- প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতবিনিময় আজ
- গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পৃথক বৈঠক হবে
- নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করতে মতামত চাইবে সরকার
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পর দলটির নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। ইতোমধ্যে পালিয়ে থাকা বেশ কজন নেতা গ্রেপ্তার হন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের কোনো কার্যক্রম নেই। পক্ষান্তরে দীর্ঘদিন রাজনৈতিকভাবে চাপে থাকা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী রাজপথে সরব রয়েছে। একইভাবে শেখ হাসিনার মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলো এখন সক্রিয়ভাবে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো দলীয় কার্যক্রমের পাশাপাশি দেশে চলমান বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে এবং বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হচ্ছে।
এদিকে সত্যিকারার্থে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় নির্বাচন কখন হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্য চলছে। বিশেষ করে বিএনপি দ্রুত নির্বাচন দাবিতে সরকারের কাছে জানতে চাচ্ছে নির্বাচন ঠিক কখন হবে, রোডম্যাপ কি হবে— এসব নিয়ে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী বলছে, আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত (নিহত-আহত) ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়ানো এবং বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। তারা বলছে, রাষ্ট্র সংস্কারে বর্তমান সরকারকে সময় দেয়া জরুরি, যাতে তারা অর্থনৈতিক ভিত্তি ও সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচন উপযোগী একটি পরিবেশ তৈরি করতে পারে। এছাড়াও নির্বাচন দ্রুত চাওয়া-না চাওয়া নিয়ে রাজপথে বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের মধ্যে চলছে বিতর্ক। আর এই বিতর্কের মধ্যেই আজ বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
অর্থাৎ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার তিন সপ্তাহ পর বিএনপির ভোট নিয়ে আলোচনার দাবির মধ্যে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ শনিবার বেলা ৩টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই মতবিনিময় শুরু হবে। চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। টানা পাঁচ ঘণ্টা মতবিনিময় করা হবে বলে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।
এর আগে গত ২৯ আগস্ট বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। বৈঠকে রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টাকে সংলাপে বসার আহ্বান জানান বিএনপি নেতারা।
সূত্র জানায়, বৈঠকে আগামী দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যুতে একটি রোডম্যাপ জনগণের সামনে পেশ করতে পারেন বলে বিএনপি প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এর আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আলোচনার পর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করবে সরকার। এরপর নির্বাচন সম্পন্ন করার রোডম্যাপ জনগণের সামনে পেশ করবেন প্রধান উপদেষ্টা।
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বিএনপি প্রতিনিধিরা মূলত বর্তমান সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার ভাবনা, নির্বাচন নিয়ে তাদের চিন্তাভাবনা সম্পর্কে মতবিনিময় করেন। তারা বলেছেন, এই সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর ব্যাপারে তাদের পূর্ণ সমর্থন আছে। ভবিষ্যতেও এই সমর্থন থাকবে।
এতে আরও জানানো হয়েছে, বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংস্কার এবং নির্বাচন প্রসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ব্যাপকভিত্তিক সংলাপ শুরুর ঘোষণা দেয়ার ব্যাপারে তারা অনুরোধ করেন। তারা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও জানতে চান। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কার ব্যাপারেও একমত পোষণ করেন তারা।
সবশেষে তারা এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন, বর্তমান সরকার সংস্কার ও নির্বাচন সম্পর্কিত এবং অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যে পদক্ষেপ নেবে, তা নিয়ে সবাই একসঙ্গে কাজ করবে এবং তারা এর সমন্বিত অংশীদার হবেন।
কদিন ধরে দলীয় কর্মসূচিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সংস্কার ও নির্বাচন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন বিএনপি মহাসচিব। এ পরিস্থিতিতে গত ২৯ আগস্ট বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে আজ শনিবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময়ের সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ মতবিনিময় চলবে।
গত ৮ আগস্ট ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর গত ১২ আগস্ট বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে বিএনপির সাত সদস্যের স্থায়ী কমিটি যমুনায় গিয়ে তার সঙ্গে প্রথম বৈঠক করে। একইদিন জামায়াতে ইসলামীও একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে বৈঠক করে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে। একইভাবে আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক হয় প্রধান উপদেষ্টার।
আরএস