পোশাক কারখানায় ক্যু চেষ্টা

আনোয়ার হোসাইন সোহেল প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪, ০১:৪৫ পিএম
পোশাক কারখানায় ক্যু চেষ্টা

সরকারকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ঠেলে দিতে একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে একের পর এক আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে দেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত শিল্প-কারখানা। বৈষম্যবিরোধী স্লোগান নিয়ে রিকশাশ্রমিক, চিকিৎসক, আনসার, বিচারপতি ও সচিবদের পর এবার পোশাকশ্রমিকরূপে একটি মহল শিল্প-কারখানায় ক্যু করার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন পোশাক খাত-সংশ্লিষ্টরা। কারখানা মালিকরা বলছেন, শ্রমিক বিক্ষোভের নামে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতির উন্নতি না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ করে দেয়া হবে। এমন হুঁশিয়ারির প্রতি বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বিকেএমইসহ পোশাক খাত-সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংগঠনও তাদের জোরালো সমর্থন জানিয়েছে। তবে আজ রোববার সব পোশাক কারখানা খুলে দেয়া হবে; অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার— জানিয়েছেন শ্রম উপদেষ্টা ও শিল্প উপদেষ্টা।

গতকাল শনিবার বিজিএমইএ কার্যালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে বিজিএমইএ, শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, শিল্পপুলিশ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, পোশাকশিল্পের শ্রমিক নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সভায় আজ রোববার দেশের সব তৈরি পোশাক শিল্প-কারখানা খোলা থাকবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।  তিনি বলেন, কোনো কারখানায় অস্থিরতা তৈরি হলে বিশেষ ব্যবস্থা নেবে সরকার। দেশের অর্থনীতিকে বিপদে ফেলতে কেউ যদি ইচ্ছাকৃত কারখানা বন্ধ রাখার অপচেষ্টা করেন, তা কিন্তু  মনে রাখা হবে।

আদিলুর রহমান খান আরও বলেন, তৈরি পোশাক খাতে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে সরকার কমিটি করেছে। এই কমিটির  মাধ্যমে সবার সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করার যে সংস্কৃতি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, তা ফিরিয়ে আনতে হবে।

শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হওয়ায় অনেকের মতো শ্রমিকরাও নিজেদের কথা বলছেন। শ্রমিকদের অভিযোগ সমাধানে শ্রম-সংক্রান্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সব অভিযোগ ও দাবি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। তবে শ্রমিকের আন্দোলনে একদমই যে ষড়যন্ত্র নেই, এমনও নয়।

শ্রম উপদেষ্টা আরও বলেন, ইতোমধ্যে শ্রমিকদের জন্য কোন প্রক্রিয়ায় রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা যায়, সে বিষয়ে কাজ শুরু করেছে সরকার। এ ছাড়া গত বছরের শেষদিকে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের সময় যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শ্রম আইনের মধ্য থেকে ট্রেড ইউনিয়ন করার যতটা সুযোগ আছে, তা নিশ্চিত করবে সরকার। তবে এসব প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে যারা অস্থিরতা সৃষ্টি করবে, তাদের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেয়া হবে; এ ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলেও জানান আসিফ।

বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, সরকার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়ায় রোববার (আজ) সব পোশাক কারখানা খোলা থাকবে। তবে কোনো কারখানায় অস্থিরতা তৈরি হলে সোমবার (কাল) থেকে সেই কারখানা শ্রম আইনের ১৩/১ ধারা (কাজ নেই, বেতন নেই) অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।

সভায় সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খান বলেন, শ্রমিকদের দাবিগুলো যৌক্তিক; তবে সমাধান না হলে শিল্পের অস্থিরতা নিরসন সম্ভব নয়। পোশাকশিল্পকে রক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করবে সেনাবাহিনী।

এদিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শ্রমিক অসন্তোষের তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছে। সেগুলো হলো— বহিরাগতদের আক্রমণ, শ্রমিকদের যৌক্তিক ও অযৌক্তিক দাবির সমন্বয়ে অস্থিরতা ধরে রাখা হচ্ছে; ঝুট ব্যবসার আধিপত্য। তবে বহিরাগতদের আক্রমণ এখন আর হচ্ছে না।

সভায় শিল্পপুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকারকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ঠেলে দিতেই একটি চক্র শিল্প-কারখানায় অস্থিরতা তৈরি করছে। এখন বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে উপদেষ্টাদের বিশেষভাবে নজর দেয়া জরুরি।