চায়ের আড্ডায় রাজনীতির ভবিষ্যৎ রূপরেখা নির্ধারণ

আবদুর রহিম প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪, ০৪:৩১ পিএম
চায়ের আড্ডায় রাজনীতির ভবিষ্যৎ রূপরেখা নির্ধারণ

ড. ইউনূসের মেয়াদ ৩ বছর, নাকি ৫ বছর? ইউনূসের পর রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব, নাকি ভিন্ন কোনো অধ্যায়, এরপর কী ঘটবে? চা-আড্ডায় স্বাধীন মতামতে বিচক্ষণ গবেষণা...

কোন পথে দেশের রাজনীতি। কবে ভোট হচ্ছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকার কী করবে। শিক্ষার্থীরা কী ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করবে। বিএনপি কী ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসছে। সেনাবাহিনী এখনো মাঠে রয়েছে, তাদের সরকার গঠন নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো ভূমিকা থাকবে কিনা। স্বৈরাচার হাসিনার প্রশাসন এখনো বীরদর্পে রয়েছে। প্রেসিডেন্ট নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে অনাস্থা, আশঙ্কার প্রশ্ন উঠেছে। সব মিলিয়ে শত সহস্র প্রশ্ন, বিতণ্ডা চায়ের দোকানে। কারো মধ্যে কোনো ভয় নেই, আতঙ্ক নেই। স্বাধীনভাবে চায়ের দোকানে পায়ের উপর পা তুলে চুমুকে চুমুকে যেন রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হচ্ছে। কেউ বলছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৩-৫ বছর ক্ষমতায় থাকবেন। তার মাধ্যমে দেশের কল্যাণ বয়ে আসবে। অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। দেশ সংস্কার হবে। এরপর ড. ইউনূসের পর আবারও কোনো রাজনৈতিক দল সরাসরি ক্ষমতায় আসবে না। অজানা অনেক কিছুই ঘটতে পারে। সেখানেও দীর্ঘ একটা চ্যাপ্টার শাসনে দেশ চলবে। এরপর ভোটের মাধ্যমে একদল তারুণ্যের হাতে চলে যাবে দেশের পরিচালনা। সেখানে বিএনপিসহ সব দল ও তরুণদের নেতৃত্ব থাকবে।  

এমন গভীর ও বিচক্ষণ আলোচনা দেখা গেলো ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের মটুয়া গ্রামের জানুমিয়ার চায়ের দোকানে। গত সোমবার বিকালে আসরের নামাজ শেষে শুরু হলো দীর্ঘ আলোচনা। এক বয়স্ক মুরব্বি, ৬০-৭০ বছর বয়স হবে। লাঠি ভর দিয়ে তিনি মসজিদে আসলেন। এরপর নামাজ পড়ে চায়ের দোকানে ঢুকলেন। চা খেতে খেতে বলতে লাগলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর পূর্ণ আস্থা আছে আমার। ইউনূস যতদিন ক্ষমতায় থাকতে মন চায় থাকুক। তার মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন হবে। অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। হিংসার নেতৃত্ব কমে আসবে। দেশের সংকট জটিলতা অনেক কিছুই কমে যাবে। হাসিনা সরকারের মতো দেশ অর্থনৈতিক দেউলিয়ার মধ্যে পড়বে না।  ড. ইউনূসের টাকা পয়সার ওপর কোনো লোভ নেই। তিনি বিশ্বব্যাপী সম্মানিত। তিনি চাইবেন দেশকে একটা সম্মানজনক স্থানে পৌঁছে দিতে। এর মধ্যে পাশের আরেকজন বলে উঠলেন, উনি কয়দিন ক্ষমতায় থাকবেন। এর মধ্যে একজন বলে উঠলেন, হাসিনা সরকার যা করে গেছে দেশের সব সেক্টরে শুধু বানান ঠিক করতেই লাগবে অন্তত দেড় দুই বছর। আরেকজন বললেন, আমার মনে হয় ড. ইউনূস তিন বছর  ক্ষমতায় থাকবেন। পরে চায়ের দোকানে থাকা সেই বয়স্ক মুরব্বি বলে উঠলেন, আমার তো মনে হচ্ছে, আওয়ামী সরকারের যে বাকি সময় প্রায় পাঁচ বছরের কাছাকাছি ওই সময়টা থেকে যাবেন তিনি। সব মিলিয়ে ড. ইউনূসের মেয়াদ চায়ের টেবিলে ৩ থেকে প্রায় পাঁচ বছর নির্ধারণ বলেই মিশ্র আলোচনায় সমাপ্তি ঘটে। 

