ফের আন্দোলনের শঙ্কা

ব্যাংক থেকে টাকা তোলার হিড়িক

আনোয়ার হোসাইন সোহেল প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২৪, ০৫:১২ পিএম
ব্যাংক থেকে টাকা তোলার হিড়িক
  • সীমিত পরিসরে চালু ইন্টারনেট
  • কবে কারফিউ উঠবে কেউ জানে না

গতকাল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধার দেয়া হয় ছয় হাজার কোটি টাকা
—কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র

চার দিন সেবা বন্ধ থাকার পর গত মঙ্গলবার রাত থেকে সীমিত পরিসরে চালু করা হয়েছে ইন্টারনেট। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ডেটা সেন্টারে আগুনের পর সারা দেশে বন্ধ হয়ে যায় ইন্টারনেট পরিষেবা। ইন্টারনেট না থাকায় ব্যাংক থেকে ইলেকট্রনিক মানি বা ই-মানি লেনদেন করতে না পারায় ডিজিটাল মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) কোম্পানিগুলোর সেবা অনেকটাই ব্যাহত হয়েছে। ওই সময় সারা দেশের ডিজিটাল-মাধ্যম ব্যবহার করে লেনদেনকারীরা পড়েন বিপাকে। কারো কারো বাসা-বাড়ির বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের প্রি-পেইড মিটারের ব্যালেন্স শেষ হয়ে যায়। একই সময়ে ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা সরবরাহ না থাকায় কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হন সাধারণ গ্রাহকরা। যে কারণে বুধ ও বৃহস্পতিবার ব্যাংক খোলার প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়।

এদিকে এখনো ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুরে কেন্দ্রীয়ভাবে বিকাল ৫টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত কারফিউ জারি রয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, শিক্ষার্থীরা ফের আন্দোলনে নামতে পারেন। গতকাল এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন খোদ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও। ফলে অনেকেই নগদ টাকা তুলে রাখছেন, যাতে প্রয়োজনীয় খাতে খরচ করা যায়। 

মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখা থেকে টাকা তুলতে আসা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মহিবুল্লাহ আমার সংবাদকে জানান, ব্যাংকের বুথ তার বাসা থেকে একটু দূরে, সে কারণে পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনি কিছু নগদ টাকা তুলে নিয়েছেন। তিনি আরও জানান, কবে কারফিউ উঠবে কেউ জানে না। তাছাড়া বাজারহাট করতে তো টাকার প্রয়োজন হয়, তাই না। 

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী হামিদ মিয়া বলেন, কদিন ধরে মালামাল আসছে না। মোকাম থেকে ফোন করে বলেছে এমএফএসের (মোবাইল ব্যাংকিং) মাধ্যমে টাকা পাঠাতে, তাই ব্যাংকে এসেছি টাকা তুলতে। গুলশানের একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে আসা রুপালি জানান, কদিন ধরে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে। ভয়ে কেউ বাসা থেকে বের হইনি। গতকাল ভোরে নোয়াখালীতে ভাগনির মেয়ে হয়েছে সিজারে। তাই তার জন্য কিছু টাকা পাঠাতে হচ্ছে। ঘরে বাজার-সদাই মোটামুটি সব শেষ পর্যায়ে আছে। কিছু শপিং করব আর বাড়িতে টাকা পাঠাতে হবে। সে কারণে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে এসেছি। 

এদিকে টানা পাঁচ দিন পর বুধবার ব্যাংক খুলেছে। এর মধ্যে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি এবং রবি  থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা তিন দিন সাধারণ ছুটি ছিল। এ সময় বন্ধ ছিল ইন্টারনেট সেবাও। এতে ব্যাহত হয়েছে ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যাংক সেবাও। ব্যাংক বন্ধ, এটিএম বুথে টাকার স্বল্পতার কারণে নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে গেছে। 

জানা গেছে, গত দুদিনে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জানান, ‘তার দপ্তরের পাবলিকেশন বিভাগ থেকে দেয়া বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবারও ছয় হাজার কোটি টাকা ধার দেয়া হয়েছে। বাকি টাকাগুলো বিভিন্ন মেয়াদে দেয়া হয়েছে। 

একাধিক ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নিলামে সাত দিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় ১৪টি ব্যাংক ও দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পাঁচ হাজার সাত কোটি টাকা, ১৪ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় ৯ ব্যাংককে দুই হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, ২৮ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় ১২ ব্যাংক ও দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সাত হাজার ১৯৭ কোটি টাকা দেয়া হয়। এ ছাড়া গতকাল ১৮০ দিন মেয়াদি অ্যাসিউরড রেপোর আওতায় তিন ব্যাংককে পাঁচ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা এবং একদিন মেয়াদি অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্টের আওতায় ১১টি প্রাইমারি ডিলার ব্যাংককে তিন হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা দেয়া হয়। পাশাপাশি ১৪ দিন মেয়াদি ইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটির আওতায় একটি ব্যাংককে ৪৯৭ কোটি টাকা ও ২৮ দিন মেয়াদে পাঁচটি ইসলামি ধারার ব্যাংককে ৯৮৪ কোটি টাকা দেয়া হয়। সব মিলিয়ে গত বুধবার ২৫ হাজার ৫২১ কোটি টাকা ধার দেয়া হয়। 

এদিকে বন্ধ থাকা ইন্টারনেটের গতি বাড়াতে গুগলের ক্যাশ সার্ভার চালুর জন্য আইআইজি অপারেটরদের নির্দেশ দিয়েছে বিটিআরসি। গতকাল বৃহস্পতিবার দেয়া নির্দেশনায় জানা গেছে, ইউটিউব চলবে। তবে ফেসবুক ও টিকটকের ক্যাশ সার্ভার বন্ধ রয়েছে।

আরএস