দূরাবস্থার মধ্যেও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় সানফ্লাওয়ারের

মো ইমরান খান প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২৪, ১২:৩৮ এএম
দূরাবস্থার মধ্যেও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় সানফ্লাওয়ারের
  • তারল্য সংকটে দেউলিয়াত্বের পথে কোম্পানিটি
  • বেতন এবং কমিশন খাতেই মোট ব্যবস্থাপনার ৮০.৫০ শতাংশ ব্যয়
  • লাইফ ফান্ডের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ তারল্যে রূপান্তরযোগ্য

আমাদের কোম্পানি খুব ভালোভাবেই চলছে আমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তুষ্ট
—মেজর (অব.) এমএ মান্নান
চেয়ারম্যান, সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স লি.

গ্রাহকদের বিমাদাবি পরিশোধে সর্বাত্মক মনোযোগী হওয়া উচিত এবং সর্বোচ্চ সংখ্যক ব্যবস্থাপনা ব্যয় সীমিত করা, তা না হলে বিমাগ্রাহকের আস্থা ফেরানো যাবে না 
—ড. হাসিনা শেখ, চেয়ারম্যান, ইন্স্যুরেন্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আর্থিক দুরবস্থার মধ্যেও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় করেছে সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। তারল্য সংকটে দেউলিয়াত্বের পথে কোম্পানিটি। তারপরও ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমাতে পারেনি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। তারল্য সংকটে আটকে আছে শত শত গ্রাহকের বিমাদাবি। নগদ অর্থের অভাবে পরিশোধ করতে পারছে না গ্রাহকদাবি ফলে প্রতিনিয়তই একাধিক গ্রাহক অভিযোগ নিয়ে হাজির হচ্ছেন বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইডিআরএতে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএতে দাখিল করা সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের প্রতিবেদন, পর্যালোচনা করে দেখা যায় ২০২২ সালে ৪১.৩০ এবং ২০২৩ সালে ১৫ শতাংশ অতিরিক্ত ব্যয় করেছে।

এমন আর্থিক দুরবস্থার মধ্যেও একটি কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় বিমা খাতের জন্য অসনি সংকেত হিসেবে দেখছেন খাত সংশ্লিষ্ঠরা। তারা বলেন, তারল্য সংকটে ভোগা কোম্পানিগুলোর প্রধান কাজ হওয়া উচিত সর্বোচ্চ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করা এবং ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমানো। গ্রাহকদাবি পরিশোধ না করে অতিরিক্ত ব্যয় করা জনসাধারণের আস্থার সংকট বাড়াবে। সানফ্লাওয়ার লাইফের অতিরিক্ত খাতভিত্তিক চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ ব্যয় করা হয় কোম্পানি কর্মকর্তাদের বেতন ও কমিশন খাতে, যা মোট ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের ৮০.৫ শতাংশ।

অন্যদিকে কোম্পানির লাইফ ফান্ড, বিনিয়োগসহ অন্যান্য বিষয় পর্যালোচনা করে দেখা যায়, লাইফ ফান্ডের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ তারল্যে রূপান্তরযোগ্য। এবং অবশিষ্ট তহবিলও মানসম্মত নয় বলে নিশ্চত করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। শুধু তাই নয় কোম্পানির দ্বিতীয় বর্ষের নবায়ন প্রিমিয়ামের হারও অনেক কম, যা মাত্র ২ শতাংশ। যার জন্য বিমাপলিসি গ্রহীতারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি।

সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুারেন্স কোম্পানির গ্রাহক পাওনা অর্থাৎ বিমাদাবির পরিমাণ ২২ কোটিরও বেশি। কোম্পানির চেয়ারম্যান মেজর অব এমএ মান্নানের ব্যক্তিগত স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রতিষ্ঠানটির এই দুরবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোম্পানির এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, মেজর এমএ মান্নান নামে-বেনামে বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে যার ফলে ধারাবাহিক লোকসানে কোম্পানি দেউলিয়াত্বের পথে।

এ বিষয়ে কোম্পানির চেয়ারম্যান মেজর অব এমএ মান্নানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি আমার সংবাদকে বলেন, আমাদের কোম্পানি খুব ভালোভাবেই চলছে, আমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তুষ্ট। তিনি আরও বলেন, আগামীতে আমরা বেশ কিছু টাকা পাচ্ছি যার মাধ্যমে আমরা গ্রাহকের অনেক বিমাদাবি পরিশোধ করতে পারব।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর প্রতিবেদন মতে, কোম্পানিটিতে সুশাসনের মারাত্মক ঘাটতি দেখা যায়। কোম্পানিটি নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত কমিশন প্রদান করছে। এ ছাড়াও বেতন, কমিশন খাতে মোট ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের ৮০.৫০ শতাংশ ব্যয় করা হচ্ছে যার সঠিকতা নিয়েও সন্দেহ পোষণ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এ ছাড়াও গত পাঁচ বছরে কোম্পানিটি ৫৭ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় করেছে, যার ফলে কোম্পানিটি গ্রাহকের বিমাদাবিও পরিশোধ করতে পারছে না। এদিকে কোম্পানির লাইফ ফান্ডের ৯০ শতাংশ অর্থই তারল্যে রূপান্তরযোগ্য না।

গ্রাহকদের বিমাদাবি অপরিশোধিত রেখে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় কতটুকু যুক্তিযুক্ত ? এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্স্যুরেন্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হাসিনা শেখ আমার সংবাদকে বলেন, গ্রাহকদের বিমাদাবি পরিশোধে সর্বাত্মক মনোযোগী হওয়া উচিত এবং সর্বোচ্চ সংখ্যক ব্যবস্থাপনা ব্যয় সীমিত করা তা না হলে বিমাগ্রাহক আস্থা ফেরানো যাবে না।