। তবে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঋণ, বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পে মেয়াদি ঋণে অর্থায়ন করতে পারবেন না।