ছাত্র-জনতার রক্তে ভেজা বিজয়ের দুই মাস পার হলো। এতে এক হাজার ৫৮৫ জন নিহত হন। এছাড়া প্রায় সাড়ে ৩১ হাজার মানুষ আহত হন। যাদের অধিকাংশের কারো হাত নেই, কারো পা নেই, স্প্লিন্টারের আঘাতে কেউ হারিয়েছেন চোখ। যে বৈষম্য ও সংস্কারের দাবি নিয়ে ছাত্র-জনতা গুলির মুখে দাঁড়িয়ে বিজয় এনেছে, তার স্বপ্ন এখনো অধরা। চারদিক থেকে শুধুই প্রশ্ন— গেলো দুই মাসে বিপ্লবের স্বপ্ন কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে। নিহত পরিবারের স্বজনদের চাকরির বিষয়ে সরকার কী পরিককল্পনা নিয়েছে। প্রতিদিন গণমাধ্যমে শিরোনাম হচ্ছে আহতরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না। বিনাচিকিৎসায় অনেকে মারা যাচ্ছেন। ছাত্রদের ওপর গুলি চালানো ব্যক্তিদের ছবি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পেলেও তারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন না। আবার অবৈধ অস্ত্রও উদ্ধার হচ্ছে না।
যারা ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়েছে, নির্দেশ দিয়েছে, অর্থ দিয়েছে এবং হত্যার সঙ্গে বিভিন্নভাবে জড়িত ছিল, তাদের অনেকেই এখনো আটক হননি। যারা আটক হয়েছেন, তাদের বিচারেও চলছে ধীরগতি। এখনো বিগত সরকারের সময়ের গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদ, অনুগত আমলা, বিচারক, ব্যবসায়ীরা ড. ইউনূস সরকারের সঙ্গে দাপটের সঙ্গে রয়েছেন। যার কারণে দেশের সর্বক্ষেত্র এখনো বিগত সরকারের মতোই চলছে। দ্রব্যমূল্য পুরোনো স্টাইলে শুধুই দাম বাড়ছে; কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অবৈধ সিন্ডিকেটে চলছে নিয়োগবাণিজ্য। তাই দেশের সচেতন মহল বলছে, ছাত্র-জনতার রক্তস্রোতের বিপ্লব গুমরে কাঁদছে। ৩৬ জুলাইয়ের আন্দোলনে অংশ নিয়ে কারওয়ান বাজারে সন্ত্রাসীচক্রের গুলিতে আহত যুবায়ের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘রক্তের বিজয় এখন গুমরে কাঁদছে’। শেখ হাসিনার অনুগত সেনাপ্রধান এখনো স্বপদে বহাল। ছাত্রলীগ-যুবলীগের অনুসারী আমলারা এখনো যার যার অবস্থানে প্রশাসনে কাজ করছেন। বাজারে এখন একটি ডিম ১৬ টাকা। এটা অবশ্যই রক্তের সঙ্গে নীরব বিশ্বাসঘাতকতা।
সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, বিগত সরকারের বিচার নিশ্চিতকরণ, নতুন সংবিধান গঠন, দুর্নীতিবাজ আমলাদের পরিবর্তন, সব অবৈধ চুক্তি বাতিল এবং অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে তার পদ থেকে অপসারণ করতে হবে। দ্রব্যমূল্যের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের জনগণের ত্যাগের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। যারা ব্যবসায়ী নাম নিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এ দেশের মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে, তাদের সেই সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সর্বশেষ গত ২৯ সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্যবিষয়ক উপকমিটি এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির দেয়া তথ্যমতে অভ্যুত্থানে নিহতের সংখ্যা জানানো হয় এক হাজার ৫৮১। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই সব থেকে বড় এবং নজিরবিহীন গণহত্যা। নিহতের সংখ্যা দিন দিনই বাড়ছে। এছাড়া আহত প্রায় ৩১ হাজারেরও বেশি।
সর্বশেষ গত ৩০ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ফেনীর দশম শ্রেণির ছাত্র সাইফুল ইসলাম আরিফ সিএমএইচে মারা যান। তিনি ৪ আগস্ট আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। এছাড়া অনেকের অভিযোগ— যারা আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে আছেন, তাদের সুচিকিৎসা হচ্ছে না। এ অভিযোগ যে সত্য, তার প্রমাণ মেলে বিপ্লবের এক মাস ২৫ দিন পরও হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের মৃত্যু হচ্ছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর সিলেটের হবিগঞ্জের কারিমুল ইসলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি গত ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার শাহাবুদ্দিনের ছেলে কারিমুল। তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। তার মৃত্যুর পর এখন ওই অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর কী হবে। অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ কী। এ বিষয়গুলো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা কী ভাবছেন। যে কারিমুল এক মাস ২৫ দিন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়েছেন, তাকে কী উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়া যেত না? কারিমের মতো আরও অনেকেই পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে কেউ চোখ হারিয়ে অন্ধ হওয়ার পথে, কেউ পা হারিয়ে পঙ্গু হয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন। অনেকে নিজের জমি-সম্পত্তি বিক্রি করে চিকিৎসার খরচ জোগাড় করছেন। কেউ কেউ চিকিৎসা করে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। আহতদের সরকারিভাবে চিকিৎসা দেয়া হবে বলা হলেও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা এখনো হয়নি।
এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস পার হলো। এখনো সরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকর করতে পারছে না। পুলিশ এখনো যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে না। ফলে সারা দেশে চলছে বিশৃঙ্খলা। পোশাক খাতের অস্থিরতা এখনো দমন করতে পারেনি সরকার। শ্রমিকদের সব দাবি মেনে নেয়ার পরও সাভারে আন্দোলন চলছে। এতে নিহত হন এক শ্রমিক। জনপ্রশাসনে চলছে স্থবিরতা। সেখানে উপদেষ্টা হিসেবে যাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তিনি শেখ হাসিনা সরকারের সময়ও সচিব ছিলেন। তাই তার দোসর হিসেবে যারা পরিচিত, এখনো তাদেরকেই প্রমোশন ও পদায়ন করা হচ্ছে। এ নিয়ে প্রশাসনের সর্বত্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। এছাড়া বিশ্বস্ত জায়গাগুলো থেকে প্রশ্ন উঠেছে— এখনো উপদেষ্টা মহলের কেউ কেউ বিগত সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল নিজ ‘পছন্দসই’ প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নিয়োগসহ আইন কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ করেছেন। যাদের অধিকাংশই বিগত সরকারের সংবিধান বহাল রাখাসহ সেই সরকারের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন নিয়ে পর্দার আড়ালে কাজ করে যাচ্ছেন।
এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারে আলী ইমাম মজুমদারকে নিয়েও অনেক অবিশ্বাসের জায়গা তৈরি হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া অন্যতম সমন্বয়ক সার্জিস আলম তার ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, আহসান কিবরিয়া শেখ হাসিনা সরকারের কার্যালয়ের এক মেয়াদে পরিচালক (২০১৫-২০), দুই মেয়াদে মহাপরিচালক (২০২০-২৪) ছিলেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দিনও আহসান কিবরিয়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক ছিলেন। এই আহসান কিবরিয়াকে বর্তমানে ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) বানিয়েছেন আলী ইমাম মজুমদার। আলী ইমাম মজুমদার যখন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন (২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল), তখন আহসান কিবরিয়া ছিলেন তার একান্ত সচিব।
আলী ইমাম মজুমদার ১৯৯৬ মেয়াদে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সিলেট ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ছিলেন। ২০০৭-০৮-এর কেয়ারটেকার সরকারের আমলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সচিব এবং পরবর্তীতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন। দেশের রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান সময়ে আলী ইমামের নির্দেশনায় বিভিন্ন দপ্তরে পদায়ন হচ্ছে। পুনর্বাসিত হচ্ছে আওয়ামী লীগের লোকেরা। বিগত সরকারের সময় আলী ইমাম মজুমদারের আত্মীয়-স্বজন অনেকেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। বিশেষ করে তার এক শ্যালিকার স্বামী গোলাম কিবরিয়া সচিব পদমর্যাদায় চিফ তথ্য কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ হোসেন বলেছেন, ওয়ান-ইলেভেন ও পতিত সরকারের কর্মকাণ্ড থেকে বের হয়ে না এলে ওরা সবাইকে খেয়ে ফেলবে। এখনও সময় আছে সজাগ হোন।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ ইস্যুতে সারজিস আলম বলেন, ডিসি নিয়োগে যদি আওয়ামী লীগের পছন্দের লোকেরা স্থান পায়, তবে ওপরের এই মানুষগুলো (আলী ইমাম মজুমদার ও তার পিএস আহসান কিবরিয়া) কি করছিলেন? তাদের প্রশ্ন করা হয় না কেন?
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, আলী ইমাম মজুমদারের বিরুদ্ধে অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিই বলে আসছেন। সার্জিস যে বিষয়টি ফেসবুকে বলেছেন, তাতে দ্রুত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উচিত তার (আলী ইমাম মজুমদার) পদত্যাগের জন্য রাস্তায় নামা। ড. ইউনূসকে বিতর্কিত করতেই তার পাশে থেকে এক-এগারোর কুশীলবরা কাজ করছে— যা উচিত নয়। তাই দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা এবং এ পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেয়া উচিত।
গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফা বলেন, আমরা জানতে পেরেছি ৫৬ জন ডিসির মধ্যে ৪৯ জনই আলী ইমাম মজুমদারের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন নিয়োগের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগীরাই পদায়ন পাচ্ছেন এবং তার মাধ্যমে আবারও আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। তারা যে কাজ করছেন, তা বিপ্লববিরোধী।
এদিকে ডিসি নিয়োগ নিয়ে সচিবালয়ে হাতাহাতি পর্যন্ত হয়েছে। তারপরও এখনো উপদেষ্টা স্বপদে বহাল রয়েছেন। অন্যদিকে ভারতে ইলিশ রপ্তানি নিয়ে এক উপদেষ্টা বলেছেন, দেশের মানুষকে ইলিশ না দিয়ে ভারতে রপ্তানি করা হবে না। এরপর আরেক উপদেষ্টা বলেছেন, শুধু আবেগের বশে কথা বললে হবে না। ভারতের সঙ্গে আমাদের আমদানি-রপ্তানি করা ছাড়া চলবে না। তাই তিনি ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়ে দিলেন। এ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে একটি জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিকের নামে করা আইসিটি আইনের মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। অথচ এ আইনে করা মামলায় আরও অনেক সাংবাদিক নির্যাতিত হয়েছেন, জেল খেটেছেন; কিন্তু তাদের বিষয়ে কোনো খোঁজ-খবরও নিচ্ছে না সরকার। বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নামে করা মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হলো; কিন্তু অন্যদের মামলা নিয়ে চলছে নানান তালবাহানা।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে যারা গুম হয়েছেন, তাদের পরিবার এখনো নিদারুণ অসহায় অবস্থায় আছে। তাদের কেউ খোঁজ নিচ্ছে না। গুম হওয়া ওইসব মানুষের প্রকৃত অবস্থা কী— তা জানানোর কথা এ সরকার বলেছিল, কিন্তু প্রায় দুই মাস পার হলেও এখনো তারা তা করতে পারেননি। আয়নাঘরের প্রকৃত তথ্য এখনো দেশবাসীকে জানাতে পারেনি। তাই এ সরকারের সর্বত্রই এক ধরনের লেজে-গোবরে চলছে।
রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশনগুলোর মধ্যে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সরফরাজ চৌধুরী, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে প্রথমে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিককে দায়িত্ব দেয়া হলেও পরবর্তীতে তার স্থলে দায়িত্ব দেয়া হয় প্রফেসর ড. আলী রিয়াজকে। এই কমিশনগুলো গত ১ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করেছে এবং আগামী তিন মাসের মধ্যে তারা সংস্কারের প্রস্তাবনা প্রধান উপদেষ্টার কাছে পেশ করার কথা। সে হিসেবে এসব কমিশনের কার্যক্রমে কাউন্টডাউন চলছে।
তবে দেশের জনগণ এই সংস্কার কমিশন নিয়ে এখনো অন্ধকারে আছে। এসব কমিশনের প্রধান হিসেবে যাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, দু-একজন নিয়ে ইতোমধ্যে নানান আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে ড. আলী রিয়াজ, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক এবং সুজন সম্পাদক নিয়ে বিশেষ মহল থেকে নানা অনাস্থামূলক কথা আসছে।
আমার বাংলা (এবি) পার্টির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, আমি হতাশ হতে চাই না। বরেণ্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও আস্থা রাখতে চাই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ মাত্রই দুই মাস হলো। এটা সত্য যে, ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদের যাঁতাকলে থাকার কারণে ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশার পাহাড় জমে গেছে। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে, ১৬ বছরের বঞ্চনা ৭ সপ্তাহে মেটানো সম্ভব নয়। তারপর রয়েছে বিভিন্ন নাশকতা, পরিকল্পিত আনসার বিদ্রোহ, শ্রমিক অসন্তোষ, সংখ্যালঘু বিষয়ে ভারতের মতলববাজি রাজনীতি ও অপপ্রচার, ছাত্রলীগ-শ্রমিক লীগ দিয়ে গণপিটুনির আয়োজন, সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা, পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন উসকে দেয়ার ষড়যন্ত্র সরকারের চলমান কার্যক্রমকে শ্লথ করে দিয়েছে। দেশের অর্থনীতির অবস্থা বেহাল; বিগত সরকারের দুর্নীতি ও অপশাসন প্রত্যেকটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ভেঙে দিয়েছে— যা দিয়ে দেশ পরিচালনা ও সুশাসন নিশ্চিত করা অসম্ভব হয়ে গেছে। আমাদের ইতিহাসে এরকম নজিরবিহীন রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন আর কখনো হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই প্রয়োজনীর সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যেগুলোকে আমরা স্বাগত জানাই। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিগত আমলের যে কোনো সময়ের চেয়ে স্থিতিশীল। তাই এখনো হতাশ হবার মতো কোনো কারণ দেখছি না বরং রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও ছাত্রসমাজ প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়মিত আলাপ চালিয়ে যাওয়াটা জরুরি মনে করছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব যারা আমাদের কথায় রাস্তায় নেমে এসেছেন, জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন, তাদের ঘরে ঘরে গিয়ে পরিবারের কথাগুলো শোনা। এমন অনেকেই হারিয়ে গেছেন, যারা তার সংসারে একমাত্র আয়ের অবলম্বন ছিলেন। এমন পরিবারও পেয়েছি যিনি দুবছরের দুটি সন্তান রেখে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন। শুধু ঢাকা নয়, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে যে মানুষগুলো গুলিবিদ্ধ হয়ে শুয়ে আছেন, যাদের মধ্যে অনেকের হাত চলে গেছে, চোখ নষ্ট হয়ে গেছে, পা কেটে ফেলতে হয়েছে এবং যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবারের কর্মসংস্থান নিশ্চিতে একজনকে হলেও সরকারি চাকরি দিতে আমরা সরকারক আহ্বান জানাচ্ছি।