এরপর শুরু হলো নতুন আলোচনা। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পর দেশ কার নেতৃত্বে যাবে। কেউ বলছেন নির্বাচন হবে। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসবে। আবার কেউ বলছেন, ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করবেন। তারাও নির্বাচনে যোগ দেবেন। অনেকগুলো দলকে নিবন্ধন দিয়ে দিচ্ছে,  দেশে একটা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে। ভোট দেয়ার স্বাধীনতা আসবে। বহু কথার মধ্যেই আলোচনা চলে চায় অনেক গভীরে। একজন বলে উঠলেন. আমার তো মনে হয় ড. ইউনূসের সময়ের পরই রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাতে ক্ষমতা চলে যাবে। এখানে অজানা বহু কিছু ঘটতে পারে। রাজনীতিতে সেই ৬০-৭০ বছরের বয়স্ক পটু আলোচক বলে উঠলেন, আমার মনে হয় ড. ইউনূসের পর আরও একটা নতুন অধ্যায় চলতে পারে। যেটা আমরা এখনো চিন্তাও করছি না। দেশটা সংস্কারের পর সেই অধ্যায় দীর্ঘদিন থাকবে। এর মধ্যে একজন বলে উঠলেন, সেটা কিভাবে হবে? তখন সেই মুরব্বি বলে উঠলেন, ইউনূস মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পর রাজনৈতিক দলগুলো যখন ভোটের জন্য উত্তেজনা তৈরি করবেন, তখনই সাংবিধানিক অংশ থেকে নতুন অধ্যায়ের যাত্রা শুরু হতে পারে।  

আবার আসল নতুন প্রশ্ন। ড. ইউনূসের পর যদি নতুন অধ্যায়ের আশঙ্কা থেকে থাকে এরপর কে? তখন আবারও বিচক্ষণ বার্তা দাঁড়ি পাকা মুরব্বিদের থেকে। ড. ইউনূস সময়ের পর আরও একটি অধ্যায়ের মাধ্যমে চলে যেতে পারে লম্বা সময় । এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা যারা গুলির মুখে দাঁড়িয়ে দেশকে স্বাধীন করেছেন, ততদিনে এই শিক্ষার্থীরা পরিপক্ক হয়ে উঠবেন। কারণ এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুধু একটি রাজনৈতিক দলের আদর্শের ব্যক্তিরা সম্পৃক্ত নন, সব দলের অনুগত ব্যক্তিরা জড়িত ছিলেন। স্বৈরাচার হাসিনাকে দেশ ছাড়তে যারাই রাজপথে থেকে বাধ্য করেছেন। গুলির মুখে দাঁড়িয়ে দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছেন এরাই বেশি অগ্রাধিকার পেয়ে যেতে পারেন। তাদের সঙ্গে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোর স্বচ্ছ ব্যক্তিরাও সম্পৃক্ত হবেন। এমন গভীর আলোচনার মধ্যেই প্রায় দেড় ঘণ্টা কেটে গেলো। মসজিদের মিম্বার থেকে আসলো মাগরিব নামাজের ডাক। আলোচনা সমাপ্তি করে দু-তিনজন নামাজে চলে গেলেন। অন্যরাও সাথে সাথে বেরিয়ে গেলেন...।