- বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দুই হাজার ৪৩০ কোটি মার্কিন ডলার
- অন্তর্বর্তী সরকার ৮০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ শোধ করেছে
- আগস্টে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ বেড়েছে ৯০ শতাংশ
বিদ্যুৎ, পেট্রোলিয়াম ও সার আমদানি ব্যয় বাবদ বিদেশি ব্যাংকের কাছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বকেয়া ঋণের টাকা আগামী ছয় মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ পরিশোধের আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক অনলাইন বৈঠকে গভর্নর এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, মঙ্গলবার বিকালে আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে গভর্নরের একটি অনলাইন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে সাবেক শেখ হাসিনা সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর বেশকিছু দায় পড়েছে, সেগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কীভাবে পরিশোধ করবে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক ৮০০ মিলিয়ন ডলার দেনা পরিশোধ করা হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইন্টার ব্যাংক থেকে ডলার সংগ্রহ করছে এবং সেই সংগৃহীত ডলার সরকারি ব্যাংকগুলোকে দেয়া হচ্ছে, যা দিয়ে সরকারের অগ্রাধিকার খাত যেমন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও সারের আমদানির ব্যয়গুলো পরিশোধ করা হয়েছে।
তিনি আরও আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আমরা যেভাবে কাজ করছি, এভাবে কাজ হলে আগামী ৫-৬ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ ওভারডিও যেটা দাবি করা হয়েছে, সেটা পরিশোধ করা হয়ে যাবে।
গভর্নর বলেন, ব্যাংকের সঙ্গে ক্লায়েন্টের সম্পর্ক যেটা খুবই গভীর বা নিবিড় সম্পর্ক, এটা এক-দুই মাসের জন্য হয় না। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংক কিছুটা বিপদগ্রস্ত হয়েছে— এটা সত্যি। আমাদের অতীতে খেলাপি হওয়ার কোনো রেকর্ড নেই এবং বর্তমানেও আমরা মনে করি যেটা আমাদের ওভারডিউ রয়েছে, যদি তারা আমাদের সঙ্গে সাধারণ ব্যবসা অব্যাহত রাখে, তাহলে আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে সেটাও পরিশোধ করতে পারব।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সকালে এক ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জানান, প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ বেড়েছে। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে রিজার্ভের (ক্ষয়রোধ) পতন থামানো গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪৩০ কোটি ডলারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে বর্তমানে আছে দুই হাজার ৪৩০ কোটি ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবে বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে এর পরিমাণ দুই হাজার কোটি ডলারের কাছাকাছি।
দেশে প্রবাসী আয় ক্রমশ বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভের ক্ষয়রোধ করা সম্ভব হয়েছে। গত অর্থবছরের তুলনায় এই অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি প্রায় ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা যদি গত জুলাই থেকে আগস্ট রেমিট্যান্সের প্রবাহ তুলনা করি, তাহলে দেখা যায় আগস্টে প্রবাসী আয় ৯০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মুখপাত্র আরও জানান, প্রবাসীরা বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। রিজার্ভ বৃদ্ধির বড় কারণ প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি।
তিনি বলেন, সংকট কাটতে শুরু করায় ব্যাংকগুলো এখন নিজেরাই ডলার কেনা-বেচা করতে পারছে। ডলারের দাম বর্তমানে ১১৮-১২০ টাকার মধ্যে রয়েছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে ও কার্ব মার্কেটে ডলারের দামের পার্থক্য এখন এক শতাংশেরও কম।
ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আন্তঃব্যাংক লেনদেন সক্রিয় থাকার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার বাজার এখন থেকে স্থিতিশীল থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র জানান, এতদিন অনেকে বেসরকারি ব্যাংকে এলসি খুলতে পারতেন না, তারাও এখন স্বাভাবিকভাবে এলসি খুলতে পারছেন— যা দেশের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক।