- প্রিমিয়াম ও ইনসেটিভ বোনাসের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ
- গ্রাহকের টাকায় নারী নিয়ে সময় কাটাতেন পাঁচ তারকা হোটেলে
- নামে-বেনামে বিভিন্ন জায়গায় গড়েছেন অবৈধ সম্পদের পাহার
দৃশ্যমান অনেক দুর্নীতি দেখতে পেয়েছি, ব্যবস্থাও নিচ্ছি-
ড. শেখ মহ. রেজাউল ইসলাম প্রশাসক, স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স
চতুর্থ প্রজন্মের বিমা কোম্পানি স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করছেন কোম্পানিটির সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিন। অবৈধভাবে কোম্পানির অর্থ আত্মসাৎ, কর্মকর্ত-কর্মচারীদের বেতন না দেয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিন আত্মসাৎ করেছেন কোম্পানির কোটি কোটি টাকা। কোম্পানির কর্মকর্তা না হয়েও জোরপূর্বক ভোগ করছেন নানা সুবিধা। নানা অপকর্মের কারণে ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিনকে সিইও থেকে অব্যহতি দিয়েছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। তার বিরুদ্ধে শুধু অর্থ আত্মসাতই নয়, রয়েছে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগও। আমার সংবাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে তার অনিয়মের তথ্য। বহিষ্কৃত হওয়া সত্ত্বেও নানা কৌশলে ফিরতে চাইছেন স্ব-পদে। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়োগকৃত প্রশাসককের কাজে নানাভাবে বাধা দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিমা আইনকে কোনোভাবে তোয়াক্কা করছেন না তিনি। কোম্পানির থেকে হাতিয়ে নেয়া অর্থ দিয়ে তিন তলা বাড়িও করেছেন তিনি। কোম্পানির শীর্ষ উন্নয়ন কর্মকর্তাদের অসহযোগিতা করতে নানাভাবে প্ররোচিত করেছেন মাঠকর্মীদের।
এছাড়া কোম্পানির পরিচালকদের বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ, পেইডআপ ক্যাপিটালের বিপরীতে ১৪.৩০ কোটি টাকা দিয়েন করে ঋণ নেওয়ার অভিযোগে স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানসহ ১২ পরিচালককে অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীন কোম্পানি থেকে এক কোটি ২ লাখ ২৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এজন্য বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ তাকে একাধিকবার চিঠিও দিয়েছে। এছাড়া আত্মসাতকৃত টাকা কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে ফেরতেরও নির্দেশ দেওয়া হয় ওই চিঠিতে। গেল বছরের ১৫ নভেম্বর ও ১৯ নভেম্বর আইডিআরএ’র আইন পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ (উপসচিব) স্বাক্ষরিত পৃথক দু’টি চিঠিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিন, যথা সময়ে অর্থ ফেরত না দিলে অর্থ তছরুপের জন্য ফৌজদারি মামলাসহ প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও ওই চিঠিতে জানানো হয়। আইডিআরএ’র নির্দেশ অমান্য করে আত্মসাতকৃত অর্থ ফেরত না দেওয়ায় মামলাও হয় তার বিরুদ্ধে।
স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড হতে প্রাপ্ত ব্যাংক স্টেটমেন্ট অনুযায়ী ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীন ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে কোম্পানির গ্রাহকের প্রিমিয়ামের মোট ৬০ লাখ ৭০ হাজার ৭১৭ টাকা জমা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। গ্রাহকের প্রিমিয়ামের অর্থ ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে রাখা আত্মসাতের শামিল যা বিমা আইন পরিপন্থি।
ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীন স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড থেকে অনিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কোম্পানির ইনসেনটিভ বোনাস বাবদ মোট ৪১ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ টাকা আত্মসাৎ করেন। এবং সেই টাকাও কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে ফেরত প্রদান করার জন্য আইডআরএ কর্তৃক গত বছরের ১০ মে এবং ২২ অক্টোবর এক চিঠির মাধ্যমে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু ইনসেনটিভ বোনাসের সেই টাকাও কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে ফেরত দেননি তিনি। ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর অপর এক চিঠিতে এই তথ্য জানায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা আডিআরএ।
সেই চিঠিতে আরও বলা হয়, কোম্পানির সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক গৃহীত ইনসেনটিভ বোনাস বাবদ মোট ৪১ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ টাকা আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে কোম্পানির হিসাবে ফেরত প্রদানপূর্বক প্রয়োজনীয় প্রমাণাধী কর্তৃপক্ষ বরাবর আবশ্যিকভাবে দাখিল করার জন্য বলা হলো।
এসব বিষয়ে জানতে স্বদেশ ইসলামি লাইফের সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার উদ্দিন শাহীনকে বারবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে কোম্পানির প্রশাসক (সাবেক অতিরিক্ত সচিব) শেখ মহ. রেজাউল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, আমাকে এখানে নিয়োগ দেওয়ার পর দৃশ্যমান অনেক দুর্নীতি দেখতে পেয়েছি, এজন্য অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছি, বাকিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছি। কোম্পানির কর্মকর্তাদের অনেক মাসের বেতন বন্ধ ছিল তাও পরিশোধ করার চেষ্টা করেছি।
এছাড়া ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিন কোম্পারি টাকা খরচ করে বিভিন্ন সময়ে পাঁচতারকা হোটেলে নারী নিয়ে সময় কাটিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিন বীমা আইন ২০১০ এর বিধান ভঙ্গ করে মাসিক লাভের ভিত্তিতে মাঠ পর্যায়ে থেকে এফডিআর গ্রহণ করে আত্মসাৎ করেন। এ ব্যাপারেও তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক মামলা চলমান রয়েছে।
একাধিক বীমা সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানা যায় যে, জনাব ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিন বীমা সেক্টরে অনিয়ম এবং দুর্নীতিকে একটি শিল্পতে রূপদান করেছেন। যা এই সেক্টরের জন্য অশনি সংকেত। এছাড়া তারা এও বলেন যে, মালিকপক্ষ সরলতাকে কাজে লাগিয়ে জনাব শাহীন নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা স্বদেশ ইসলামী লাইফ থেকে হাতিয়ে নিয়ে কোম্পানিটাকে এখন দেউলিয়ার ঝুঁকিতে ফেলেছেন। বিভিন্ন কর্মকর্তা দের নামে ভুয়া বেতন ও নানাবিধ ভাতা দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন বলেও অনুসন্ধানে জানা যায়। জনাব ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিন সিইও হিসেবে স্বদেশ লাইফের দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে কোম্পানির বিভিন্ন খাতে তিনি প্রায় ৮ কোটি টাকার মতো বকেয়া রাখেন যার দায়ও মূলত তার উপরেই বর্তায় চলবে।