হঠাৎ থমকে গেছে রেমিট্যান্স

আনোয়ার হোসাইন সোহেল প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৪, ০২:৪৪ পিএম
হঠাৎ থমকে গেছে রেমিট্যান্স

রিকনসিলিয়েশন হলে জানা যাবে পুরোপুরি তথ্য

—কেন্দ্রীয় ব্যাংক

  • ছয় দিনে এলো সাত কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার
  • চলতি মাসের ২৪ জুলাই পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার
  • ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় থমকে যায় এমএফএস সেবাও

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশে চলমান থমথমে পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং চ্যানেলে বা বৈধ পথে প্রবাসীদের পাঠানো আয় কমেছে। গত ১৭ জুলাই থেকে বন্ধ রয়েছে মোবাইলে ইন্টারনেট পরিসেবা। পরদিন বৃহস্পতিবার ১৮ জুলাই থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে টানা পাঁচদিন ব্যাংকিং লেনদেন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে এই সময় সাত কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। তা মাসের প্রথম একদিনের রেমিট্যান্স আসার সমান।

২৩ জুলাই রাত থেকে সীমিত আকারে ইন্টারনেট চালু করা হয়। এ সময় ব্যাংকিং লেনদেন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বিকল্প হিসেবে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) চালু থাকলেও পর্যাপ্ত ইলেকট্রনিক মানি বা ই-মানি সাপ্লাইয়ের অভাবে তারাও লেনদেন করতে হিমশিম খাচ্ছিলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে চলতি মাসের প্রথম ১৮ দিনে প্রতিদিন গড়ে সাত কোটি ৯০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। তবে ১৯ থেকে ২৪ জুলাই ইন্টারনেট বন্ধ থাকার এই ছয় দিনে রেমিট্যান্স এসেছে সাত কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। যা মাসের প্রথম একদিনে রেমিট্যান্স আসার সমান।

গত ২৪-২৫ জুলাই ফের সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং লেনদেন চালু হয়। ওই দুদিন লেনদেন চলে বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা। ব্যাংক বন্ধ থাকায় ১৯-২৩ জুলাই বৈধ পথে দেশে রেমিট্যান্স আসাও সম্ভব ছিল না। এ সময়ের মধ্যে যারা বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, গত বুধবার ব্যাংক খোলার প্রথম দিনেই তা দেশের ব্যাংকে জমা হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু সেটি হয়নি।

চলতি ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স এসেছিল গত মার্চে। ওই মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর আগে জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ ডলার ও ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল। এপ্রিলে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছিলেন ২০৪ কোটি ৪২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। আর মে মাসে রেমিট্যান্স আসে ২২৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। সর্বশেষ জুনে প্রবাসীরা রেকর্ড ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন, যা গত ৪৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

গত ২১ মার্চ থেকে ৫৩ বছরের প্রথা ভেঙে হঠাৎ করে বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যা সরকারের অবস্থানের বিপরীত। বাংলাদেশ ব্যাংক অলিখিতভাবে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর চলতি মাস থেকে সপ্তাহ ভিত্তিক ওয়েবসাইটে রেমিট্যান্সের তথ্য আপডেটও বন্ধ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক আমার সংবাদকে জানান, ‘গত ২৪ জুলাই পর্যন্ত ১৫০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার ব্যাংক খুললেও কেবল নগদ জমা ও উত্তোলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল লেনদেন। নস্ট্রো অ্যাকাউন্টে রেমিট্যান্স এলেও সেটি পুরোপুরি রিকনসিলিয়েশন হয়নি। ব্যাংকিং কার্যক্রম পুরোপুরি স্বাভাবিক হলে এ মাসের শেষের দিকে রেমিট্যান্সের পুরোপুরি হিসাব পাওয়া যাবে।’ এর আগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন।

বাংলাদেশের মোট আয়ের বেশিরভাগ আসে রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশের রপ্তানি আয় ছিল তিন হাজার ৭৩৪ কোটি বা ৩৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে ২১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন বা দুই হাজার ১৩৭ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।