জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান

দুর্ঘটনায় আহতদের সেবা দিয়ে প্রশংসিত

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২৪, ১২:৩৬ এএম
দুর্ঘটনায় আহতদের সেবা দিয়ে প্রশংসিত

ঈদের সময় ঘিরে আমাদের বিশেষ প্রস্তুতি ছিল। বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে রোগীরা আসেন, আমরা তাদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করি

—অধ্যাপক ডা. কাজী 
শামীম উজ্জামান, পরিচালক, নিটোর

  • ঈদে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় রোগীদের ছিল বাড়তি চাপ
  • জরুরি বিভাগে ছিলেন পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স
  • চিকিৎসাধীন রোগীদের জন্য ছিল বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), যার প্রচলিত নাম ‘পঙ্গু হাসপাতাল’। হাসপাতালটি মানুষের হাড়ের জটিল সব চিকিৎসার জন্য দেশজুড়ে সুপরিচিত। দেশে হাড়ের চিকিৎসার কেন্দ্রও বলা হয় এ হাসপাতালটিকে। সারা দেশ থেকে তাই সেবা নিতে প্রতিদিন ছুটে আসেন রোগীরা। এক হাজার শয্যার হাসপাতাটিতে সব সময় রোগীতে পরিপূর্ণ থাকে। হাসপাতালটিতে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে রোগীর চাপ বাড়ে প্রতি ঈদেই। সম্প্রতি ঈদুল আজহার সময়ও এর ব্যতিক্রম ছিল না। অন্য সময়ে শুধুমাত্র সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী বেশি থাকলেও ঈদুল আজহায় যুক্ত হয় কোরবানিতে বিভিন্নভাবে আঘাতপ্রাপ্ত রোগী। 

হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের তথ্য অনুসারে, ঈদের দিনসহ পরের ছয় দিনে হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন এক হাজার ৫৩২ জন। যাদের মধ্যে শুধুমাত্র ঈদের দিন চিকিৎসা নিয়েছেন ৩২২ জন। ঈদের দিন রোগীর বাড়তি সংখ্যার কারণ হিসাবে দেখা যায়, কোরবানির পশু দ্বারা আক্রান্ত হয়েই চিকিৎসা নিয়েছেন ১১১ জন। ঈদের এ সময়ে রোগী স্বাভাবিকের চেয়ে এক থেকে দেড়গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিতে হাসপাতালটিতে নেয়া হয়েছিল বিশেষ ব্যবস্থা। চিকিৎসক, নার্সসহ সেবা-সংশ্লিষ্টদের ছুটি সংকোচন করা হয়েছিল। জরুরি বিভাগে রাখা হয়েছিল পর্যাপ্ত জনবল। মজুত ছিল চিকিৎসা সরঞ্জাম। রোগীদের সেবা দেয়ার এমন মনোভাব ও ঈদে চিকিৎসকদের এমন তৎপরতার কারণে হাসপাতালটি প্রশংসিত হয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের কাছে। ঈদের ছুটিতে হাসপাতাটিতে সেবা নেয়া কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেও সেবা নিয়ে তাদের সন্তুষ্টির কথা জানা যায়।

রাজধানীর রামপুরার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন। পেশায় বেসরকারি চাকরিজীবী। প্রতি বছর কোরবানির সময় কসাইয়ের সঙ্গে নিজেও অংশ নেন পশু কাটার কাজে। এ বছর কোরবানির সময় অসাবধানতার কারণে পশু দ্বারা ঈদের দিন গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। অতঃপর হাসপাতালটিতে আসেন চিকিৎসা নিতে। তার সঙ্গে কথা হয় আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, কোরবানির পশু দ্বারা বাম পায়ে আঘাত পাই। ঈদের দিন থাকায় এখানে এসে চিকিৎসা পাব কি না— এ নিয়ে আশঙ্কা কাজ করছিল। কিন্তু জরুরি বিভাগে আসার পর দেখেছি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি রোগী। এখানে চিকিৎসা নিয়ে আমার পায়ের অবস্থা অনেকটা উন্নতির দিকে। ডাক্তার বলেছেন আর এক সপ্তাহ পর স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারব।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে হাসপাতালটির পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ফরিদপুরের রমিজ আলী। তার সঙ্গে হাসপাতালটির সেবা নিয়ে কথা হয় আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ঈদের দিন বোনের বাড়িতে যাওয়ার সময় আমার মোটরসাইকেলের পেছনে ট্রাক থাক্কা দেয়। ফলে ছিটকে পড়ে বাম হাত ও মেরুদণ্ডে আঘাত পাই। আমাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে আসতে বলেন। এখানে ঈদের দিন রাত ১১টা নাগাদ আমাকে নিয়ে আসা হয়। এখানে এলে ডাক্তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি এক সপ্তাহ হতে চলল। এখানে রোগীর চাপ সব সময়ই বেশি। রোগীর চাপের মধ্যেও চিকিৎসক-নার্সরা চেষ্টা করছেন আমাদের সেবা দিতে। শুধুমাত্র ঈদে রোগীদের সেবা নয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসাধীন রোগীদের জন্য বিশেষ খাবারেরও ব্যবস্থা করা হয়। হাসপাতালের তথ্যমতে, প্রায় সাত শতাধিক রোগীর জন্য ঈদে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

ঈদের ছুটিতে সেবা ও বাড়তি রোগীর চাপ সামলানোর নেতৃত্বে ছিলেন নিটোর পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী শামীম উজ্জামান। তার সঙ্গে কথা হয় আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতালে সারা বছরই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ সেবার জন্য ছুটে আসে। ঈদের সময় দুর্ঘটনায় আহতদের সংখ্যা বেড়ে যায়। কোরবানির ঈদে রোগী আরও বাড়ে। কোরবানি করার সময় অনেকে আহত হয়ে আসেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঈদের আগেই আমরা জরুরি মুহূর্তে সেবা দেয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স রোগীদের সেবা দিয়েছেন। জরুরি বিভাগে পর্যাপ্ত জনবল ছিল স্বাভাবিক সময়ের মতোই। চিকিৎসা সরঞ্জাম মজুত রাখা হয়েছিল। দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা যেন ভালো সেবা পান, সে লক্ষ্যে আমরা সব সময় কাজ করে যাচ্ছি।